মতের অমিল হলে অন্যদের কাছে নিজের মতকে তুলে ধরুন, কিন্তু অবশ্যই সঠিক উপায়ে। আসুন কিছু কৌশল সম্পর্কে জানা যাক যেগুলো আপনাকে বিরোধপূর্ণ আলোচনায় নিজের মতকে সঠিক ভাবে তুলে ধরতে সাহায্য করবে।
মতের অমিল হলে সেই সময়ে নিজের আবেগ এবং ভাবনাকে ধরে রাখা অনেকের পক্ষেই বেশ কঠিন একটি কাজ। তখন খুব দ্রুত আমাদের মানসিক চাপ বেড়ে যায় এবং মেজাজ সন্তুলান হারায়। এ ধরণের পরিস্থিতিতে যদি ভাবনা এবং আবেগকে নিয়ন্ত্রণে না রাখা যায় তাহলে আমাদের সাথে অন্যান্যদের যেমন পরিবারের, আত্মীয় স্বজনদের, সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের বা কর্মক্ষেত্রে অন্য কারও সাথে সহজেই সম্পর্কের অবনতি ঘটতে পারে। কিভাবে আমরা এই সমস্যা এড়াতে পারি? এখন আমরা সেরকম কিছু কৌশল নিয়েই আলোচনা করবো যেগুলো আমাদের এই অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যা তৈরি হওয়া থেকে বিরত রাখবে। এমন নয় যে আমরা কখনোই আমাদের মতামত তুলে ধরবো না বা নিজেই অন্যদের কাছে মাথা নত করবো, মন ছোট করবো, বরং এমনভাবে সব কিছু করতে হবে যেন আমাদের মত অন্যদের ভাবনাকে আঘাত না করে এবং আমরা কার্যকরী উপায়ে সেটি প্রকাশ করতে পারি।
১) অন্যদের মতকে শ্রদ্ধা করুন
অবশ্যই আপনার কাছে আপনার মত বা ভাবনা সবার থেকে সেরা এবং উত্তম। তবে অন্যদের মাঝে যেখানে আপনার সাথে অন্যদের মতের অমিল ঘটছে সেখানে নিজের সাথে সাথে ভিন্ন মত হলেও তাদের মতকে সম্মান করতে হবে। কখনোই এমন মনোভাব ব্যক্ত করা যাবেনা যাতে অন্যন্যরা অসম্মানিত বোধ করে। অন্যরা সবাই ভুল, আমি একাই সঠিক- এমন ভাবে কথা না বলে বরং এমন একটি পরিবেশ তৈরি করুন যেখানে সবার মনে হয় যে আপনার মতের সাথে আপনি অন্যান্যদের মতকেও সমান গুরুত্ব দিয়ে বিচার করছেন।
২) কখনোই হতাশাগ্রস্ত হয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবেনা
এটা স্বাভাবিক যে অন্যদের সাথে আপনার মতের এবং মনের মিল অমিল হতেই পারে। এতে হতাশাগ্রস্ত হলে চলবে না। কখনোই ধৈর্যহারা হয়ে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারালে চলবে না। হতাশা গ্রস্ত মানসিকতা নিজের আচরণ এবং ভাবনাকে অনিয়ন্ত্রিত করে দেয়। তখন নিজের মতকে প্রকাশের বদলে এমন অবস্থা সৃষ্টি হবে যা আপনার ভাবনাকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ভাবে প্রকাশ করবে এবং আপনাকে অন্যদের সাথে দুর্ব্যবহারে প্রণোদিত করবে। আর এটি আপনিও হয়তো চাইবেন না।
৩) নিজের স্বপক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করুন কিন্তু শান্ত ভাবে
এটা সব সময় মাথায় রাখবেন যে যুক্তি না দিয়ে শুধু মাত্র আবেগের বশবর্তী হয়ে নিজের মত উপস্থাপন করলে কখনোই অন্যরা সেটি গ্রাহ্য করবে না। তাই যুক্তি সহকারে শান্ত ভাবে নিজের কথাগুলি অন্যদের বুঝিয়ে বলুন যেন তারাও বুঝতে পারে যে আপনি ঠিক কি বলতে চাইছেন।
৪) অন্যদের মতকে মেনে নেওয়ার মানসিকতা রাখুন
এটা কখনোই আগেভাগে ভেবে বসবেন না যে যা কিছু ভাবুক আপনি ই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটি নেবেন। এমন চিন্তা ভাবনা বা মানসিকতা আপনাকে এক পাক্ষিক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করবে এবং আপনার ভাবনার মতোই এক্ষেত্রে আপনার ব্যবহার ও কখনোই সঠিক হবেনা। আপনার সিদ্ধান্ত বা মত যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি অন্যদের মতও আপনার মতের মতোই সমান গুরুত্বপূর্ণ। আর সবার সিদ্ধান্ত বা মতের মাঝে সর্বোত্তম মতটিই গৃহীত হবে এবং সেটি যে কারোরই হতে পারে। এমন মানসিকতাই সর্বদা ধারণ করুন।
আমরা চাই নিজের মতের সাথে অন্যন্যরা সহমত হোক। কিন্তু আমরা কখনোই অন্যদের ধারণাকে বা ভাবনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবোনা। আমরা এটাও নির্ধারণ করতে পারিনা যে কে কে আমাদের সাথে সহমত হবে আর কে নয়। তাই নিজের মত প্রদর্শন এবং একই সাথে ধৈর্য সহকারে সম্মান পূর্বক অন্যদের মতকে শোনার অভ্যাসও গড়ে তুলতে হবে যেন সঠিক ভাবে নিজের ভাবনাকে উপস্থাপন করা যায় এবং সেটি গ্রহণযোগ্যতা পায়।
সূত্র: https://www.psychologytoday.com/intl/blog/brave-talk/202101/11-tips-talking-someone-you-disagree
অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে