অটিজম মূলত জন্মগত রোগ এবং এটা নির্ণয় করার জন্য ল্যাবরেটরিভিত্তিক পরীক্ষা খুব কমই আছে। এ রোগের কারণও নিশ্চিত করে বলা কঠিন। তবে বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীরা এই রোগের পেছনে গবেষণা অব্যাহত রেখেছেন। এতে আবিষ্কৃত হচ্ছে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন তথ্য। সম্প্রতি অল্পবয়সে অটিজম নির্ণয়ের পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে বলে প্রকাশিত।
যুক্তরাজ্যের Warwick বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বাচ্চাদের রক্তরসে এক ধরনের আমিষের অস্তিত্ব পেয়েছেন বলে দাবি করছেন। যদি সেটা সম্ভব হয় তাহলে খুব অল্প বয়সেই এই রোগ ল্যাবরেটরির মাধ্যমে নির্ণয় করা সম্ভব হবে। বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন, রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষার মাধ্যমে অটিজম নির্ণয় করা যাবে। গবেষকরা মনে করছেন অটিজম নির্ণয়ের জন্য এটাই হবে সর্বপ্রম ল্যাবরেটরিভিত্তিক পরীক্ষা যা কিনা রোগটি আগে নির্ণয় ও দ্রুত চিকিৎসা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ইংল্যান্ডে প্রতি একশ জনে এক জনের অটিজম আছে বলে গবেষণায় দেখা গেছে। অটিজম মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের মধ্যে বেশি হয় বলেও গবেষণায় প্রকাশিত। বিজ্ঞানীরা বলছেন, অটিজম যাদের আছে তাদের রক্তরসে এক ধরনের আমিষের বৈষম্য রয়েছে। অটিজম রোগীদের রক্তে উচ্চমাত্রার oxidation marker dityrosine (DT) এবং কিছু sugar modified compounds পাওয়া যায় যাদেরকে advanced glycation end products (AGEs) বলে। পরীক্ষাটি যদিও অটিজম নির্ণয়ে সহযোগিতা করবে কিন্তু এটি রোগের কারণ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে পারবে না। যুক্তরাজ্যের Warwick বিশ্ববিদ্যালয় ও ইতালির Bologna বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের পারস্পরিক সহযোগিতায় ৩৮ জন অটিজমের রোগী ও ৩১ জন স্বাভাবিক বাচ্চা নিয়ে গবেষণা করেন যাদের বয়স ছিল ৫-১২ বছরের মধ্যে। সকল বাচ্চাদের থেকে প্রস্রাব ও রক্ত নেয়া হয় পরীক্ষার জন্য। গবেষকরা দুই দলের মধ্যে শারীরিক রাসায়নিক পার্থক্য পেয়েছেন। তারপর গবেষকরা Birmingham বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সম্মিলিত পর্যবেক্ষণে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের ভিত্তিতে ফলাফল হিসেবে এই উন্নত ও নতুন পরীক্ষাটি পাওয়া যায়।
গবেষকরা এই গবেষণাটি আরও বড় দলের বাচ্চাদের মধ্যে করে এর ফলাফল আরও নিখুঁতভাবে যাচাইয়ের সুপারিশ করেছেন। এছাড়া অটিজমের তীব্রতা ও এর ভবিষ্যৎ অনুমান করার পদ্ধতি হিসেবে সুপারিশ করেছেন।
Bologna বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের প্রধান ড. নাইলা রাব্বানি বলেন, ‘আমাদের এই আবিষ্কার দ্রুত রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার দিকে ধাবিত করবে।’ এছাড়াও গবেষকরা মনে করেন এই পরীক্ষাটি রোগের কারণ নির্ণয়ে ভূমিকা রাখবে। ভবিষ্যতে আরও নতুন নতুন পরীক্ষার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন তাঁরা।
তথ্যসূত্র: ইন্ডিপেন্ডেন্ট।