মাদকাসক্ত সন্তানকে দূরে সরিয়ে দিবেন না, তাকে সময় দিন

0
69

১৬ বৎসর বয়সের রাতুল (ছদ্ম নাম) ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়াকালীন কৌতুহল বশত গাজা নেয় বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে। সেই সময় সে সিগারেটও খাওয়া শুরু করে। বিষয়টি প্রথম দিকে হঠাৎ হঠাৎ হলেও পরবর্তীতে তা নিয়মিত হয়ে যায় এবং ২ বৎসর অধিক পরিমাণেই নেয় সে। নেশার ক্ষতিকর দিক, পড়াশুনার সমস্যা, সমাজের নেতিবাচক মনোভাব এসব চিন্তা করে আস্তে আস্তে কমিয়ে আনলেও মাসে দুইবার ৪-৫ টি করে ইয়াবা ট্যাবলেট নেয়। এটাকে সে সমস্যা মনে করেনা বরং তার অশান্তিময় জীবনে আনন্দের উৎস এই ইয়াবা। পরিবারের সাথে তার দূরত্ব মূলত তার বাবার সাথেই বেশি। চিকিৎসক এবং সমাজসেবী বাবা তার ছেলের সাথে দীর্ঘদিন ধরে কথা বন্ধ করে দিয়েছেন। মাকে জানিয়ে দিয়েছেন তোমার নেশাখোর ছেলের সাথে আমি কথা বলব না। চাচারাও তার সাথে কথা বন্ধ করে দিয়েছে। রাতুলের কারণে তাদের পরিবারের পারিবারিক ঐতিহ্যের অসম্মান হচ্ছে বলে তারা মনে করে -তাইতো তার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া। ছেলেটি তার কষ্ট গুলো কারও সাথে শেয়ার করতে পারেনা।
পড়ালখোর জন্য সর্বদা চাপ দেয়া হয় তাকে। পরিবার চায় রাতুল সব সময় লেখাপড়া নিয়ে টেবিলে ব্যস্ত থাকবে। আর রাতুলের মন চায় খেলতে, বড়দের মত বাইক নিয়ে ঘুরে বেড়াতে। চিকিৎসক বাবা কেন তার আবদারের প্রতি গুরুত্ব দিবেন না? কেন তাদের পরিবারে কোনো বিনোদনের ব্যবস্থা নেই? এ গুলো তার মনোকষ্টের কারণ। রাতুলের মায়ের অভিযোগ এবং কষ্টও রয়েছে তার স্বামীকে নিয়ে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তেমন বন্ধত্বপূর্ণ সম্পর্ক নেই। তিনি শুধু অর্থ যোগানের উৎস। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বিনোদনের কোনো ব্যবস্থা নেই – এই পরিবারে। সব কিছুই মা কেন্দ্রিক। তিন সন্তানের স্কুলে নিয়ে যাওয়া সাংসারিক, পারিবারিক, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা সব কিছুই তাকেই পরিচালনা করতে হয়। কষ্ট হলেও মানিয়ে নিয়েছেন তিনি। কিন্তু তিনিও বলেন স্বল্পভাষী স্বামীর পরিবারের প্রতি চরম উদাসীনতা রয়েছে যা রাতুলকে দিনে দিনে হতাশার সাগরে ডুবিয়ে দিচ্ছে। হ্যালুসিনেশনে ভোগার ফলে মনোবিজ্ঞানীর কাছে পরামর্শ নিতে এসেছলি। যদিও সে মনে করে সে আসক্ত নয়, তথাপি এটা থেকে বেড়িয়ে আসার প্রয়োজন বোধ করে।
একজন মনোবিজ্ঞানী হিসেবে বলতে চাই রাতুলের জীবনের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে বাবার সহযোগিতা খুবই প্রয়োজন- তার চিকিৎসার সুব্যবস্থা নিশ্চিত করা সহ একটি দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ পারিবারিক পরিবেশ এবং বন্ধন তাকে নেশা মুক্ত সুন্দর জীবনে হাঁটতে সহায়তা করবে।


প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না কর্তৃপক্ষ।

Previous articleশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর ৫১ শতাংশ হতাশায় ভুগছে
Next articleপর্যাপ্ত মানসিক স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে না ইংল্যান্ডের শিশু ও তরুণরা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here