বাংলাদেশে মানসিক রোগীর সংখ্যা বাড়ছে

0
30
মানসিক হাসপাতাল, পাবনা।

বাংলাদেশে মানসিক রোগ চিকিৎসায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও নেই। রয়েছে চিকিৎসক সংকট। মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের অভাব আছে হাসপাতালগুলোতে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মনোরোগ দেখার জন্য আলাদা কোন ব্যবস্থাই নেই। বর্তমানে ১৭ কোটির মানুষের দেশে মানসিক রোগের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ২৭০ জন। আর কাউন্সেলিংয়ের জন্য সাইকোলজিস্ট রয়েছেন ২৫০ জন। পর্যাপ্ত দক্ষ জনবল নেই। ঢাকা ও পাবনায় সরকারি বিশেষায়িত হাসপাতাল আছে দুটি। ঢাকায় সরকার অনুমোদিত বেসরকারি মানসিক হাসপাতাল ১৫টি। যার অনেকগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে চিকিৎসা অবহেলার।

ওদিকে গ্রামেগঞ্জে মানসিক রোগীদের বলা হয় জিনে, ভূতে ধরেছে। আবার কেউ বলেন, খারাপ বাতাস লেগেছে। পুরুষ হলে বলা হয় পরীর বাতাস লেগেছে। মেয়েদের নিয়ে বেশি বলা হয় খারাপ জিন। যার কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই। এই কারণে গ্রামের মানুষ মানসিক রোগীদের চিকিৎসকের কাছে না নিয়ে বাড়িতে হেকিম, তান্ত্রিক, ওজা, কবিরাজ, হুজুর এবং পুরোহিত ডেকে আনেন। অনেক সময় ভন্ড তান্ত্রিক সাধকদের কবলে পড়ে গ্রামের মানুষ প্রতারণার শিকার হন। এমনকি নিষ্ঠুরতার কবলে পড়ে অনেক নারীদের আরও মানসিক ক্ষতি হয়। পরিবার পরিজন অনেক সময় সব বুঝেও গ্রাম্য সামাজিক রীতি নীতির কারণে অনেক কিছু আড়াল করে রাখে।

বাংলাদেশে মানসিক রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ২০১৮-১৯ সালের এক জাতীয় জরিপ অনুযায়ী ১ কোটি ৭৭ লাখ মানুষ মানসিক রোগে ভুগছেন বাংলাদেশে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে গত ১৪ বছরে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মানসিক রোগী বেড়েছে ৫৪ লাখ ৫৯ হাজার ৮৩৮ জন। বর্তমানে এই সংখ্যা আরও বেড়েছে। ১৭ কোটি মানুষের এই দেশে মানসিক রোগীর সংখ্যাও এখন প্রায় আড়াই কোটি। যা গড় জনসংখ্যার ১৬.৮% শতাংশ। কভিড-১৯ পরবর্তী মানসিক স্বাস্থ্যের চিত্র আরও করুণ রূপ নিয়েছে। মনিসিক রোগী বেড়েছে। চিকিৎসার জন্য মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের কাছে বেড়েছে রোগীদের ভিড়।

সরকারি তথ্য সূত্রে, ২০০৫ সালে দেশে প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের সংখ্যা ছিল ৭ কোটি ৬৫ লাখ ২৬ হাজার ৯৯৫ জন। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য জরিপ অনুযায়ী তখন প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মানসিক রোগে আক্রান্ত ছিলেন ১৬ শতাংশ। ওই সময়ে প্রাপ্তবয়স্ক মানসিক রোগে আক্রান্ত ছিলেন ১ কোটি ২২ লাখ ৪৪ হাজার ৩১৯ জন। সর্বশেষ ২০১৮-১৯ সালে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য জরিপে উঠে আসে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ১৭ শতাংশ মানসিক রোগে আক্রান্ত। ২০১৮ সালে দেশে প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের সংখ্যা ১০ কোটি ৪১ লাখ ৪২ হাজার ১০৫ জন। সে হিসাবে মানসিক রোগে আক্রান্ত প্রায় ১ কোটি ৭৭ লাখ ৪ হাজার ১৫৭ জন। চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে, এ রোগীদের ৯২ শতাংশ চিকিৎসকের পরামর্শ কিংবা সেবা নেন না। একই সঙ্গে ১৮ শতাংশ শিশু-কিশোরের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা আছে। তাদের ৯৫ শতাংশ কোনো চিকিৎসকের কাছে যায় না।

মানসিক রোগ ও রোগী বাংলাদেশে বাড়ছে কেন? নতুন ধরনের জীবন ধারায় মানসিক ভারসাম্য হারানোর উপাদান বেড়ে যাচ্ছে। জীবিকার সংকট, ভয়, আতঙ্ক, চোখের সামনে বীভৎস মৃত্যু দেখা, নৃশংসতা আমাদের মানসিক রোগের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। মানসিক সমস্যা বাড়ছে। মানুষের সহ্যক্ষমতা কমে যাচ্ছে। পারিবারিক সহিংসতা বহু গুণ বেড়েছে। দেশে এলএসডির মতো মাদক সেবন চলছে, মাদকাসক্ত হচ্ছে মানুষ, আত্মহত্যা বাড়ছে। সন্তানকে হত্যা করছে, স্ত্রীকে নৃশংসভাবে হত্যা করছে, মানুষকে হত্যা করে টুকরো টুকরো করছে। এ রকম ঘটনা আগেও ঘটত কিন্তু ইদানীং আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।

সুত্রঃ ইন্টারনেট

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

“মনের খবর” ম্যাগাজিন পেতে কল করুন ০১৮ ৬৫ ৪৬ ৬৫ ৯৪
Previous articleডিপ্রেশনে ভুগছি একবছরেরও বেশি সময় ধরে
Next articleআবাসিক মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্র কেন প্রয়োজন?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here