হার্টবিট বাড়লে আরো ভয় পাই, এই বুঝি আমার হার্টফেইলর হবে

0
118

আমি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২য় বর্ষে অধ্যয়নরত। আমি ক্লাস নাইন থেকে মানসিক সমস্যায় ভুগছি। আমি জামায়াতের সাথে নামাজ পড়তে পারি না, পরীক্ষার হলে পরীক্ষা দিতে পারি না, ট্রেনে-বাসে-লঞ্চেসহ অনেক যানবাহনে উঠতে পারি না। আবদ্ধ কোনো জায়গায় থাকতে পারি না, ভিড়ের মধ্যে যেতে পারি না। আমার মাথায় মৃত্যুভয় কাজ করে। আমার মনে হয় আমি নামাজে দাঁড়ালে এখান থেকে বেরোতে পারব না, তখন আমার হার্টবিট বাড়ে। হার্টবিট বাড়লে আমি আরো ভয় পাই, এই বুঝি আমার হার্টফেইলর হবে। প্রতিটা কাজেই এমন চিন্তা আসে। জীবনযাপন করা খুব কষ্টকর হয়ে পড়ছে। আমাকে একজন সাইকিয়াট্রিস্ট Setra 50 (১+০+০) খাওয়ার জন্য পরামর্শ দেন আর breathing exercise করার জন্য বলেন। ঔষধটা খাওয়াতে সারাদিন কিছুক্ষণ পরপর হামি আসে আর ঠোঁট শুকিয়ে যায়। মাঝেমধ্যে গলাও শুকিয়ে যায়। ঔষধ খাচ্ছি ৫ দিন ধরে। এইরকম পরিস্থিতিতে আমার কী করা উচিত?
অধ্যাপক মাহফুজ: তুমি সম্ভবত এগোরাফোবিয়া নামক এক ধরনের এ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডারে ভুগছো। এটি একধরনের এ্যাংজাইটির রোগ; যার কারণে রোগী মনে করে এর থেকে তার পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় নেই। যেমন : সিনেমা হল বা এমন কোনো মিটিং যেখান থেকে সহজে বের হওয়া যায় না- এরকম জায়গায় যদি কোনো শারীরিক লক্ষণ দেখা দেয়, যেমন : হার্টবিট বেড়ে যাওয়া, মাথা ঘুরানো, দম বন্ধ হয়ে আসা ইত্যাদি তখন সে কোনো হেল্প নিতে পারে না। এ ধরনের পরিস্থিতি যখন হয় তখন এটাকে আমরা ফোবিয়া বলি। ফোবিয়া হলো এক ধরনের অকারণ দুশ্চিন্তা এবং আতঙ্কিতভাব। উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তার যথার্থ, যুক্তিসম্মত কারণ থাকলে সেটা ভয়। কিন্তু ভিত্তিহীন কারণে দুশ্চিন্তার নামই ফোবিয়া। সেই ফোবিয়া থেকে কেউ যখন এমন কাজ করতে শুরু করে যেটা নিজের এবং অন্যের অসুবিধা, ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় তখন সেটা রোগ। এটা সাধারণত প্যানিক ডিজঅর্ডারের সাথে আবার কোনো সময় সোশ্যাল এ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডারের সাথে মিক্সডও থাকতে পারে। এখানে চিকিৎসা দু-রকম হতে পারে। যথা : ফার্মাকোথেরাপি আর সাইকোথেরাপি (সিবিটি বা কগেড়বটিভ বিহেভিয়ার থ্যারাপি)। যেহেতু তোমার ফোবিক সিচুয়েশন আছে তাই তোমাকে এক্সপোজার থেরাপি দিতে হবে। আর ফার্মাকো-থেরাপির জন্য বেঞ্জোডায়াজিপিন নামক ঔষধ খেতে হবে। যে-কোনো এন্টিডিপ্রেসেন্ট প্রমে অল্প মাত্রায় দিতে হয় এবং আস্তে আস্তে বাড়ানো হয়। এরজন্য অনেক সময় লাগতে পারে এবং সামান্য পার্শপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এতে ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নাই ; কারণ কিছুদিন পর আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যায়। যদি না হয় তবে তুমি নিকটস্থ কোনো মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মানসিক রোগ বিভাগে অথবা কোনো মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করে পরামর্শ গ্রহণ করো।
পরামর্শ দিয়েছেন
অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মাহফুজুল হক
প্রাক্তন অধ্যাপক, মানসিক রোগ বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও প্রাক্তন পরিচালক, পাবনা মানসিক হাসপাতাল।

Previous articleমনের আবেগের সঙ্গে ভাষার সঙ্গতি এবং অসঙ্গতি
Next articleপরিবারের মদ গ্রহণের ইতিহাস এবং সন্তানের ডোপামাইন নির্গমনের সম্পর্ক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here