শিল্পীদের সামাজিক দায়বদ্ধতা অনেক বেশি: রওনক হাসান

[int-intro]এই সময়ের একজন ব্যস্ততম অভিনয়শিল্পী তিনি। একই সাথে একজন নাট্যকার ও পরিচালক। অভিনয়ের জন্য পেয়েছেন বিপুল দর্শকপ্রিয়তা, পুরষ্কার ও সম্মাননা। ভালো থাকেন পরিবার ও কাজের সান্নিধ্যে। স্বপ্ন দেখেন মনের মতো কাজ করার। তিনি রওনক হাসান। মনেরখবর পাঠকের মুখোমুখি হবে এবার তিনি জানাচ্ছেন তাঁর মনের কথা, ভালোলাগার কথা, স্বপ্নের কথা, স্মৃতির কথা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মুহাম্মদ মামুন। [/int-intro]
[int-qs]কেমন আছেন?[/int-qs]
[int-ans name=”রওনক হাসান”]ভালো আছি। [/int-ans]
[int-qs]ভালো থাকতে কোন জিনিষটা সবচাইতে জরুরি?[/int-qs]
[int-ans name=”রওনক হাসান”]সবসময় ভাবি ভালো থাকবো।[/int-ans]
[int-qs]তারপরও বিশেষ কিছু?[/int-qs]
[int-ans name=”রওনক হাসান”]আমার পরিবার ও আমার কাজ। মা, বাবা, ভাই, বোন, স্ত্রী, সন্তান এবং অভিনয় এদের মাঝেই আমার ভালো থাকা। [/int-ans]
[int-quote]যখনই একজন মানুষ কিছু মানুষের আদর্শের জায়গায় চলে যায় তখনই তাদের একটা দায়িত্ব চলে আসে। অর্থাৎ তাঁর জীবনযাপন, চলাফেরা এর সবকিছুর জায়গা থেকেই একটা রুচিশীল বা মননশীলতার ছাপটা থাকা জরুরি বলে আমার বিশ্বাস। যেমন, থিয়েটারে আমাদের শেখানো হতো একজন ভালো অভিনেতা হতে হলে প্রথমে একজন ভালো মানুষ হওয়া জরুরি।[/int-quote]
[int-qs]পেশাগত ব্যস্ততা কি পারিবারিক জীবনে প্রভাব ফেলে?[/int-qs]
[int-ans name=”রওনক হাসান”]আমরা যে পেশায় আছি অর্থাৎ অভিনয়ে সেখানে দেখা যায় সকাল সাতটা আটটার দিকে বের হয়ে যেতে হয় আবার ফিরতে ফিরতে সেই অনেক রাত। বেশিরভাগ সময় দেখা যায় ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরে স্ত্রী সন্তানের সাথে একটু কথা বলার সময় হয়ে উঠেনা। একজন অভিনেতা হিসেবে আমি বলতে পারি আমার পরিবারকে আমি বঞ্চিত করি। তাই যখনই একটু অবসর পাই তখনই চেষ্টা করি সময়টুকু স্ত্রী সন্তান বা পরিবারের সান্নিধ্যে থাকতে। এবং আমি মনে করি এটা শুধু আমার নয় সকলেরই উচিত। [/int-ans]
[int-qs]কিন্তু এ সময়টাতে পারিবারিক বন্ধনগুলো খুব বেশি আলগা হয়ে যাচ্ছেনা? বিশেষ করে একান্নবর্তী পরিবার ভেঙ্গে যাওয়াটা বা বিবাহ বিচ্ছেদের হারটা?[/int-qs]
[int-ans name=”রওনক হাসান”] একান্নবর্তী পরিবারের ব্যাপার যেটা বললেন, বিভিন্ন কারণেই একান্নবর্তী থাকা কারো পক্ষে সম্ভব নাও হতে পারে। অবস্থার প্রেক্ষিতে বা কাজের কারণে মানুষ বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে যায়। আর ডিভোর্সের ব্যাপারে বলবো যে হয়তো আমাদের মধ্যে পারষ্পরিক শ্রদ্ধার জায়গাটা কিছুটা কমে আসছে। অনেক সময় আমরা আবেগতাড়িত হয়ে দ্রুত বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি, যার ফলে একে অপরকে জানা বোঝা বা শ্রদ্ধার জায়গাটা তৈরি হয় না। আবার কখনও হয়তো আমরা একে অপরকে অনেক বেশি স্বপ্ন দেখিয়ে ফেলি যা পরবর্তী জীবনে বাস্তবায়িত করা সম্ভব হয়ে উঠে না। তাছাড়া ভুল বোঝাবুঝির ব্যাপার তো আছেই। আমরা চাই না ডিভোর্স হোক, তবে যখন দেখা যায় যে একসাথে থাকার চাইতে না থাকলেই তুলনামূলক ভালো থাকা যাচ্ছে তখন তারা আলাদা থাকতেই পারে। তাছাড়া এই সময়ে সবাই স্বাধীনচেতা, নারীরাও স্বাবলম্বী। তাছাড়া জীবনের যেকোন সময়ে এসে মতের অমিল হতেই পারে। সেক্ষেত্রেও ডিভোর্সকে আমরা সাধুবাদ জানাই না বা জানাতে চাই না। তারপরেও কিছু দিক থেকে দেখলে পুরোপুরি অগ্রহনযোগ্যও বলা যায় না। [/int-ans]
[int-qs]কিন্তু এই ভাঙনের ফলে সেই পরিবারের সন্তানেরা কি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না?[/int-qs]
[int-ans name=”রওনক হাসান”]এটা ঠিক। আমার মতে একে অপরকে পরিপূর্ণভাবে জানার পরই সন্তান নেয়ার সিদ্ধান্তটা নেয়া উচিত। বিয়ে করে সাথে সাথে বাচ্চা নেয়াটা বোধহয় ঠিক না। ডিভোর্সের কারণে বাচ্চারা যেমন মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তেমনি সামাজিকভাবেও বিভিন্ন সমস্যা মোকাবেলা করে। তাই সন্তান নেয়ার আগে আমাদের অনেক ভাবনার অবকাশ রয়েছে। আর যেহেতু আমাদের সকলের উদ্দেশ্য থাকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুখের দিকটা দেখা তাই সন্তান নেয়ার পর সন্তান পূর্ণ বয়ষ্ক না হওয়া পর্যন্ত নিজের একটু কষ্ট স্বীকার করে হলেও দু’জন একসাথে থাকা। কারণ একটি একই সাথে মা বাবা দুজনেরই সমানভাবে প্রয়োজন। [/int-ans]
[int-qs]অর্থাৎ বৃহৎ স্বার্থের দিকটা বিবেচনা করে নিজেকে সংযত রাখা?[/int-qs]
[int-ans name=”রওনক হাসান”] কিছুটা। অনেক সময় অনেক কিছু করতে আমাদের মন চাইবে। কিন্তু সবকিছু আমরা করবো কিনা সেটা আমাদের ভাবতে হবে। একই সাথে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার ব্যাপারটি রাখতে হবে। [/int-ans]
[int-qs]অনেকে অভিযোগ করে শোবিজ তারকাদের মধ্যে ডিভোর্সের মাত্রাটা অনেক বেশি। এক্ষেত্রে আপনার মতামত কি?[/int-qs]
[int-ans name=”রওনক হাসান”] এই কথাটার সাথে আমি পুরোপুরি একমত নই। এ সমস্যাটি আমাদের সমাজে বৃদ্ধি পাচ্ছে আর শোবিজ শিল্পে যারা কাজ করে তারাও সমাজেরই একটা অংশ। আপনি শুধু ঢাকা শহরের পরিসংখ্যান নিন আর দেখুন সে অনুপাতে শোবিজে কতগুলো ডিভোর্স হয়েছে। তাহলে সত্যটা পরিষ্কার হবে। তবে হ্যাঁ, যেহেতু মানুষের দৃষ্টি থাকে শোবিজের উপর সেহেতু এখানকার ঘটনাগুলো মানুষের সামনে চলে আসে। যার কারণে মনে হতে পারে যে শোবিজে মনেহয় এটি অনেক বেশি ঘটছে। [/int-ans]
[int-qs]আর এ দৃষ্টি থাকে বলেই তো মানুষ তাদের অনুসরণ করে। এক্ষেত্রে একজন সাধারণ মানুষের চাইতে সামাজিক প্রথার প্রতি শিল্পীদের দায় অনেক বেশি নয় কি?[/int-qs]
[int-ans name=”রওনক হাসান”]শুধু অভিনেতা অভিনেত্রী বা শিল্পীদের বিষয় নই। যখনই একজন মানুষ কিছু মানুষের আদর্শের জায়গায় চলে যায় তখনই তাদের একটা দায়িত্ব চলে আসে। অর্থাৎ তাঁর জীবনযাপন, চলাফেরা এর সবকিছুর জায়গা থেকেই একটা রুচিশীল বা মননশীলতার ছাপটা থাকা জরুরি বলে আমার বিশ্বাস। যেমন, থিয়েটারে আমাদের শেখানো হতো একজন ভালো অভিনেতা হতে হলে প্রথমে একজন ভালো মানুষ হওয়া জরুরি।  [/int-ans]
[int-qs]অনেকে বলে যে একজন শিল্পীর কাজের জায়গা এবং ব্যক্তি জীবন এ দুটো আলাদা করে দেখা উচিত?[/int-qs]
[int-ans name=”রওনক হাসান”]আমি তা মনে করি না। একজন শিল্পীর কাজ শুধু অভিনয় করা, গান গাওয়া ইত্যাদি নয়। যেহেতু একজন শিল্পীকে সমাজের অনেক মানুষ অনুসরণ করে সেহেতু শিল্পের বাইরেও তাঁর অনেক সামাজিক দায়িত্ব রয়েছে, রয়েছে দায়বদ্ধতা। [/int-ans]
[int-qs]বাংলাদেশের অভিনয়শিল্পকে কোন অবস্থায় দেখতে চান?[/int-qs]
[int-ans name=”রওনক হাসান”]বাংলাদেশে অভিনয় পেশাটা সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত নয়। এখনও আমাদের পরিচয় বিনোদনকর্মী হিসেবে। আমরা চাই অভিনয়শিল্পীরা তাদের পেশার স্বীকৃতিটা পাক।  [/int-ans]
[int-qs]আমার জানামতে এসব দাবী নিয়ে একটা আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী আপনি। সে আন্দোলনের প্রাপ্তি কতটুকু ?[/int-qs]
[int-ans name=”রওনক হাসান”] একটা দীর্ঘ সময়ের অনিয়মে এত সহজে শেষ হবে এমনটা আশা করা যায় না। আমরা একটা আন্দোলন শুরু করেছি। সরকার আমাদের একটা কমিটি করে দিয়েছে, সেই কমিটির মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রস্তাবনা দিয়েছি। সেগুলো যাচাই বাছাই হচ্ছে। আমরা আশা করছি আস্তে আস্তে এটা একটা কাঠামোতে দাঁড়াবে।  [/int-ans]
[int-img name=””]https://monerkhabor.com/wp-content/uploads/2017/04/rawnak-hasan-1.jpg[/int-img]
[int-qs]থিয়েটারে আসলেন কীভাবে?[/int-qs]
[int-ans name=”রওনক হাসান”]এইতো হেঁটে হেঁটে চলে আসলাম।[/int-ans]
[int-qs]সে হাঁটার পথটা থিয়েটারে এসে ঠেকলো কীভাবে?[/int-qs]
[int-ans name=”রওনক হাসান”]একবার হাঁটতে হাঁটতে বেইলি রোডে চলে এসেছিলাম। সেখানে এক নাটক দেখে কাঁদতে কাঁদতে বের হয়েছিলাম। তারপর মনে হয়েছিলো এটাই আমার গন্তব্য। [/int-ans]
[int-qs]কোন নাটকটি?[/int-qs]
[int-ans name=”রওনক হাসান”]থিয়েটার আর্টের ‘কোর্ট মার্শাল’।[/int-ans]
[int-qs]অভিনয়শিল্পী না হলে কি হতেন?[/int-qs]
[int-ans name=”রওনক হাসান”]অনেক কিছুই হওয়ার ইচ্ছে ছিলো। এক সময় ইচ্ছে ছিলো আর্মি অফিসার হওয়ার, আবার নাবিকও হতে চাইতাম, বই বিক্রেতা হওয়ার ইচ্ছেও হতো কখনও কখনও, ইচ্ছে ছিলো একটি কৃষি খামার করার, গিটারিস্ট হওয়ার ইচ্ছে ছিলো ইত্যাদি ইত্যাদি। [/int-ans]
[int-qs]স্বপ্ন দেখেন?[/int-qs]
[int-ans name=”রওনক হাসান”]ঘুমে জাগরণে দুটোই।[/int-ans]
[int-qs]ঘুমের স্বপ্নগুলো কেমন?[/int-qs]
[int-ans name=”রওনক হাসান”]স্বপ্নে প্রায়ই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলি। দেখি আমার মাথাটা দূরে পড়ে আছে, সেটি তুলে আমার ঘাড়ে লাগিয়ে আবার যুদ্ধ করা শুরু করি। [/int-ans]
[int-qs]আর জাগরণের স্বপ্ন?[/int-qs]
[int-ans name=”রওনক হাসান”]আমার মনের মতো কাজ করতে চাই।[/int-ans]
[int-qs]স্মৃতি কাতরতা আছে?[/int-qs]
[int-ans name=”রওনক হাসান”]তা তো আছেই।[/int-ans]
[int-qs]ছোটবেলার একটি মজার স্মৃতি বলবেন কি?[/int-qs]
[int-ans name=”রওনক হাসান”]আমি তখন চট্টগ্রামে থাকতাম। শহরের পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুরে বেড়াতাম আর টারজান টারজান খেলতাম। একবার মা’র মাটির ব্যাংক চুরি করে সেটি পাহাড়ে নিয়ে পুঁতে রেখেছিলাম। তারপর বন্ধুদের নিয়ে বলেছিলাম আমি গুপ্তধন পেয়েছি। [/int-ans]
[int-qs]তাহলে আমরা বলতে পারি অভিনয়শিল্পী না হলে আপনি একজন ট্রেজার হান্টারও হতে পারতেন?[/int-qs]
[int-ans name=”রওনক হাসান”](হাসি) তা বলতে পারেন। ছোটবেলাতে আমি বেশ অনেকটা অ্যাডভেঞ্চারাস ছিলাম। [/int-ans]
[int-qs]সবশেষে পাঠকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন?[/int-qs]
[int-ans name=”রওনক হাসান”]পাঠকদের উদ্দেশ্যে বলবো আপনারা ভালো কাজের সাথে থাকুন, ভালো কাজকে উৎসাহিত ও সমর্থন করুন। [/int-ans]
[int-qs]অনেক ধন্যবাদ আপনাকে মনেরখবর পাঠকদের সময় দেয়ার জন্য?[/int-qs]
[int-ans name=”রওনক হাসান”]আপনাকেও ধন্যবাদ। [/int-ans]
 

Previous articleমাইন্ড আর্ট পোষ্টার প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হলেন মুসান্না নবী চৌধুরী
Next articleফুটবল প্রকল্প মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা প্রতিকারে সাহায্য করছে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here