অ্যালজাইমার্সের প্রাথমিক লক্ষণ

0
21

বয়সের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। তাছাড়া, মনে রাখার ক্ষেত্রে আমাদের মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট একটা ধারণক্ষমতা বা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেশ কিছু মানসিক ও স্নায়বিক সমস্যা আমাদের শরীরে বাসা বাঁধে। এই সব মানসিক সমস্যার মধ্যে অ্যালজাইমার্স অন্যতম। আসুন এ বিষয়ে জেনে নেওয়া যাক কী বলছেন ভারতের মনরোগ বিশেষজ্ঞ ড. সুব্রত সাহা।
স্মৃতিভ্রংশ বা ভুলে যাওয়ার সমস্যা হলেই ডিমেনসিয়া বা অ্যালজাইমার্সের কথাই আমাদের মাথায় আসে। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই জেনে নেওয়া ভাল, ডিমেনসিয়া আর অ্যালজাইমার্সের মধ্যে ফারাক কোথায়! যে কোনও মানসিক, স্নায়বিক সমস্যা বা তার লক্ষণ ডিমেনসিয়ার অন্তর্গত। ডিমেনসিয়া আসলে একটি ছাতার মতো। চিকিত্‍সা বিজ্ঞানে এই এক ছাতার নিচে রয়ে অ্যালজাইমার্সের মতো মারাত্মক মানসিক রোগও। হান্টিংটন (এই রোগ মস্তিষ্কের স্নায়বিক কোষকে ক্রমশ নষ্ট করে দেয়। ফলে অকালেই একাধিক মানসিক এবং শারীরিক সমস্যা দ্রুত গতিতে বাড়তে থাকে। এ রোগের কোনও চিকিত্‍সা এখনও পর্যন্ত নেই), পারকিনসন্স বা ক্রুজফেল্ড জেকবের বিরল মানসিক, স্নায়বিক রোগও ডিমেনসিয়ার অন্তর্গত। এবার জেনে নেওয়া যাক অ্যালজাইমার্স সম্পর্কে।
অ্যালজাইমার্স মূলত এক ধরণের মানসিক রোগ। এই রোগের কারণে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে স্মৃতিভ্রংশ, চিন্তাভাবনা এবং আচরণে দ্রুত পরিবর্তন বা অসঙ্গতি লক্ষ্য করা যায়। খুব সামান্য বা সাধারণ কিছু লক্ষণ থেকে শুরু করে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা মস্তিষ্কের ক্ষতি করতে থাকে। এক সময়ে রোগীর দৈনন্দিন জীবনেও তা ব্যাঘাত ঘটাতে থাকে। অ্যালজাইমার্সের এমন একটি সূক্ষ্ম লক্ষণ আছে যা অন্যান্য সব লক্ষণের আগেই দেখা দেয়। এ সমস্যাটি আপনার বা আপনার প্রিয়জনের মধ্যে দেখা দিলে আগে ভাগেই সতর্ক হওয়া উচিত।
কী সেই লক্ষণ? চেনা রাস্তা খুঁজে না পাওয়া। আমরা রাস্তাঘাটে চলাচল করি কীভাবে? কোনও এলাকার কোনও বাড়ি, কোনও দোকান বা ক্লাব, কোনও রিক্সা স্ট্যান্ড ইত্যাদি চিনে রাখি। তার পর সেই চেনা জায়গার ডান দিক বা বাঁ দিকের রাস্তা ধরে গন্তব্যে পৌঁছানো। এভাবেই সাধারনত আমরা কোনও এলাকার একটা মানচিত্র তৈরি করি মাথার ভেতরে। কিন্তু হঠাত যদি এই ক্ষমতা যদি চলে যায়! এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় কীভাবে যাবেন তা মনে করতে না পারেন, বা আপনার এলাকার আশেপাশে কী কী এলাকা আছে তা যদি হঠাত করেই ভুলে যান, তাহলে তা অ্যালজাইমার্সের প্রাথমিক একটি লক্ষণ হতে পারে।
এছাড়া, ধরুন দীর্ঘদিন ধরে কোনও লাল রঙের ফাইলে বা ব্যাগে আপনার যাবতীয় জরুরি নথিপত্র রাখছেন। কিন্তু হঠাত্‍ একদিন দেখলেন কিছুতেই ওই ফাইল বা ব্যাগের রং মনে করতে পারছেন না। ফলে চতুর্দিক হাতড়ে বেড়াতে হচ্ছে প্রয়োজনীয় নথিপত্রের জন্য। এটা অ্যালজাইমার্সের প্রাথমিক একটি লক্ষণ হতে পারে। এছাড়া, চেনা মানুষের নাম ভুলে যাওয়া, বাড়ির দরজা-জানালার দিক ভুলে যাওয়া ইত্যাদি অ্যালজাইমার্সের প্রাথমিক একটি লক্ষণ হতে পারে। অ্যালজাইমার্সের এই লক্ষণটির বিষয়ে জানা যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরিতে অবস্থিত ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায়।
ড. সাহা জানান, অনেকেই এ সব কথা শুনে ভয় পেতে পারেন! তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য মনরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। অ্যালজাইমার্সের প্রাথমিক পর্যায়ে মনরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে চললে উপকার পাওয়া যায়।
এবার প্রশ্ন হল, কখন মনরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত?
বয়স ৪০ বছর পেরনোর পর ব্যক্তিত্বে কোনও অস্বাভাবিক পরিবর্তন লক্ষ্য করলে বা দৈনন্দিন কাজের মধ্যে অত্যন্ত সাধারণ বিষয়গুলো ভুলে যাওয়ার মতো মনরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
এছাড়া, বয়স ৬০ বছর পেরনোর পর নাম ভুলে যাওয়া, ঠিকানা ভুলে যাওয়া ইত্যাদি পরিবর্তন লক্ষ্য করলে মনরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
প্রাথমিক পর্যায়ে অ্যালজাইমার্সের চিকিত্‍সায় কী করবেন?
ড. সাহা জানান, অ্যালজাইমার্সে আক্রান্ত রোগীর প্রতিদিন খবরের কাগজ পড়ার অভ্যাস করতে হবে। খবরের কাগজের একেবারে উপরের অংশ অর্থাৎ, কাগজের দিন, তারিখ ইত্যাদি থেকে পড়া শুরু করতে হবে। এছাড়া, রঙিন ছবি, সংখ্যা বা ছোট ছোট নানা প্রশ্ন-উত্তরের বই পড়ার অভ্যাস করতে হবে। স্মৃতিশক্তিকে ধারালো করতে পারে, এমন ধাঁধা বা ছোট ছোট অঙ্ক অভ্যাস করতে হবে নিয়মিত। এর সঙ্গে সঙ্গে রোগীর পরিস্থিতি অনুযায়ী মনরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে ওষুধপত্র খেতে পারলে অ্যালজাইমার্সের অগ্রগতি ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব।
সূত্র: জি নিউজ

Previous articleইন্টারেস্টিং মানুষ হতে হলে কী করবেন
Next articleফেসবুকের চাইতেও ইনস্টাগ্রাম বেশি বিষণ্ণতা বাড়ায় !

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here