প্রতিদিনের চিঠি – আমাদের প্রতিদিনের জীবনে ঘটে নানা ঘটনা-দুর্ঘটনা। যা প্রভাব ফেলে আমাদের মনে। সেসবের সমাধান নিয়ে মনের খবর এর বিশেষ আয়োজন ‘প্রতিদিনের চিঠি’ বিভাগ। এই বিভাগে প্রতিদিনই আসছে নানা প্রশ্ন। আপনিও লিখতে পারেন আমাদেরকে এই ইমেইলে monerkhaboronline@gmail.com। সেজন্য ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।
প্রশ্ন- উত্তর পর্বে দেয়া উত্তরগুলো কেবলমাত্র প্রাথমিক দিকনির্দেশনা। সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের সাথে সরাসরি দেখা করে চিকিৎসা নিতে হবে।
প্রশ্ন- আমার নাম শামীম, আমার বয়স ২৬ বছর। আমি মানসিক সমস্যায় ভুগছি। আমার সমস্যাগুলো পড়ে যদি পরামর্শ দিতেন, তাহলে উপকার হতো।
একই জিনিস বারবার চিন্তা হতে পারে। যেমন— কোনো ডাক্তার দেখানোর পর সন্তুষ্ট হতে পারি না। মনে হতে থাকে, হয়তো ডাক্তার ভালো না। এভাবে দুই-তিনবার দেখিয়ে ফেলি। কেউ কিছু বললে, সেটি মনের ভেতর গেঁথে যায়, এমনকি ছোটখাটো বিষয়ও। কেউ অসুস্থ হলে, বিশেষ করে পরিবারের কেউ, তখন খুব বেশি টেনশনে থাকি। যতক্ষণ টেনশনে থাকি, মনে হয়, সে মারা যাবে কি না। নিজেকে অনেক মোটিভেট করি— এসব তো আমার হাতে নেই, তবুও টেনশন হতে থাকে। অতিরিক্ত টেনশন কীভাবে কমানো যায়? একা থাকতেই বেশি ভালো লাগে। পরিবারের সঙ্গে থাকলে, কেউ কিছু বললে, সেটা মনে লেগে যায়, আর টেনশন শুরু হয়। সবকিছু সিরিয়াসলি নিয়ে ফেলি। যতক্ষণ সেটার সমাধান না হয়, ততক্ষণ মাথায় লেগে থাকে। পরিবারের কেউ বা কাছের কেউ অসুস্থ হলে, সারাক্ষণ তাকে নিয়ে টেনশন হয় এবং তার পরিণতি নিয়ে দুশ্চিন্তা করি।
একটা উদাহরণ দিই— সম্প্রতি আমার পরিবারের একজন একটি বিড়াল নিয়ে এসেছে। সেই বিড়ালের প্রতি আমার প্রচণ্ড মায়া লেগে গেছে, যা আমার মানসিক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিড়াল ফ্লুতে আক্রান্ত হতে পারে— এই ভয় হয়। বিড়াল হিটে (প্রজনন ঋতুতে) এলে কী করব, সেটাও চিন্তা করি। কারণ, আমরা গরিব, বাবা নেই। নিউট্রাল (অস্ত্রোপচার) করানো বা ফ্লুর ইনজেকশন দেওয়া আমাদের জন্য ব্যয়বহুল। এই ভয়গুলো কীভাবে ম্যানেজ করতে পারি? নিজেকে দোষী মনে হয়— ওর জন্য কিছুই হয়তো করতে পারব না। যদি মরে যায়? যদি হিটে এলে বাইরে ছেড়ে দিতে হয়? শহরে ভাড়া বাসায় থাকি, কোথায় কবর দেব? হয়তো ফেলে দিতে হবে, শিয়ালে খেয়ে ফেলবে— এসব অপ্রয়োজনীয় চিন্তা মাথায় আসে। আমি জানি, এই সব চিন্তা আমার জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু এখন কী করব, বুঝতে পারছি না।
পরামর্শ – আপনার সমস্যাগুলোর জন্য আন্তরিকভাবে সহমর্মিতা জানাই। আপনি এখানে জানিয়েছেন যে আপনি বারবার ডাক্তার পরিবর্তন করেন। এই আচরণটাকে আমরা ডক্টর শপিং বলে থাকি। এখানে মানুষ সহজে স্যাটিস্ফাইড হয় না । বারবার ডাক্তার পরিবর্তন করতে থাকে। এটা আপনার জন্য ভীষণ অস্বাস্থ্যকর। যেটা আপনি পরিষ্কারভাবে বলেননি যে কেন আপনি বারবার ডাক্তার পরিবর্তন করেন। যদি এমন হয় যে আপনার ভেতরে একটা খুঁতখুঁত অথবা সন্দেহ কাজ করে যে আপনার ভেতরে একটা রোগ বাসা বেধে আছে কিন্তু কোন ডাক্তার ধরতে পারছে না। এরকম যদি ভীতি অথবা উদ্বেগ কাজ করে তাহলে এই কন্ডিশনটাকে আমরা বলে থাকি সোমাটাইজেশন ডিসঅর্ডার অথবা ক্ষেত্রবিশেষে এর আরো বিশেষ বিশেষ নাম আছে। আপনি আরো মেনশন করেছেন যে ছোটখাটো কথা আপনি নিজের উপরে নিয়ে নেন এবং আপনার মনে নেতিবাচক ভাবে কাজ করে এবং গেঁথে যায়। এটাও আপনার নেতিবাচক চিন্তা। সাধারণত বিষণ্ণতার রোগীদের এই ধরনের চিন্তা আসে ।শুধু তাই নয় অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার, অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার, ব্যক্তিত্বের সমস্যা সহ আরো কিছু রোগে এই ধরনের চিন্তা বেশ সচরাচর দেখা যায়। পরবর্তীতে যা বলেছেন আপনার অহেতুক দুশ্চিন্তা হয়। কারো ক্ষতি হবে কিনা এই ব্যাপারে। এবং এটা অনেক তীব্র। আপনার এই কথাগুলো দেখে মনে হচ্ছে আপনার ফ্রি ফ্লোটিং এ্যাংজাইটি বিদ্যমান। যা জেনারেলাইজড অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার এ দেখা যায়। আপনি বুঝতে পারছেন চিন্তাগুলো অপ্রয়োজনীয় ,অযৌক্তিক ,অমূলক ,এবং অতিরিক্ত নেতিবাচক চিন্তা যা আপনাকে প্রতিনিয়ত কষ্ট দিচ্ছে। এতগুলো রোগ আপনার হয়তো নেই। কিন্তু অবশ্যই আপনার মানসিক সমস্যা এগুলো সবই। যার বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা রয়েছে। আপনি অবশ্যই একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নিন। আপনার সমস্ত বিস্তারিত শুনে ,আপনাকে দেখে এবং সাইকোলজিক্যালি অ্যাসেসমেন্ট করে , অনেক সময় শারীরিক কোন কারনেও মানসিক সমস্যা হয় সেগুলো নির্ণয় করা প্রয়োজন, তারপর প্রপার ডায়াগনোসিসে এসে তারপরে আপনার চিকিৎসা নিতে হবে। আপনি চিকিৎসা না নিলে দিনে দিনে সমস্যাগুলো গুরুতর হতে থাকবে এবং আপনার বিভিন্ন দিকে ক্ষতিসাধন হবে। কাজেই আমি আপনাকে বলব আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিন এবং ডাক্তারদের উপরে ভরসা করুন এবং সুচিকিৎসা নিয়ে একটা সুস্থ জীবন যাপন করুন। আপনার জন্য শুভকামনা।
পরামর্শ দিয়েছেন-
ডা. রুবাইয়াৎ ফেরদৌস
সহকারি অধ্যাপক, মনোরোগ বিভাগ।
ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।
- এপোয়েন্টমেন্ট নিতে যোগাযোগ করুন-Prof. Dr. Shalahuddin Qusar Biplob
- চেম্বার – MK4C -মনের খবর ফর কেয়ার
মগবাজার রেইল গেইট।
নাভানা বারেক কারমেলা, লিফটের ৩,
(ইনসাফ কারাকাহ হাসপাতালের বিপরীতে)।
চেম্বার সিরিয়াল – ০১৮৫৮৭২৭০৩০
আরও দেখুন-