কোভিড ১৯ মহামারির মধ্যে এক বছর সময়ে ১ লাখের বেশি আমেরিকান অত্যাধিক মাত্রায় মাদক গ্রহণ করে মারা গিয়েছেন। এটিই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যেকোনো বছরে মাদকাসক্তিতে সবচেয়ে বেশী মারা যাবার সংখ্যা। তথ্যটি পাওয়া হিয়েছে দেশটির ‘সিডিসি-সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (রোগ নিরাময় ও প্রতিরোধ কেন্দ্রগুলো)’ থেকে। সেখান থেকে জানানো হয়েছে, ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের এপ্রিলে অতিমাত্রায় মাদক গ্রহণে মৃত্যু হয়েছে শতকরা ২৮.৫ জন মাদকসেবীর।
বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন, মহামারির মানসিক রোগগুলো বেড়ে যাওয়া ও সেগুলোর সংশ্লিষ্ট প্রভাবগুলোতে অতিমাত্রায় মাদকের ব্যবহার রোধ কার্যক্রম অকেজো হয়ে গিয়েছে। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শক্তিশালী ব্যাথানাশক ফেন্টানাইলের সরবরাহ বেড়ে যাওয়া।
দেশটিতে মাদকসেবীদের ডেথ সাটিফিকেটগুলোর তথ্য-উপাত্তগুলো বিশ্লেষণের মাধ্যমে করে সিডিসি অনুমান করেছে, যুক্তরাষ্ট্রে ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের এপ্রিলের মধ্যে ১ লাখ ৩শ ৬ জন মানুষ অতি মাদকাসক্তিতে মারা গিয়েছেন। অথচ ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে ২০২০ সালের মধ্যে এই কারণে সংস্থাটির কেন্দ্রীয় দফতরের হিসেবে, মোট ৭৮ হাজার ৫৬ জন মাদকাসক্ত মারা গিয়েছেন।
ক্যাথেরিন কিজ মাদকাসক্তিজনিত নির্যাতন প্রতিরোধ বিশেষজ্ঞ এবং কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মহামারি সংক্রান্ত বিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তিনি বিবিসিকে বলেছেন, ‘গেল কয়েক বছর ধরে যখন মাদকের অতিরিক্ত মাত্রায় ব্যবহারে মৃত্যু দ্রুতগতিতে বাড়ছে, তখন এই মহামারি সেই আগুনে ঢি ঢেলেছে।’
তিনি আরো বলেছেন, ‘মাদকাসক্তির পরিসংখ্যানে আগের চেয়ে অনেক বেশি মানুষ একা একা মাদক ব্যবহার করেছেন, এটিকে আমরা অতিব্যবহারের একটি কারণ হিসেবে জানি।’
তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, ‘সেবাগুলো গ্রহণের সুযোগ থাকায় মাদকের অতি ব্যবহারে মৃত্যু কমানো গিয়েছিল। এটিই হয়তো আমাদের মাদকের অতিরিক্ত গ্রহণ প্রতিরোধ, ক্ষতি কমানো, চিকিৎসা এবং সুস্থ্যতা কাযক্রমকে এগিয়ে দিয়েছে।’
মাদকের এভাবে মৃত্যু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুকের গুলিতে, গাড়ি বিষ্ফোরণে এবং ফ্ল ভাইরাসে মৃত্যুকেও অতিক্রম করেছে।
দেশটির অতিরিক্ত মাদক নিয়ে মৃত্যু সবচেয়ে বেড়েছে ভেরমন্টে। সেখানে এভাবে প্রাণহানি আগের বছরের চেয়ে ৭০ ভাগ বেড়েছে। এবার মারা গিয়েছেন ২শ ৯ জন। এরপর আছে ওয়েষ্ট ভার্জিনিয়া। সেখানে ৬২ ভাগ মাদকাসক্ত ও কেনটাকিতে ৫৫ ভাগ মাদকাসক্ত অতিরিক্ত মাদক নিয়ে মারা গিয়েছেন।
কিজ বলেছেন, ‘মানুষের তৈরি কৃত্রিম মাদক যেমন হেরোইন, মদ নির্দিষ্টভাবে বললে আফিম হলো মাদকের অতিরিক্ত ব্যবহারে মারা যাবার সবচেয়ে সাহায্যকারী। ব্যবহারকারীদের মুত্যু বাড়ানো অন্য মাদকগুলোর মধ্যে আছে-কোকেন, মেথামমেটাফিন এবং ফেন্টানাইল। মাদকের পরীক্ষায় এগুলোতে পজিটিভ হওয়ার হার বেড়ে চলেছে।’
তিনি বলেছেন, ‘মাদক নিয়ে মৃত্যু এমন এক ধরণের বিস্তার ঘটানো মহামারি-যেটির প্রধান কারণ আগে হেরোইন। তবে এখন যারা অন্য ধরণের মাদকগুলো ব্যবহার করছেন, তাদের দিকেও ভালোভাবে মনোযোগ দিয়েছে মৃত্যু। ফলে অতিরিক্ত মাদক ব্যবহারে মৃত্যু বেড়ে চলেছে। মাদকাসক্তদের বিপুল পরিমাণে মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তাই আমরা দেখেছি।’
নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সিরাকিউজ ইউনিভাসিটি’র ‘দি লার্নার সেন্টার ফর পাবলিক হেলথ প্রমোশন’র পরিচালক শ্যানন মন্নাত বলেছেন, ‘মাদকের অতিরিক্ত ব্যবহারে এই মৃত্যু একটি আমেরিকান ট্রাজেডি। তবে এটি প্রতিরোধযোগ্য।’
তবে তিনি জানিয়েছেন, ‘এমনকি যখন কোভিড-১৯ রোগটি নির্মূল হয়ে যাবে, তখনও মাদকের অতিরিক্ত ব্যবহার বাড়তে থাকবে।’
তিনি বলেছেন, ‘আমাদের এই সমস্যাটিকে কয়েকটি দিক থেকে আক্রমণ করতে হবে।’ তিনি সম্ভাব্য সমাধানগুলোর মধ্যে মাদকের সেবাকেন্দ্রগুলোকে আবার চালু করা, পরীক্ষাগারগুলোকে উন্মোচন করা, মাদক নি:শেষ কেন্দ্রগুলোতে ব্যবহারকারীদের তত্বাবধান, তাদের পুনরায় সুস্থ্য হবার ব্যবস্থা করে দেওয়া এবং স্বাস্থ্যযত্ন, আবার চালু করে দেওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন।
শ্যানন মন্নাত আরো বলেন, ‘এগুলোর বাইরে আমাদের স্বীকার করা প্রয়োজন যে, মাদক ব্যবহারের মানসিক ব্যাধিগুলো গত ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোর চেয়েও বড় উপসর্গ হয়ে দেখা দিয়েছে। চূড়ান্তভাবে আমাদের মাদকের অতিরিক্ত ব্যবহারের সমস্যাটির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা তখনই কেবল কার্যকর হবে, যখন দীর্ঘকালের সামাজিক ও অর্থনৈতিক নির্ধারকগুলো সমস্যার ভিত্তি হিসেবে সবাই জানাবেন।’
ওমর শাহেদ, ১৮ নভেম্বর, ২০২১; বিবিসি অবলম্বনে।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে