বর্তমান বিশ্বে ফেসবুক সামাজিক যোগাযোগের একটি জনপ্রিয় মাধ্যম। এর মাধ্যমে অতি সহজে আমরা দেশ ও দেশের বাইরের বন্ধু, আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিতদের তথ্য, অবস্থান ও তাদের কাজকর্ম সম্বন্ধে জানতে পারি তাদের প্রোফাইল থেকে।
মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন ফেসবুক-এর ব্যবহার নিম্নলিখিত মানসিক সমস্যার অনেকাংশে সমাধান করে,
– সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বিষণ্নতা এবং অস্থিরতা অনেকাংশে কমে যায়।
– যারা সামনাসামনি মানুষের সাথে কথা বলতে বা কোথাও যেতে অস্থিরতা বোধ করেন তারা ফেসবুকের মাধ্যমে সহজে যোগাযোগ করতে পারেন এবং অস্থিরতা কিছুটা কমাতে পারেন।
– যারা হীনমন্যতায় ভোগেন তারা ফেসবুকে অন্যের সাফল্য দেখে এবং বাকিদের সহযোগিতায় নিজের হীনমন্যতা কাটিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
– যারা দীর্ঘদিন যাবৎ বাসায় বসে আছেন বা কোন কাজ খুঁজে পাচ্ছেন না তারা অনলাইন ব্যবহারের মাধ্যমে নিজের আর্থিক অবস্থার উন্নতি করে জীবনযাত্রায় পরিবর্তিন আনতে পারেন।
আবার অতিরিক্ত বা অনিয়ন্ত্রিত ফেসবুক অনেক সময় মানসিক চাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়,
– ফেসবুকে পরিচিতদের ছবি দেখে নিজেকে হীনমন্য মনে করা।
– সব সময় মনে হওয়া যে আমার জীবন অন্যদের মতো আনন্দদায়ক নয় কেন!
– নিজেকে অন্যদের সাথে তুলনা করা।
– ভুল তথ্যে বিভ্রান্ত হওয়া।
– পরিবার, বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়স্বজন থেকে দূরে সরে যাওয়া।
– অন্যদের বিরূপ মন্তব্যে নিজের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলা।
– অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া।
– সবসময় ফেসবুকে ব্যস্ত থাকার জন্য নিজের প্রয়োজনীয় কাজ করতে দেরি হওয়া।
– নিজের তথ্য ও ব্যক্তিগত কাজকর্ম অপরিচিতরা জানার ফলে নানারকম ঝামেলায় পড়া।
– একদিন ফেসবুক থেকে দূরে থাকলেই অস্থিরতা বোধ করা।
– সামাজিকতা কমে যাওয়া।
– অন্যের তথ্যের উপর ভিত্তি করে পরিচিতজনকে সন্দেহ করা বা ঝগড়া বিবাদে জড়িয়ে পড়া।
– সামনের মানুষটি থেকে ফেসবুকের বন্ধুকে বেশি গুরুত্ব দেয়া এবং দ্রুত ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হওয়া।
– পারিবারিক বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক শিথিল হয়ে যাওয়া।
অতিরিক্ত মানসিক চাপ নিচের সমস্যাগুলো সৃষ্টি করে
– বিষণ্নতা।
– অস্থিরতা।
– নিজেকে হীনমন্য মনে করা।
– চঞ্চলতা বৃদ্ধি পাওয়া।
– অল্পতে ভয় পাওয়া।
– অল্পতে রেগে যাওয়া।
– অহেতুক সন্দেহ করা।
– ঘুম ও খাওয়া দাওয়ায় পরিবর্তন আসা।
কী করণীয়?
– দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় ফেসবুক ব্যবহার করা।
– কারো তথ্যে বিভ্রান্ত না হয়ে তা যাচাই করা।
– পরিবারকে সময় দেয়া ও তাদের নিয়ে ঘুরতে যাওয়া।
– সপ্তাহে একদিন হলেও আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের সাথে সরাসরি দেখা করা।
– ফেসবুকে অতিরিক্ত বন্ধু না পাতিয়ে যাদের আপনি ভালোভাবে চিনেন তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা।
– খেয়াল রাখা যে আপনার ব্যক্তিগত কর্মকান্ড বা পারিবারিক তথ্য অপরিচিতজনেরা যেন না জানতে পারে।
– সবাই কেন এত সুখী বা সফল সেটা নিয়ে সব সময় চিন্তা না করে নিজের কাজকর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকা ও নিজেকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা।
– ফেসবুক-এ পাওয়া দেশ ও দেশের বাইরের নানারকম তথ্য পড়ে তা পরিবারের সবার সাথে সামনাসামনি শেয়ার করা।
– ফেসবুকের তথ্যের সত্যতা যাচাই না করে কখনোই কাউকে সন্দেহ করা বা ঝগড়া বিবাদের জড়িয়ে পড়া উচিত নয়।
– ফেসবুকের অচেনা বন্ধুকে বিশ্বাস করে জীবনের কোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত না নেয়া।
– সব সময় মনে রাখা আমার সামনের মানুষটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ ফেসবুকের অচেনা বন্ধুটির থেকে।
– খেয়াল রাখা শুধুমাত্র ফেসবুকের কাছে যেন পারিবারি বা গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক শিথিল না হয়।
– কোন রকম মানসিক চাপ বা সমস্যা অনুভব করলে সরাসরি মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে দেখা করা।
সবশেষে মনে রাখতে হবে ফেসবুক যেন কোনভাবেই আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে। ফেসবুকের উপর নিয়ন্ত্রণ অবশ্যই আমাদের হাতে থাকতে হবে। ফেসবুক কখনোই সামাজিক যোগাযোগের বিকল্প মাধ্যম হতে পারে না। আমাদের যথাযথ ফেসবুক ব্যবহারেই নির্ভর করবে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যে উন্নতি বা অবনতি।
প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না কর্তৃপক্ষ।