ডা. শাহরিয়ার ফারুক : বাইপোলার মুড ডিসঅর্ডার বা বাইপোলার ডিসঅর্ডার একটি গুরুতর মানসিক রোগ। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির ম্যানিয়া বা ম্যানিক ফেজ এবং বিষণ্নতা বা ডিপ্রেসিভ ফেজ এই দুইটি অবস্থা সাধারণত পর্যায়ক্রমে দেখা দেয়। ম্যানিক ফেজের উল্লেখযোগ্য লক্ষণগুলো হলো অতি উৎফুল্ল বা উগ্র মেজাজ, অতিরিক্ত কথা বলা, ঘুমের চাহিদা কমে যাওয়া, নিজেকে অযৌক্তিকভাবে বড় মনে করা ইত্যাদি। আর ডিপ্রেসিভ ফেজের উল্লেখযোগ্য লক্ষণগুলো হলো মন খারাপ থাকা, কোন কিছুতে আগের মত আগ্রহ না পাওয়া, কোনকিছুতেই আনন্দ না পাওয়া, হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়া ইত্যাদি। মনের অবস্থার এই পরিবর্তনগুলি এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির যৌনতা এবং রোমান্টিক সম্পর্কের উপরেও উল্লেখযোগ্য প্রভাব তৈরি করে।
বাইপোলার ডিসঅর্ডারের ম্যানিক পর্বের সময় আক্রান্ত ব্যক্তির যৌন চাহিদা অনেকগুন বেড়ে যেতে পারে। আর তাই, রোগের এই পর্যায়টিতে অনেক রোগীই বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ যৌন আচরণে লিপ্ত হয়ে পড়তে পারেন। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আগ্রহের নিয়ন্ত্রনহীন প্রকাশ থেকে শুরু করে অপরিচিত ব্যক্তির সাথে অরক্ষিত যৌন মিলন কিংবা একাধিক যৌন সঙ্গীর সাথে সম্পর্ক স্থাপন পর্যন্তও হতে পারে রোগের এই পর্যায়ে। নারী এবং পুরুষ উভয় রোগীর ক্ষেত্রে একইভাবে এই লক্ষণগুলো দেখা যায়। এই কারনে বাইপোলার ডিজঅর্ডারের ম্যানিক ফেজে অল্প বয়সী মহিলা রোগীদের বিশেষভাবে নজরে রাখা উচিত। কেননা, অনেক সময় রোগের এই পর্যায়ে খুব সহজেই অল্পবয়সী একজন মহিলা রোগী কোন বিকৃত রুচি সম্পন্ন ব্যক্তির লালসার শিকার হতে পারেন। অন্যদিকে, যখন রোগের বিষণ্ণতার পর্যায় চলে তখন বাইপোলার ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তি যৌনতার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারেন এবং এই সময় তার যৌন কর্মকাণ্ডও কমে যেতে পারে।
বাইপোলার ডিসঅর্ডার এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির রোমান্টিক সম্পর্কের উপরেও প্রভাব ফেলতে পারে। ম্যানিক পর্যায়ের সময় রোগীর উগ্র মেজাজ তার রোমান্টিক সম্পর্কের উপর বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে। কারণ তার সঙ্গী তার এই পরিবর্তিত ভারসাম্যহীন মানসিক অবস্থা প্রায়শই বুঝতে পারেননা অথবা তার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেন না। ম্যানিক পর্যায়ে অনেক সময় রোগী মারমুখি আচরণ দেখাতে পারেন। দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে অনেক রোগী তার সঙ্গীকে শারীরিক আঘাত করতে পারেন যা কোন রোমান্টিক সম্পর্কের জন্য মোটেও সুখকর নয়। এছাড়া বাইপোলার ডিসঅর্ডারের ম্যানিক এবং ডিপ্রেসিভ উভয় পর্যায়ে আক্রান্ত ব্যক্তির অনেক সময় ডিলুশন বা ভিত্তিহীন ভ্রান্ত বিশ্বাস তৈরি হয়। এর ফলে তার মনে সঙ্গীর প্রতি অবিশ্বাস বা সন্দেহ তৈরি হয় যা অনেক ক্ষেত্রেই পরবর্তীতে একটি রোমান্টিক সম্পর্কে চিড় ধরায়।
যথাযথ নিয়মে নিয়মিত ঔষধ সেবন বাইপোলার ডিজঅর্ডার এর চিকিৎসার মুল অংশ। আর রোগী নিয়মিত ঔষধ সেবন করছেন কিনা তা দেখার দায়িত্ব তার স্বজন বা পরিবারের অন্যদের। নিয়মিত ঔষধ সেবন একদিকে যেমন রোগ নিয়ন্ত্রন এবং নিরাময় করতে পারে, অন্যদিকে, রোগীও আর দশজন মানুষের মত স্বাভাবিক যৌন ও রোমান্টিক সম্পর্ক বজায় রাখতে পারেন।
লেখক : ডাঃ শাহরিয়ার ফারুক
সহকারী অধ্যাপক,
মনোরোগবিদ্যা বিভাগ,
শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ, বগুড়া।