মানসিক রোগ নিয়ে ধারণা, ভুল ধারণা এবং বিবিধঃ (পর্ব – ৯)

“ভাইয়া, আপনি সাইকিয়াট্রিস্ট!” উৎফুল্ল মুখে জানতে চাইল সদ্যপরিচিত একজন ছোটভাই।
-না, এখনও হইনি, চেষ্টা করছি হবার।
-সে কোনো ব্যাপার না, আজ না হয় কাল তো হয়েই যাবেন।
-ধন্যবাদ, তোমার শুভকামনার জন্য। কিন্তু, তুমি এমন উৎফুল্ল কেন আমার কথা শুনে।
-আর বইলেন না ভাই, কত দিন ধরে খুঁজছি একজন সাইকিয়াট্রিস্টকে, কিছু ব্যাপার আলাপ করতাম।
-তাই? তো কি ব্যাপার, কোনো সমস্যা?
-সমস্যা তো একটা আছেই, তবে রোগ-টোগ না।
-তাহলে কি?
-ভাইয়া, আমি আসলে সম্মোহনবিদ্যা (Hypnosis) শিখতে চাই। খুব আগ্রহ আমার এ বিষয়ে।
-সে তো বুঝলাম। কিন্তু সাইকিয়াট্রিস্ট কেন?
-কি যে বলেন ভাই, আপনারা তো এই বিষয়ে ওস্তাদ লোক। কিন্তু, চেনা জানা লোক না হলে কি আর এসব বলা যায়। তাই, আপনার মতো একজনকে পেয়ে ভাল লাগছে।
-কিন্তু আমি তো ভাই এইসব জানিনা।
-বুঝছি, এখনো পুরোপুরি শিখেন নি। কিন্তু, যা শিখেছেন ঐ নিয়েই না হয় একটু আলাপ করা যাবে, ঐটুকুই না হয় শিখাবেন।
-সমস্যা হচ্ছে, আমরা তো এখন সম্মোহনবিদ্যা সে অর্থে খুব একটা ব্যবহার করি না, তাই শেখাও হয় না।
-তাহলে কারা ব্যবহার করেন?
-সম্মোহন মূলতঃ একধরনের সাইকোথেরাপি হিসেবেই ব্যবহার হয়ে থাকে। তাই, সাইকোথেরাপির সাথে যারা জড়িত তারাই এর ব্যবহার করে থাকেন। তবে, এর ব্যবহার বর্তমানে সীমিত, বিশেষত আমাদের দেশে।
-সম্মোহন দিয়ে সাইকোথেরাপি?
-হ্যাঁ সাইকোথেরাপি। কিন্তু তোমার এত আগ্রহের কারণ কি?
-আমার কাছে ব্যাপারটা খুব মজার মনে হয়। হাতের একটা তুড়ি দিলাম আর একটা মানুষ সম্মোহিত হয়ে গেল, অথবা একটা মানুষকে সবার সামনে সম্মোহিত করে এমন এমন কান্ড করালাম যা দেখে অন্যরা হাসতে হাসতে খুন। বলতে পারেন, মজা করার জন্যই এত আগ্রহ।
-হা হা হা। বুঝলাম। তবে ভাই, একটা ঘাপলা যে আছে।
-কি ঘাপলা?
-সম্মোহন যা তুমি বললে, সেটা প্রায় প্রতি ক্ষেত্রেই অনেকটাই ধান্দাবাজি, অথবা অবাস্তব।
-মানে?
-স্টেজ এ যারা করে তারা বিভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করে – যেমন, আগে থেকেই ঠিক করে রাখা যে কাকে ডাকা হবে – ম্যাজিক শোর মত। আবার কিছু মানুষ নিজ থেকেই অভিনয় করে সে সম্মোহিত হয়েছে এবং এইভাবে একটু আলোচনায় আসতে চায়। এরকম আরও বেশ কিছু ব্যাপার স্যাপার আছে – বিস্তারিত ইন্টারনেট ঘাঁটলেই পাওয়া যাবে।
-তাহলে, সাইকোথেরাপিতে এর ব্যবহার কেন?
-না। সাইকোথেরাপিতে সম্মোহন একটি সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে করা হয়। এটা কিভাবে কাজ করে তার সবটুকু জানা না গেলেও কিভাবে সম্মোহিত করতে হবে তার একটা সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে। এখানে রহস্যের কোনো ব্যাপার নেই, অলৌকিকতার কোনো গন্ধ নেই।
-এটা কি আদৌ কাজ করে?
-আগেই বলেছি, এটা কিভাবে কাজ করে তা সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা পাওয়া যায় নি। তবে, এটা যে কাজ করে তার প্রমাণ বেশ কিছু গবেষণাতে পাওয়া গেছে। যে কারণে, সম্মোহনকে পুনরায় সাইকোথেরাপির অংশ করা হয়েছে।
-পুনরায় মানে?
-মাঝখানে অতিরিক্ত রহস্যময়তা, বিভিন্ন অপব্যবহার আর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার অভাব সহ বিভিন্ন কারণে সম্মোহন অনেকটা নিষিদ্ধ ছিল। তখন অবশ্য এটা Mesmerism হিসেবেই পরিচিত ছিল।
-অনেক কিছুই জানা ছিল না।
-তাহলে, আরেকটা ব্যাপার জানিয়ে রাখি। সম্মোহিত করা যায়না, সম্মোহিত হতে হয়।
-মানে?
-একজন ব্যক্তি যদি নিজে না চান তাহলে সাইকোথেরাপিস্ট তাকে সম্মোহিত করতে পারেন না। এটা সম্মোহনের মাধ্যমে সাইকোথেরাপির একটা অসুবিধা।
-আচ্ছা, বেশ মজা তো। আর আমি  এটাকে কত রহস্যময় হিসেবেই জানতাম।
-একটা জিনিষ ততক্ষণই রহস্যময় যতক্ষণ এটা জ্ঞানের আলোর বাইরে থাকে। অতএব, প্রকৃত জ্ঞানের বিকল্প নেই।


প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না কর্তৃপক্ষ।

Previous articleইইউ নিয়ে গণভোটের কারণে মানসিক স্বাস্থ্য সংকট!
Next articleপ্রতিটা মানুষই একটা উদ্দেশ্য নিয়ে পৃথিবীতে আসে: নাট্যশিল্পী আজাদ আবুল কালাম
ডা. পঞ্চানন আচার্য্য। স্থায়ী ঠিকানা চট্টগ্রাম। তবে, কলেজ শিক্ষক মায়ের চাকুরিসূত্রে দেশের বিভিন্ন জায়গায় কেটেছে শৈশব। মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হন পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবং উচ্চ-মাধ্যমিক চট্টগ্রাম কলেজ থেকে। সিলেট এম. এ. জি. ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ থেকে এম.বি.বি.এস পাসের পর সরকারি চাকুরিতে যোগদান করেন। মেডিক্যালে পড়ার সময় থেকেই মনোরোগ নিয়ে পড়ার প্রতি আগ্রহ। তাই, ইউনিয়ন পর্যায়ে নির্ধারিত সময়ের চাকুরি শেষে ভর্তি হন মনোরোগবিদ্যায় এম.ডি(রেসিডেন্সি) কোর্সে। বর্তমানে তিনি একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। বংশপরম্পরায় প্রাপ্ত শিক্ষকতার ধারা বজায় রেখে চিকিৎসক ও শিক্ষক হওয়াটাই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। বই, সঙ্গীত আর লেখালেখিতেই কাটে অবসর সময়ের বেশির ভাগ। স্বপ্ন দেখেন - মেধা ও মননশীলতার চর্চায় অগ্রগামী একটা বাংলাদেশের।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here