দেড় মাস বয়সী এক শিশু বা বাচ্চার বাবা মা সেদিন আমাকে এটি জিজ্ঞেস করছিলেন। তাদের এটি জানতে চাওয়ার মূল কারণ ছিলো যে, শিশুর কতটা বয়স হলে বাবা-মার ঠিক কতটা সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ শিশুর সামনে কিছু করার ক্ষেত্রে। সেটা হতে পারে তর্কবিতর্ক, হতে পারে রাগ, হতে পারে কান্না বা অন্যান্য অনুভূতি।
এ নিয়ে একটি গবেষণা হয়েছিল। সেখানে দেখা গিয়েছিলো যে এক মাস বয়সী বাচ্চাদের মায়েদের ভিতর প্রায় অর্ধেকের বেশি মায়েরা বলেছিলেন তাদের এক মাসের বাচ্চা অন্তত পক্ষে পাঁচটির বেশি আবেগ দেখাতে পারে।
অনেকে মনে করে থাকেন যে শুধু বাচ্চাদের নিয়ে অতিরিক্ত গর্বিত মায়েরাই এমনটা মনে করেন, আসলে সেটি সঠিক নয়। এই বিতর্কের অবসান করতেই আরেকটি গবেষণা করা হয়।
সাইকোলজিস্ট ক্যারোল ইজার্ড এবং তার কলিগরা একটা গবেষণা করেন শিশুদের আবেগের বহিঃপ্রকাশ এর উপরে। এখানে এক বছর পর্যন্ত বয়সী বাচ্চাদের নেয়া হয়েছিলো। তারা বাচ্চাদের বিভিন্ন ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে নিয়ে যান। যেমন- বাচ্চাদের কাছে থেকে পছন্দের খেলনা সরিয়ে নেন, মায়ের থেকে আলাদা রাখার কিছুক্ষন পর আবার মায়ের কাছে নিয়ে যান এমন আরও কিছু পরিস্থিতি।
এরপর গবেষকগণ এমন কিছু মানুষ সিলেক্ট করেন, যারা এই ঘটনা গুলো জানতেন না। তাদেরকে বাচ্চাদের চেহারার এক্সপ্রেশন দেখে বলতে বলা হয় যে, বাচ্চাটি কোন আবেগের বহিঃপ্রকাশ করছে।
এই পরীক্ষা থেকে এটা স্পষ্ট হয় যে, একজন এডাল্ট খুব সহজে বাচ্চার পজিটিভ অনুভূতি গুলো (মানে খুশি, ভালো লাগা, আনন্দ ইত্যাদি) ধরতে পারে কিন্তু অপজিট অনুভূতি গুলো (যেমন রাগ, ভয়, কষ্ট ইত্যাদি) তারা আলাদা করতে পারেন না। তবে তারা এটি বুঝতে পারেন যে এটা নেগাটিভ অনুভূতি।
একটি শিশু জন্মের পর থেকেই প্রথম দুই বছর পর্যন্ত ভিন্ন ভিন্ন অনুভূতির প্রকাশ করে ভিন্ন ভিন্ন ধাপে। জন্মের ঠিক পর পরই সে দেখায় অগ্রহ, অসস্তি, খারাপ লাগা, সন্তুষ্টি।
দ্বিতীয় মাসের শেষের দিকে তারা সামাজিক হাসি দিয়ে থাকে। সেই সাথে কেয়ার গিভারের সাথে তার অনুভূতির আদানপ্রদান করে থাকে নানান ইঙ্গিতের মাধ্যমে। দুই থেকে সাত মাসের মাঝে তারা দেখায় রাগ, কষ্ট, আনন্দ, বিস্ময়, ভয়। পরবর্তী এক থেকে দুই বছরের মাঝে শিশুরা প্রকাশ করে বিব্রতবোধ, হিংসা, গর্ববোধ, লজ্জা, অনুতপ্ত বোধ ইত্যাদি।
এই প্রতিটি অবেগের বহিঃপ্রকাশ সব সুস্থ শিশুদের মাঝে প্রায় একই সময়ে দেখা যায়। আপনার শিশুর বয়স অনুযায়ী আবেগের বহিঃপ্রকাশ যদি সঠিক সময়ে না হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞদের মতামত নেয়া খুবই জরুরি।
ডা. ফাতেমা তুজ জোহরা জ্যোতি
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে