মিশু সাব্বির, একাধারে মডেল, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র অভিনেতা। জীবনকে যিনি দেখেন একেবারেই সাদা-মাটা ভাবে। নেতিবাচকতা বলে কোনো শব্দ যেন নেই তাঁর অভিধানে। নেই হিংসা কিংবা রাগ। ইতিবাচক মনোভাবের এই মানুষটি তাঁর জীবনের নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন মনের খবরের সাথে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আবির দাস।
মনের খবর: কেমন আছেন?
মিশু সাব্বির: ভালো। আমার কাছে মনে হয় প্রত্যেকটা মুহূর্ত ভালো থাকাই উচিত। ভালো থাকার জন্যইতো সবকিছু। আমি সব সময়ই ভালো থাকার চেষ্টা করি। ভালো থাকার নামই জীবন।
মনের খবর: ভালো থাকার জন্য আপনি কোন কোন বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখেন এবং ভালো রাখার চেষ্টা করেন?
মিশু সাব্বির: স্পেশাল কিছু না। আমার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি যে ব্যাপারটা কাজ করে সেটা হলো আমি সব ব্যাপারেই পজিটিভ। আমি খুব খারাপ ব্যাপারগুলোকেও পজিটিভলি নেই। অনেক গম্ভীর ব্যাপারকেও লাইটলি নেই। ক্রাইসিস, ঝামেলা এগুলা আসবেই লাইফে। আমি ক্রাইসিস মোমেন্টে চিন্তা করি এটা আমার ভাগ্যে ছিলো, তাই ওইটাকে পজিটিভলি নেই।
মনের খবর: ভালো থাকার জন্য প্রতিটা দিন জরুরী নাকি অন্য কোনো পরিকল্পনা করেন?
মিশু সাব্বির: ভালো থাকার জন্য অবশ্যই অবশ্যই প্রতিটা দিনই জরুরী। পরিকল্পনা করে ভালো থাকা যায় না। আমি যদি ভাবি আজকে ভালো থাকবো বা আজকে ইচ্ছা করেই খারাপ থাকবো, এটা সম্ভব না। আর আমি কখনোই প্রিটেনশিয়াস না, মানে ফেইক না। আমি যা আমি সেরকম ভাবেই মানুষের সাথে মিশি। নিজে যখন ভালোভাবে সবকিছু নেওয়া যায় তখন এমনিতেই ভালো থাকা যায়, এটাই মূল কথা।
মনের খবর: মন খারাপ হয়?
মিশু সাব্বির: নাহ। হতে দেই না। ওই যে, পজিটিভ থাকি সব ব্যাপারে।
মনের খবর: যদি কখনও মন খারাপ হয় তখন কি করেন?
মিশু সাব্বির: আগে হতো ব্যাপারটা। হয়তো কোনো কিছু নিয়ে একটু আপসেট থাকতাম তখন হেভি মেটাল গান শুনতাম। এখন তেমন মন খারাপ হয় না।
মনের খবর: মন ভালো–খারাপ, দুঃখ–কষ্ট,রাগ–হিংসা এগুলোকে কিভাবে দেখেন?
মিশু সাব্বির: আমার ভাষায় এগুলা একদিকে মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি আবার অন্যদিকে কিছুই না। কারণ এগুলো এড়িয়ে চলা সম্ভব চাইলেই।
মনের খবর: রাগ করেন?
মিশু সাব্বির: আমি সহজে রাগি না। বলতে গেলে দেখা যায় আমি বছরে খুব বেশি হলে দুই-তিনবার রাগ করি।
মনের খবর: রাগ কি দমিয়ে রাখেন? না রাগ কারো উপর ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করেন?
মিশু সাব্বির: রাগের বহিঃপ্রকাশটা একেকজনের একেকরকম। একজন নরম মানুষের এক রকম, একজন বদমেজাজী মানুষের আরেক রকম। কিন্তু রাগ সবারই হয় সময় বিশেষে। আমি আসলে যেমনটা বললাম আমি খুবই পজিটিভ থাকার চেষ্টা করি যেকোনো ব্যাপারে। তবুও যে কোনো ব্যাপারে যদি কখনও আঘাত পাই বা রাগ হয় তখন সাথে সাথেই সেটা প্রকাশ করি না। চুপচাপ থেকে সেটাকে যুক্তি দিয়ে খণ্ডন করে কমাই।
মনের খবর: রাগ কি নিয়ন্ত্রণ দরকার? কেন?
মিশু সাব্বির: রাগ নিয়ন্ত্রণ করাটাই সবচেয়ে বেশি দরকার। কেননা, অনেক ছোটবেলা থেকেই এই ব্যাপারটা আমি বুঝতে শিখে গেছি। আর তখন থেকেই এটা চিন্তা করেছি যে, রাগ করা যাবে না। কারণ রাগ থেকেই ভায়োলেন্স বা সমস্ত ঝামেলার সৃষ্টি।
মনের খবর: হিংসা আছে?
মিশু সাব্বির: নাহ। আমার ক্ষেত্রে হিংসা ব্যাপারটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এটা মানব জীবনের সবচাইতে ক্ষতিকারক একটা ব্যাপার। আমার যেটা ভাগ্যে আছে সেটা আমার, আবার আমার বন্ধুর যেটা ভাগ্যে আছে সেটা তার।
মনের খবর: ভালোবাসার প্রবণতা আপনার ভেতরে কতটুকু?
মিশু সাব্বির: প্রচণ্ড। আমি ভালোবাসায় খুব বিশ্বাসী। আর ভালোবাসা বলতে আমি প্রথমেই যেটা বুঝি সেটা আমার কাজ। তারপর ফ্যামিলি। আগে অবশ্য প্রথমে ফ্যামিলি ছিলো। যেমন- আমার বাবা যখন অসুস্থ হয়ে আইসিইউতে ছিলেন তখনও আমি শ্যুটিংয়ে গেছি। এর মানে এই না যে আমি সেটাকে কম প্রায়োরিটি দিয়ে গেছি। কিন্তু দুটোই আমার ভালোবাসা।
মনের খবর: ভালোবাসা ব্যাপারটিকে কিভাবে দেখেন?
মিশু সাব্বির: ভালোবাসা মানেই সুন্দর। জরুরী না যে একটা ছেলে আর মেয়ের মধ্যেই ভালোবাসা হতে হবে। ভালোবাসা তো ভালোবাসাই।
মনের খবর: আর একবার ভালোবাসার সুযোগ দিলে কাকে ভালোবাসতেন?
মিশু সাব্বির: আমি যেহেতু ভালোবেসেই বিয়ে করেছি তাই আমার মনে হয় না আমার আর ভালোবাসার সুযোগ দরকার। আমি পর্যাপ্ত ভালোবাসা পেয়েছি বা ভালোবাসতে পেরেছি।
মনের খবর: কখনো কি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়েছেন?
মিশু সাব্বির: একটু হাস্যরসিক ভাবে বলতে গেলে আমার সব সময়ই মনে হয় আমি মানসিক ভাবে অসুস্থ। না হলে অভিনয় করতে পারতাম না। যেমন- দেখা যায় প্রচণ্ড ক্রাইসিস অথবা সমস্যা কিন্তু আমাকে ক্যামেরার সামনে গিয়ে হাসতে হচ্ছে। অথবা আমার বাসায় স্ত্রী আছে তারপরেও আমাকে অভিনয়ের খাতিরে অন্য কোনো মেয়ের হাত ধরে প্রেম নিবেদন করতে হচ্ছে। তো মানসিক ভাবে অসুস্থ না হলে এটা সম্ভব না।
মনের খবর: মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়টিকে কিভাবে দেখেন?
মিশু সাব্বির: যেমনটা বললাম, আমি খুবই পজিটিভ। আর মানসিক ভাবে অসুস্থও মনে করি নিজেকে, তাই মনে হয় আমি মানসিক ভাবে অসুস্থ না হলে বোধ হয় ভালো থাকতাম না।
মনের খবর: স্বপ্ন দেখেন?
মিশু সাব্বির: নাহ।
মনের খবর: নিজে ভালো থাকার জন্য তো আমরা অনেক কিছু করি। কিন্তু অন্যরা যাতে আপনাকে ভালোবাসেন, অন্যদের যাতে ভালো লাগে, সে ব্যাপারে কতটুকু সচেতন? এজন্য কোন কোন বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখেন?
মিশু সাব্বির: অভিনয়টাই তো সেজন্য করি। আর ব্যক্তিগত জীবনে যেহেতু আমি ফেইক বা প্রিটেনশিয়াস না, তাই যেভাবে নিজেকে উপস্থাপন করি সেটাই পারি।
মনের খবর: নিজের কাছে মানুষ হিসেবে আপনি কেমন?
মিশু সাব্বির: এটা আসলে সময়ের সাথে পাল্টায়। আমার মনস্তত্ত্ব যাচাই করা অনেক কঠিন। যারা সাধারণত অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণ করে তাদের ক্ষেত্রে বোধ হয় এমনই হয়।
মনের খবর: যে কোনো সফলতার পেছনে মানসিক সুস্থতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার জীবনে মানসিক শক্তির প্রভাব কতটুকু? এ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন?
মিশু সাব্বির: আমি মানসিক ভাবে খুবই শক্তিশালী আর স্টেবলড। আমার মানসিক স্টেবলিটির বদৌলতেই আমি এতো কিছু করতে পারি। ফ্যামিলি, অভিনয়, ব্যবসা সবকিছুই। আর, মানসিক সুস্থতা না থাকলে তো আর মানুষ থাকা যায় না।
মনের খবর: ধন্যবাদ আপনাকে মনের খবরকে সময় দেওয়ার জন্য।
মিশু সাব্বির: আপনাকে ও মনের খবরকেও ধন্যবাদ।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে