সুখী হোন বিবাহিত জীবনে: দাম্পত্য সম্পর্কে সহিংসতা ও শান্তি

0
62

‘সুখী হোন বিবাহিত জীবনে’ এ শিরোনামে গত দুটি লেখায় স্বামী-স্ত্রীর বন্ধনকে সুদৃঢ় ও সুন্দর করবে এমন কিছু উপায় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আজকের লেখায় তুলে ধরব দাম্পত্য সম্পর্কে ভায়োলেন্স বা সহিংসতার প্রভাব ও পারিবারিক শান্তি বিষয়ে।

দাম্পত্য সম্পর্ককে সুন্দর করার এবং শান্তিপূর্ণ গৃহ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য পরিবারে সহিংসতা বা ভায়োলেন্সের কোনোই জায়গা নেই। পারিবারিক সহিংসতা গৃহ পরিবেশকে নষ্ট করে, পরস্পরের মধ্যেও সম্পর্কে ফাটল ধরায় এবং পরিবারের শৃঙ্খলা ও মূল্যবোধের অবক্ষয় হয়।

Violence বা সহিংস আচরণের অর্থ হলো হিংস্র আচরণ করা। যখন কেউ রেগে যায় তখনই সাধারণত সে সহিংস আচরণ করে। সহিংস আচরণ নানা রকম হতে পারে। যেমন- কাউকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা, মানসিকভাবে নির্যাতন করা অথবা হাতের কাছের জিনিশপত্র ছুড়ে মারা, ভেঙে ফেলে আশপাশের সবাইকে ভয় দেখানো। নানাভাবে পারিবারিক সহিংসতার প্রকাশ ঘটানো হয়। যেমন-
● শারীরিকভাবে নির্যাতন করা
শারীরিক নির্যাতনের প্রকাশ নানাভাবে হতে পারে। খালি হাতে চড় মারা, ঘুষি মারা, ধাক্কা দেওয়া, কিল মারা, লাথি মারা, চিমটি দেওয়া, চুল ধরে টানা ইত্যাদি। আবার কেউ কেউ কোনো কিছুকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেও শারীরিক নির্যাতন করতে পারে। যেমন- লাঠি দিয়ে মারা, কোনো ধারালো অস্ত্র ছুড়ে মারা, কাঁচের জিনিসপত্র ছুড়ে মারা, হাত পাখা দিয়ে মারা ইত্যাদি।

● মানসিকভাবে নির্যাতন করা
পরিবারে মানসিক নির্যাতন প্রায় অহরহ ঘটে থাকে। নানাভাবে মানসিক নির্যাতন করা হয়। যেমন- ধমক দেওয়া, চিৎকার করে কথা বলা, দোষারোপ করা, কথা না বলা, কথা বন্ধ করা, গালি দেওয়া, ছোট করে কথা বলা, সম্মান না দেওয়া ইত্যাদি। আবার স্ত্রীকে রেখে অন্য নারীর কাছে যাওয়া, যৌনকর্মীর কাছে যাওয়াও এক ধরনের মানসিক নির্যাতন। অনেকের কাছে মানসিক নির্যাতনকে সহিংসতা নাও মনে হতে পারে। কিন্তু এই নির্যাতনও এক ধরনের সহিংসতা।

● যৌন নির্যাতন করা
পরিবারের ভেতরেও নানাভাবে যৌন নির্যাতন হতে পারে। যেমন- স্ত্রীকে জোর করে যৌন মিলনে বাধ্য করা এবং সন্তানদের যৌন অঙ্গে হাত দেওয়া, উদ্দীপিত করা ইত্যাদি।

● অন্যান্যভাবে ত্রাস সৃষ্টি করা
সরাসরি কাউকে আঘাত না দিয়েও সহিংসতার প্রকাশ ঘটানো যায়। যেমন- খেতে বসে থালা বাসন ছুঁড়ে মারা, হাতের কাছের জিনিশপত্র ভেঙে ফেলা, জিনিসপত্র ছুঁড়ে মারা, চারপাশ এলোমেলো করে দেওয়া ইত্যাদি। এ ধরনের আচরণের ফলে যারা ধারে কাছে থাকেন, তারা ভয় পেয়ে যান। মূলত ব্যক্তি তার রাগ প্রকাশের জন্য এবং আশপাশে যারা থাকেন তাদের ভয় দেখানোর জন্যই এমন কাজ করেন। পারিবারিক সহিংসতার প্রভাব হয় অত্যন্ত নেতিবাচক।

পারিবারিক সহিংসতার ফলে প্রথমেই যা হয় তা হলো পরিবারের শান্তি নষ্ট হওয়া। শারীরিক, মানসিক, যৌন নির্যাতন এবং অন্যান্যভাবে ত্রাস তৈরি করা কোনোটাই পরিবারের শান্তি বজায় রাখার জন্য সহায়ক নয়। পারিবারিক অশান্তির জন্য পরিবারের সবাই কোনো না কোনোভাবে অশান্তিতে ভোগেন এবং তা পরস্পরের সম্পর্ককে নষ্ট করে। আমরা সবাই জানি যে, সন্তানকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার জন্য পরিবারে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকা দরকার। সহিংসতা পরিবারের এই শান্তির জন্য বড় বাঁধা।

সহিংসতার কারণে পরিবারের নিয়মকানুন ও শৃঙ্খলার ক্ষেত্রেও সমস্যা তৈরি হয়। পরিবারের সদস্যরা তাদের নিজেদের দায়িত্ব কর্তব্য অবহেলা করেন। ফলে পরিবারের শৃঙ্খলা নষ্ট হয়। কেউ কোনো বাঁধা নিষেধ মেনে চলতে চায় না এবং পরিবার হয়ে যায় এক ধরনের অনিয়মের জায়গা।

সুন্দরভাবে সংসার করার জন্য স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসার, বিশ্বাসের, শ্রদ্ধার, পরস্পরের প্রতি যত্নের এবং পরস্পরের প্রতি নির্ভরতার সম্পর্ক থাকা প্রয়োজন। বিয়ের পরপরই ধর্মীয়, সামাজিক ও আইনগত বন্ধন তৈরি হয়ে যায়। কিন্তু মানসিক বন্ধন গড়ে তুলতে সময় লাগে। পারিবারিক সহিংসতা মানসিক বন্ধনের জন্য হুমকিস্বরূপ। সহিংসতা একজনের প্রতি আর একজনের সূক্ষ্ম অনুভূতিগুলোকে নষ্ট করে। পরিণতিতে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে ভালোবাসা টিকে থাকে না। ফলে সংসার হয়ে ওঠে নিরানন্দ, আবেগহীন ও অনেক ক্ষেত্রেই যন্ত্রণার। সহিংসতার কারণে অনেক পরিবারে এমনই ভাঙন ধরে যে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে সংসার ভেঙে যায়।

পরিবারের শান্তি বজায় রাখার উপকারিতা অনেক-
প্রথমত, এরকম পরিবার সমাজের জন্য একটি দৃষ্টান্ত।
দ্বিতীয়ত, পারিবারিক শান্তি পরিবারের সদস্যদের সুখী করে ফলে তারা আনন্দে থাকে।
তৃতীয়ত, এমন পরিবার সন্তানদের সুন্দর করে গড়ে তুলতে পারে কারণ সন্তানদের সুস্থ বিকাশের জন্য শান্তিপূর্ণ গৃহ পরিবেশ একান্ত কাম্য।
চতুর্থত, শান্তিপূর্ণ পরিবারের সদস্যরা শারীরিক দিক থেকেও সুস্থ থাকে কারণ প্রত্যেকে নিজের প্রতি ও অন্যের প্রতি যত্নশীল থাকে।
পঞ্চমত, পরিবারের শান্তি থাকার কারণে পরিবারটি আরও স্থিতিশীল থাকে।
ষষ্ঠত, যেখানে শান্তি থাকে সেখানে পরিবারের সদস্যদের চাহিদার ব্যাপারও বিবেচনা করে অর্থাৎ অতিরিক্ত পাওয়ার ব্যাপারে জেদ করে না।
সপ্তমত, সন্তান সংখ্যা সীমিত থাকে অর্থাৎ পরিকল্পিত পরিবার হয়।

পরিবারে শান্তি বজায় রাখা একান্ত প্রয়োজন। তবে এমনি এমনি পরিবারে শান্তি বজায় থাকে না। পরিবারের শান্তি বজায় রাখার জন্য পরিবারের সব সদস্যকেই সচেষ্ট থাকতে হয়। যা যা করলে একটি পরিবারের শান্তি বজায় থাকে তা হলো-

চলবে…

এ সম্পর্কিত অন্য লেখার লিংক-

সুখী হোন বিবাহিত জীবনে


প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনেরখবর-এর সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য মনেরখবর কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না।

Previous articleমানসিক রোগের শারীরিক উপসর্গ : পর্ব-২
Next articleমানসিক রোগ নিয়ে ধারণা, ভুল ধারণা এবং বিবিধ -পর্ব ৩

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here