সুখী হোন বিবাহিত জীবনে: দাম্পত্য সম্পর্কে সহিংসতা ও শান্তি- পর্ব ৫

1
45

দাম্পত্য সম্পর্ককে সুন্দর এবং শান্তিপূর্ণ গৃহ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য পরিবারে সহিংসতার কোনো স্থান নেই। পারিবারিক সহিংসতা গৃহ পরিবেশকে নষ্ট করে এবং পরষ্পরের মধ্যে সম্পর্কের ফাটল ধরায় এমনকি পরিবারের শৃঙ্খলা ও মূল্যবোধেরও অবক্ষয় হয় এতে।

সহিংস আচরণের অর্থ হলো হিংস্র আচরণ করা। যখন কেউ রেগে যায় তখনই সাধারণত তার সহিংস আচরণের সুত্রপাত হয়। শারীরিক নির্যাতন, মানসিক নির্যাতন অথবা হাতের কাছের জিনিষপত্র ছুঁড়ে মারা/ভেঙ্গে ফেলা এর সব কিছুই সহিংসতার বহিঃপ্রকাশ।

শারীরিক নির্যাতন:
চড় মারা, ঘুষি মারা, ধাক্কা দেয়া, কিল, লাথি, খামচি অথবা চুল ধরে টান দেয়া ইত্যাদি নানা প্রকারে শারীরিক নির্যাতনের প্রকাশ ঘটতে পারে। অনেকে আবার কোনো কিছুকে অস্ত্র হিসেবেও ব্যবহার করতে পারে। যেমন- লাঠি দিয়ে মারা, দা, বটি ইত্যাদি দিয়ে মারা অথবা ছুঁড়ে মারা, কাঁচের জিনিষপত্র ছুঁড়ে মারা, হাত পাখা দিয়ে বাড়ি মারা ইত্যাদি ।

মানসিক নির্যাতন:
পরিবারে মানসিক নির্যাতন প্রায় অহরহই ঘটে থাকে। মানসিক নির্যাতনের মতো ঘটনা বিভিন্ন ভাবে ঘটে থাকে। ধমক দেয়া, চিৎকার চেঁচামেচি, একে অন্যকে দোষারূপ করা, কথা বন্ধ, গালিগালাজ, ছোট করে কথা বলা, সম্মান না দেয়া ইত্যাদি নানা প্রকারেই মানসিক নির্যাতন হয়। এছাড়াও স্ত্রীকে রেখে অন্য নারীতে গমন বা যৌনকর্মীর কাছে যাওয়াও মানসিক নির্যাতনের অন্তর্ভুক্ত। অনেকে মানসিক নির্যাতনকে সহিংসতার পর্যায়ে না ফেললেও মনে রাখতে হবে এই নির্যাতনও এক প্রকার সহিংসতা।

যৌন নির্যাতন:
পরিবারের ভেতরেও নানাভাবে যৌন নির্যানের ঘটনা ঘটে থাকে। স্ত্রীকে জোর করে যৌন মিলনে বাধ্য করা এবং সন্তানদের যৌন অঙ্গে হাত দেয়া অথবা উদ্দীপ্ত করা ইত্যাদি যৌন নির্যাতনের অংশ।

ত্রাস সৃষ্টি করা:
সরাসরি কাউকে আঘাত না দিয়েও সহিংসতার প্রকাশ ঘটানো যায়। যেমন- খেতে বসে থালা বাসন ছুঁড়ে মারা, হাতের কাছের জিনিষপত্র ভেঙ্গে ফেলা, জিনিষপত্র ছুঁড়ে মারা, চারপাশ এলোমেলো করে দেয়া ইত্যাদি। এ ধরনের আচরণের ফলে যারা ধারে কাছে থাকেন, তারা ভয় পেয়ে যান। মূলত ব্যক্তি তার রাগ প্রকাশের জন্য এবং আশেপাশে যারা থাকেন তাদের ভয় দেখানোর জন্যই এমন কাজ করেন।

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব পারিবারিক সহিংসতার প্রভাব হয় অত্যন্ত নেতিবাচক। যা আমাদের আজকের মূল আলোচ্য বিষয়

– পারিবারিক সহিংসতার ফলে প্রথমেই যা হয় তা হলো পরিবারের শান্তি নষ্ট হয়। শারীরিক, মানসিক, যৌন নির্যাতন এবং অন্যান্যভাবে ত্রাস তৈরি করা কোনটাই পরিবারের শান্তি বজায় রাখার জন্য সহায়ক নয়। পারিবারিক অশান্তির জন্য পরিবারের সবাই কোনো না কোনো ভাবে অশান্তিতে ভোগেন এবং তা পরষ্পরের সম্পর্ককে নষ্ট করে। আমরা সবাই জানি যে, সন্তানদের সুন্দর ভাবে গড়ে তোলার জন্য পরিবারে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকা আবশ্যক। সহিংসতা পরিবারের এই শান্তির জন্য বড় বাঁধা।

– সহিংসতার কারণে পরিবারের নিয়মকানুন ও শৃঙ্খলার ক্ষেত্রেও সমস্যা তৈরি হয়। পরিবারের সদস্যরা তাদের নিজেদের দায়িত্ব কর্তব্যে অবহেলা করেন। ফলে পরিবারের শৃঙ্খলা নষ্ট হয়। কেউ কোনো বাঁধা নিষেধ মেনে চলতে চায় না এবং পরিবার হয়ে উঠে এক ধরনের অনিয়মের স্থান।

সুন্দরভাবে সংসার করার জন্য স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসার, বিশ্বাসের, শ্রদ্ধার, পরষ্পরের প্রতি যত্নের এবং পরষ্পরের প্রতি নির্ভরতার সম্পর্ক থাকা প্রয়োজন। বিয়ের পরপরই ধর্মীয়, সামাজিক ও আইনগত বন্ধন তৈরি হয়ে যায়। কিন্তু মানসিক বন্ধন গড়ে তুলতে সময়ের প্রয়োজন। পরিবারিক সহিংসতা মানসিক বন্ধনের জন্য হুমকি স্বরূপ। সহিংসতা একজনের প্রতি আরেকজনের সূক্ষ্ম অনুভূতিগুলোকে নষ্ট করে দেয়। পরিণতিতে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে ভালোবাসা টিকে থাকে না। ফলে সংসার হয়ে উঠে নিরানন্দময়, আবেগহীন ও অনেক ক্ষেত্রেই যন্ত্রণার। সহিংসতার কারণে অনেক পরিবারে এমনই ভাঙ্গন ধরে যে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে সংসার ভেঙ্গে যায়।পরিবারের শান্তি বজায় রাখার উপকারিতা অনেক। প্রথমতঃ এরকম পরিবার সমাজের জন্য একটি দৃষ্টান্ত। দ্বিতীয়তঃ পারিবারিক শান্তি পরিবারের সদস্যদের সুখী করে, ফলে তারা আনন্দে থাকে। তৃতীয়তঃ এমন পরিবার সন্তানদের সুন্দর করে গড়ে তুলতে পারে কারণ সন্তানদের সুস্থ বিকাশের জন্য শান্তিপূর্ণ গৃহ পরিবেশ একান্ত কাম্য। চতুর্থতঃ শান্তিপূর্ণ পরিবারের সদস্যরা শারীরিক দিক থেকেও সুস্থ থাকে কারণ প্রত্যেকে নিজের প্রতি ও অন্যের প্রতি যত্নশীল থাকে। পঞ্চমতঃ পরিবারের শান্তি থাকার কারণে পরিবারটি আরও স্থিতিশীল থাকে। ষষ্ঠতঃ যেখানে শান্তি থাকে সেখানে পরিবারের সদস্যদের চাহিদার ব্যাপারটাও বিবেচনার মধ্যে থাকে। অর্থাৎ অতিরিক্ত পাওয়ার ব্যাপারে কেউ জেদ করে না। সপ্তমতঃ সন্তানদের সংখ্যা সীমিত থাকে অথবা পরিকল্পিত পরিবার হয়।


প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না কর্তৃপক্ষ।

Previous articleবিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস ও মানসিক স্বাস্থ্যে মর্যাদাবোধ
Next articleমানসিক রোগ নিয়ে ধারণা, ভুল ধারণা এবং বিবিধ-পর্ব ৭

1 COMMENT

  1. Manusti jokhon sarthopor- Sundor post, tobe aro ektu guchiye lekha somvob hole valo hoto. Tate pathoker pokkhe information ta aro spostp hote parto. Aro lekhar prottasa soho dhonnobad janai.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here