মানসিক চাপ দূর করার উপায়

0
30

অনেকের জীবনই ব্যস্ততায় ভরা৷ আর দৈনন্দিন জীবনযাত্রার এই জাঁতাকল থেকে মুক্তি পেতে কে না চায়! মাইন্ডফুলনেস প্র্যাকটিস নামের এক পদ্ধতির মাধ্যমে মানসিক চাপ কমিয়ে বেশ কিছু উপকার পাওয়া যায় বলে এর প্রবক্তারা দাবি করেন৷ এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও পাওয়া যাচ্ছে৷
দৈনন্দিন জীবনে চাপ কাকে বলে, টোবিয়াস হাড়ে হাড়ে তা জানেন৷ চাকরি ও দুই শিশুসন্তান সামলাতে গিয়ে তিনি নিজেকে নিঃশেষিত মনে করতেন৷ তিনি বলেন, ‘তখন অবশ্যই বুঝতে পেরেছিলাম, যে কিছু একটা পরিবর্তন আনতে হবে৷ আমার পক্ষে আগামী কয়েক বছর এভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়৷ পরিবর্তনের জোরালো ইচ্ছা জেগেছিল৷’
টোবায়াস তখন জীবনযাত্রার গতি কমানোর চেষ্টা শুরু করলেন৷ এ বিষয়ে খোঁজখবর করতে গিয়ে ‘মনোযোগ’ নামের এক পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি জানতে পারেন৷ এভাবে নাকি স্ট্রেস বা মানসিক চাপ কমানো সম্ভব৷ এই পদ্ধতিতে স্ট্রেস কাটাতে চিরায়ত ধ্যান, শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম ও যোগাসনের সমন্বয় করা হয়৷
বেশ কয়েক বছর ধরে মার্টিনা ফ্রিৎস এই পদ্ধতি শেখাতে কোর্সের আয়োজন করে আসছেন৷ তিনি বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে মনোযোগের অর্থ নির্দিষ্ট এক ধরনের অস্তিত্ব৷ মনেপ্রাণে এই মুহূর্তে এখানেই থাকতে হবে৷ অন্য কোনও বিষয়ে ভাবলে চলবে না৷ আমাদের চিন্তাভাবনা সাধারণত অতীত বা বর্তমানে বিরাজ করে৷ ফলে এই মুহূর্তে এবং এখানে যা ঘটছে, প্রায়ই আমরা তা ভুলে যাই৷’
আট সপ্তাহের কোর্সে টোবিয়াস নিঃশ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম ও এমন সব কায়দা শিখেছেন, যা দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োগ করা যায়৷  মনোবিজ্ঞানীরাও তাদের চিকিৎসায় এই ‘মাইন্ডফুলনেস প্র্যাকটিস’ প্রয়োগ করেন৷
১০ বছর ধরে জার্মানির মাইনৎস শহরের বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে গবেষণা চলছে৷ মনোবিজ্ঞানী সান্ড্রা শ্যোনেফেল্ডার তার গবেষণায় ‘মাইন্ডফুলনেস প্র্যাকটিস’-এর প্রভাব চাক্ষুষ করে তোলার চেষ্টা করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘একদিকে বলা যায় মনোযোগের ব্যায়ামের মাধ্যমে স্ট্রেসের মাত্রা সত্যি কমানো সম্ভব৷ কর্টিসলের মতো স্ট্রেস হরমোনের নিঃসরণ কমে যায়৷ তাছাড়া বহুকাল ধরে ‘মাইন্ডফুলনেস’ চর্চা করলে মস্তিষ্কের কাঠামোয়ও একটি পরিবর্তন দেখা যায়৷ ওয়ার্কিং মেমারি, যার সাহায্যে আমরা তথ্য মনে রাখি ও বিশ্লেষণ করি, তার উন্নতি ঘটে৷ এমনকি এর ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি বা তা বেড়ে যেতে পারে৷’
বয়স এ ক্ষেত্রে কোনও অন্তরায় নয়৷ সব বয়সের মানুষই স্ট্রেস থেকে মুক্তি চান৷ মাইন্ডফুলনেস বিশেষজ্ঞ হিসেবে মার্টিনা ফ্রিৎস মনে করেন, ‘অনেক মানুষ মনে করেন, যে তারা জীবনে চাপের মুখে রয়েছেন, তাদের চালনা করা হচ্ছে৷ মনে হয়, তাদের আর কোনও নিজস্ব সত্তা নেই, শুধু মানুষ হিসেবে সচল থাকতে হয়৷ তারা নিজেদের সমাজের চাকা হিসেবে দেখেন৷ নিজেদের জীবনের রাশ হাতে নেবার স্বাধীন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না৷’
এই মুহূর্তে ফিরে আসা, নিজের শরীরের প্রতি মনোযোগ ফিরিয়ে আনা, সচেতনভাবে নিঃশ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়া জরুরি৷ দৈনন্দিন জীবনে বাসন ধোয়া অথবা দাঁত মাজার সময়েও এমনটা করা সম্ভব৷ ভবিষ্যতের কথা না ভেবে শুধু এখনকার অনুভূতিগুলোর প্রতি মনোযোগ দিতে হবে৷ কঠিন পরিস্থিতি প্রতিরোধ করতে অথবা স্ট্রেস কমাতে দৈনন্দিন জীবনের গড্ডলিকা প্রবাহ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে৷ মার্টিনা ফ্রিৎস বলেন, ‘আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যা কিছু ঘনঘন ঘটে, তাকে অটোপাইলট বলা যায়৷ আমরা ঘুম থেকে উঠি, সকালে একই কাজ সারি৷ স্নান করি, জামাকাপড় পরি, তারপর কাজে বের হই৷ আমাদের নিজস্ব ছন্দ রয়েছে৷ অনেকে প্রবল যানজট পার হয়ে গন্তব্যে পৌঁছান৷ তারপর  আবেগের ওঠানামাও রয়েছে৷ কেউ গালিগালাজ করেন৷ অনেক কিছুই বার বার ঘটতে থাকে৷ মানুষ স্বয়ংক্রিয়ভাবে এই চক্রে আটকে পড়ে৷’
মাইন্ডফুলনেস প্র্যাকটিস, ধ্যান ও যোগাসন দৈনন্দিন জীবনের গতি কমাতে পারে৷ জীবনের জাঁতাকল থেকে কয়েক মুহূর্ত মুক্তি পেতে সাহায্য করতে পারে৷
টোবিয়াস এর ফলে উপকৃত হয়েছেন৷ সন্তানরা পার্কে খেলার সময় তিনি বেঞ্চে হেলান দিয়ে বসে নিঃশ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম করেন৷ সেই মুহূর্তে সেখানেই থাকেন তিনি৷
সূত্র: ডয়চে ভেলে

Previous articleবিষণ্ণতার সাথে পাওয়া গেছে জিনের সম্পর্ক: চিকিৎসায় খুলবে নতুন দিগন্ত
Next articleমানসিক বিপর্যয় মোকবিলায় সাপোর্ট গ্রুপের ভূমিকা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here