বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ২০০টির অধিক রাষ্ট্রে কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়েছে। দিনের পর দিন মানুষ স্বাভাবিক জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গৃহবন্দী জীবন যাপন করছে। প্রতি দিন হাজার হাজার মানুষ কোভিড-১৯ দ্বারা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করছে এবং এখন পর্যন্ত এই রোগের কোন কার্যকরী প্রতিষেধক বা টিকা আবিষ্কৃত হয়নি। এমন অবস্থায় উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা এবং অতিরিক্ত মানসিক চাপ দ্বারা তাড়িত হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা বা অতিরিক্ত মানসিক চাপ সব কিছুই ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক। বিভিন্ন গবেষণায় কিভাবে আমরা এই অতিরিক্ত উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি সেই বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য উঠে এসেছে।
কোভিড-১৯ এমন একটি রোগ যেটির সম্বন্ধে আমাদের আগে কোন অভিজ্ঞতা ছিলনা। এর চরিত্র যেমন অজ্ঞাত তেমনি প্রভাবও অত্যন্ত দুর্দশাপূর্ণ। আমরা সম্পূর্ণ একটি নতুন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছি এবং অত্যন্ত পীড়ার সাথে অসহায় হয়ে আমাদের কাছের মানুষদের হারিয়ে যাওয়া দেখছি। আমরা সবাই এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবন পরিবারের ছোটদের এবং পিতা মাতার পরিচর্যা করে, অর্থনৈতিক উদ্বেগ সামাল দিয়ে এবং গৃহবন্দী হয়ে নতুন অবস্থাকে স্বীকার করে নিয়ে তার সাথে মানিয়ে নেওয়ার আপ্রাণ প্রচেষ্টা করে চলেছি। কোভিড-১৯ সংক্রান্ত এই সব ধরণের কর্মকাণ্ড অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবে আমাদের মানসিক অবস্থার উপর অত্যন্ত নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আমরা বিভিন্নভাবে হতাশা, উদ্বিগ্নতা, এমনকি ট্রমায় আক্রান্ত হচ্ছি। কিন্তু মনে রাখতে হবে ইতিহাসে মানব জাতি বহুবার এমন অনেক দুর্যোগের সম্মুখীন হয়েছে। তারা হেরে যায়নি। বরং আত্মবিশ্বাসী হয়ে যুদ্ধ করে সকল দুর্যোগ মোকাবেলা করেছে।
এমন প্রতিকূল অবস্থায় মানসিক দৃঢ়তা বজায় রাখতে আমাদের কিছু বিষয় লক্ষ রাখতে হবে। সব থেকে আগে যেটি প্রয়োজন সেটি হল শোককে শক্তিতে পরিণত করা। এই সময়ে সাধারণ মন মানসিকতার নেতিবাচক পরিবর্তনকে ইতিবাচক মানসিক পরিবর্তনের দিকে নিয়ে যেতে হবে। সব কিছুর শেষে অবশ্যই আমাদের এই মানসিক জোর ধরে রাখতে হবে কিন্তু এই প্রচেষ্টা শুরু করতে হবে এখনই, কোভিড-১৯ মধ্যবর্তী সময়ে।
১) নেতিবাচক সংবাদ কম শোনাঃ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কোন দুর্যোগ বা মহামারীতে একজন মানুষ কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবে সেটি নির্ভর করে দুটি বিষয়ের উপর। প্রথমটি হল তারা তাদের স্বাভাবিক জীবনে কেমন স্বভাবের এবং দ্বিতীয়টি হল দুর্যোগ বা মহামারীর সময়ে তারা কোন ধরণের সংবাদ কতোটা শোনে। নেতিবাচক সংবাদ বা খারাপ সংবাদ অধিক মাত্রায় শুনলে এবং সেগুলো নিয়ে বেশী ভাবলে সাধারণত ট্রমায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে। যারা অধিক মাত্রায় নেতিবাচক সংবাদ শোনে তাদের মাঝে সারাক্ষণ নেতিবাচক চিন্তাভাবনাই কাজ করে। এর ফলে তার মাঝে দুশ্চিন্তা, ভয়, আত্মবিশ্বাসের অভাব সহ নানা রকম নেতিবাচক মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। তাই মানসিকভাবে সুস্থ এবং দৃঢ় থাকতে হলে নেতিবাচক সংবাদ শোনার মাত্রা কমাতে হবে এবং ইতিবাচক সংবাদ বেশী শুনতে হবে।
২) পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেওয়াঃ মহামারীর এই সময়টাতে আমরা সবাই আমাদের স্বাভাবিক জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছি। এই অবস্থায় ভয়, হতাশা, রাগ, বিষণ্ণতা এগুলো আমাদের জন্য অত্যন্ত স্বাভাবিক অনুভূতি। মানসিকভাবে দৃঢ় একজন মানুষ এই অনুভূতিগুলোকে স্বীকার করে নেবে। এবং এগুলোকে স্বীকার করেই এই পরিবর্তিত অবস্থার সাথে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবে। ভয়কে ভয় না পেয়ে বরং জয় করবে।
৩) নিজের যত্ন নেওয়াঃ কর্ম ক্ষেত্রে ব্যস্ততার জন্য আমরা অনেকেই নিজেকে যথেষ্ট সময় দেওয়ার সুযোগ পাইনা। চারিদিকে যখন লকডাউন চলছে, আমাদের হাতে এখন অফুরন্ত সময়। এই সময়টাকে নেতিবাচক ভাবে না দেখে বরং বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে ইতিবাচক ফলাফলদায়ী করে তুলতে হবে। এরমধ্যে অন্যতম উপায় হল নিজেকে আরও বেশী সময় দেওয়া, নিজের যত্ন নেওয়া। শরীর চর্চা করা, পছন্দের বই পড়া, মুভি দেখা ইত্যাদি পছন্দসই কাজের মাধ্যমে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হবে এবং মানসিক ভাবে প্রফুল্ল থাকতে হবে।
মনে জোর থাকলে যে কোন বিপদের মোকাবেলা করা যায়। কিন্তু দুর্বল মানসিকতাসম্পন্ন মানুষ মৃত্যুর পূর্বেই বহুবার মারা যায়। তাদের মৃত্যু হয় মনস্তাত্ত্বিক। তাই যে কোন সমস্যায় মনের জোর বজায় রাখুন। নিজে সুস্থ থাকুন, অন্যকে সুস্থ থাকতে সহায়তা করুন।