প্রবীণদের মানসিক সমস্যা এবং করনীয়  

0
167

বিশ্বের সকল দেশেই ৬০ বছরের বেশী বয়সের ব্যক্তিদের সিনিয়র সিটিজেন বা প্রবীণ ব্যক্তি বলা হয়ে থাকে। একজন প্রবীণ ব্যক্তি একটি পরিবারের নিকট  ছাতার মতো। তাঁর অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান পরিবারকে অনেক সাহায্য করে। বর্তমান বিশ্বে ৬৫ বছরের ওপরের ব্যক্তিদের সংখ্যা বাড়ছে। উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে প্রায় ১৪ শতাংশ এবং মধ্য ও নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে প্রায় ৪ শতাংশ মানুষ এই জনগোস্টির অন্তর্ভুক্ত।

উচ্চ আয় এবং মধ্য ও নিম্ন আয়ের দেশগুলোর মধ্যে জন্মহার ও গড় আয়ুর বৈষম্যের কারণে বৃদ্ধ মানুষের অনুপাতের এই ভিন্চিত্র। বাংলাদেশে বর্তমান প্রবীণ জনসংখ্যা প্রায় দেড় কোটি, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮%। মানুষের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে মস্তিষ্কের আয়তন কমতে থাকে, ৩০ হতে ৭০ বছর পর্যন্ত এই আয়তন প্রায় ৫%, ৮০ বছর পর্যন্ত আরও ৫% এবং ৯০ বছর পর্যন্ত আরও ১০-২০% কমে যায়। এই আয়তন কমার পরিমান সবচেয়ে বেশী হয় হিপোক্যাম্পাস, ফ্রন্টাল কর্টেক্স এবং ছেরিবেলামে। মস্তিষ্কের কোষের সংখ্যা কমতে থাকে, রঞ্জক পদার্থ জমে ও কোষের বিভিন্নরকম পরিবর্তনের ফলে কোষ নষ্ট হয়ে যায় এবং কোষের কার্যকারিতা কমে যায়।

বৃদ্ধবয়সে স্নায়ুতন্ত্রের সংবেদনশীলতা কমে যায়, বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের কার্যকারিতা কমে যায়, নতুন তথ্য মনে রাখতে সমস্যা হয়, কর্মক্ষমতা কমে যায়, ব্যক্তিত্বে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। সামাজিক ক্ষেত্রেও অনেক পরিবর্তন আসে- কর্ম / চাকুরি হতে অবসর গ্রহনের ফলে রোজগার কমে যায়, পদমর্যাদা হারায়, জনগণের সাথে যোগাযোগ কমে যাওয়ার ফলে অনেকটা একাকী হয়ে পড়ে, অবসর সময় বেড়ে যায়।

এসব কারণে প্রবীণরা বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় ভুগে থাকেন। তাদের ঘন ঘন চিকিৎসকের কাছে নিতে হয়, বেশী বেশী হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন পড়ে এবং প্রবীণদের হাসপাতালে ভর্তির হার মোট শয্যা সংখার প্রায় ৫০ শতাংশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী  প্রায় ১৫% প্রবীণ বিভিন্ন প্রকার মানসিক সমস্যায় ভুগে থাকেন এবং তার মধ্যে ডিপ্রেশনই ১৫%-২০%। তবে প্রবীণদের মানসিক সমস্যাকে বেশির ভাগ মানুষ বুঝতে পারে না, এবং বুঝতে না পারার কারণে তারা প্রবীণদের আরও বেশী কষ্ট দিয়ে ফেলেন এবং নিজেরাও ভোগান্তিতে পড়েন।

আবার কেউ কেউ বুঝতে পারলেও বয়স্কদের সমস্যাকে গুরুত্ব দিতে চান না। ফলে প্রবীণদের মানসিক সমস্যাগুলো আরো বাড়তে থাকে। একটি ফরাসি গবেষণায় দেখা গেছে ৬৫ বছরের উপরের বয়স্কদের মধ্যে ১৪% উদবিগ্নতাজনিত রোগে, ১১% ফোবিয়াতে, ৩% বিষণ্ণতায়, এবং ১.৭% সাইকোসিসে ভুগে থাকেন। ইংল্যান্ডের একটি গবেষণায় ১১.৩% বয়স্কদের মধ্যে মৃদু হতে তীব্রমাত্রার ডিমেনসিয়া বা স্মৃতিভ্রুমজনিত সমস্যা এবং ১১.৫% বয়স্কদের মধ্যে নিউরোসিস ও ব্যক্তিত্বের সমস্যা পাওয়া যায়।

ডিমেনসিয়া   

সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে বিশ্বে ষাটোর্ধ ব্যক্তিদের ৫-৭% ডিমেনসিয়ায় ভুগে থাকেন এবং এটি প্রতি ২০ বছরে প্রায় দিগুণ হচ্ছে। ২০৫০ সালের মধ্যে মোট ডিমেনসিয়ার রোগীদের প্রায় ৭০% মধ্য ও নিম্ন আয়ের জনগোস্টি হবে বলে ধারনা করা হয়। ডিমেনসিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি চেতনা হারায় না, তবে তার স্মৃতিশক্তি কমে যায় ও ব্যক্তিত্বে ব্যাপক পরিবর্তনের ফলে আচরণগত সমস্যা হয়।

অনেক আগের সবস্মৃতি মনে থাকলেও কিছুক্ষন আগের ঘটনা মনে করতে পারে না। এর ফলে পরিবারের লোকজন মনে করে যে ব্যক্তিটি হয়ত ইচ্ছা করেই  এসব করছেন, তাই এটা কোন সমস্যা নাই। ডিমেনসিয়ায় ব্যক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কমে যায়, তাঁর চিন্তা ও কথার মধ্যে কখনও কিছু অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হয়। তার মনোযোগ দেওয়ার ক্ষমতা কমে যায়, নুতন করে কোন কিছু শিক্ষালাভ করা তার জন্য কষ্টকর হয়ে পড়ে।

সে নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়াতে পারে না, ধীরে ধীরে তার মধ্যে সময়, স্থান ও ব্যক্তিকে চিহ্নিত করার ক্ষমতা হ্রাস পায়। বৃদ্ধ বয়সে শরীরের অন্যান্য কোষের মতো মস্তিষ্কের কোষেরও ক্ষয় হতে শুরু করে। মস্তিষ্কের কোষে বিভিন্ন বর্জ্য জমে ধীরে ধীরে তা নষ্ট হয়ে যায়।

এর ফলেই ডিমেনসিয়া হয়। মস্তিষ্কের ক্ষয়জনিত রোগের মধ্যে আলঝেইমার রোগে সবচেয়ে বেশী ডিমেনসিয়া হয় যা মোট ডিমেনসিয়া রোগীর ৬০ শতাংশ। এছাড়া অন্যান্য মস্তিষ্কের ক্ষয়জনিত রোগ, স্ট্রোক, মস্তিস্কে প্রদাহজনিত সমস্যা, আঘাতজনিত সমস্যা, ক্যান্সার ও রেডিয়েশন, অক্সিজেন ও ভিটামিনের অভাব, এলকোহল ও বিষাক্ত পদার্থের প্রভাব, বিপাক ও হরমোনজনিত রোগ ইত্যাদির কারনেও  ডিমেনসিয়া হতে পারে।

ডিমেনসিয়া রোগীকে সহায়তা করতে হলে পরিবারের মানুষকে ডিমেনসিয়ার লক্ষণ, কারণ ও প্রতিকারের বিষয়ে সচেতন করতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে সুষম খাবার দিতে হবে। সুষম খাবার ডিমেনসিয়া প্রতিরোধে ভুমিকা রাখে। ভুলে যাওয়া সমস্যা দূর করতে  দেয়ালে বড় লেখাসম্বলিত ক্যালেন্ডার ও অ্যালার্ম সম্বলিত বড় নির্দেশক দেয়াল ঘড়ি রাখতে হবে। তারা তাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো ডায়েরিতে, বোর্ডে,ট্যাবে বা মোবাইল ফোন লিখে রাখবে যাতে পড়ে ভুলে না যায় এবং এব্যাপারে অন্যরা তাদেরকে সাহায্য করতে হবে।

তাদের পরিচর্যাকারী যেন ঘন ঘন পরিবর্তন না হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে, কেউ প্রয়োজনে কোথাও গেলে অন্যকে তার স্থলে দরকারি নির্দেশনা দিয়ে যাবে।  শরীরকে সচল রাখতে হালকা ব্যায়াম বা হাঁটাচলা ও পরিমিত ঘুমের ব্যবস্থা করা এবং তাদেরকে বেশি বেশী সময় দেওয়ার মাধ্যমে একাকীত্ব দূর করতে হবে। তাদের আশেপাশের অন্য প্রবীণদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগের সুযোগ করে দিতে হবে, ফলে তাদের সাথে গল্প করে বা কুশলাদি বিনিময়ের মাধ্যমে তার একাকীত্ব দূর হবে এবং সে মানসিকভাবে সক্রিয় থাকতে পারবে।

কোন আচরণগত মানসিক বা শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তাছাড়া ডিমেনসিয়া প্রতিরোধে কিছু ওষুধ আছে সেগুলো ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। কখন কোন ওষুধ খাওয়ানো হচ্ছে তা ডায়েরিতে লিখে রাখতে হবে।

আবেগের সমস্যাজনিত রোগ

পূর্বের কখনও মানিক এপিসোড হয়নি এমন বয়স্কদের নতুন করে ম্যানিক এপিসোড খুবই কম হয়, যদি কখনও হয় সেটা অরগানিক কারণে হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী, তবে বিষণ্ণতার হার অনেক বেশী। প্রায় ৭ শতাংশ প্রবীণ ব্যক্তিরা বিষণ্ণতায় ভুগে থাকেন। দেখা গেছে ৫৫ বছরের বেশী প্রবীণদের মধ্যে ৯.৮% মৃদু এবং ১,৮% তীব্র বিষণ্ণতায় ভুগে থাকেন।

শারীরিক রোগ বা অক্ষমতা,  একাকিত্ম,আয় না থাকা, অন্যর উপর নির্ভরশীলতা, পারিবারিক সমস্যা, অতীত জীবনের লাভক্ষতির হিসাব এবং অপ্রাপ্তির অপূর্ণতার কারণেই প্রবীণ ব্যক্তিরা বিষণ্ণতায় বেশি ভুগে থাকেন। প্রবীণদের বিষণ্ণতার উপসর্গগুলো অন্য বয়সী মানুষদের মতোই হয়।

সারাক্ষন মন খারাপ থাকা, পূর্বের ভালো লাগতো এমন কাজে আগ্রহ না পাওয়া,অল্পতেই ক্লান্তিবোধ, ঘুমের সমস্যা, ক্ষুধামন্দা ও ওজন কমে যাওয়া, অন্যদের সঙ্গ এড়িয়ে একাকী থাকতে চাওয়া,নিজেকে অসহায় ভাবতে থাকা, খিটখিটে মেজাজ, ঠুনকো কারনেই হঠাৎ রেগে যাওয়া,নিজের যত্ন না নেওয়া, হতাশামূলক কথা বলা,ভুলে যাওয়া, অপরাধবোধে ভোগা এবং এর থেকে মুক্তি পেতে মৃত্যু বা আত্মহত্যার কথা চিন্তা করা ইত্যাদি।

অল্প বিষণ্ণতা সাইকোথেরাপীর মাধ্যমে চিকিৎসা করা যায়। এক্ষেত্রে বিষণ্ণতার জন্য দায়ী কারণসমূহ চিহ্নিত করে সেগুলো নিয়ে কাজ করা হয়। তবে মাঝারি হতে তীব্র বিষন্নতায় রোগীর মনোযোগ ও আগ্রহ এতোটাই কমে এতোটাই কমে যায় যে তার আর সাইকোথেরাপী নেওয়ার আগ্রহ থাকে না। আত্মবিশ্বাস প্রচণ্ড পরিমানে কমে যায়।

যে ভাবতে থাকে তার জন্য আর কোন কিছু করা সম্ভব নয় বা বেঁচে থাকার আশা নষ্ট হয়ে যায় তখন শুধু সাইকোথেরাপী যথেষ্ট নয়। সেক্ষেত্রে অবশ্যই রোগীকে ওষুধ খেতে হবে, পাশাপাশি সাইকোথেরাপিও নিতে হবে। তার একাকীত্বতা দূর করতে তাকে পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে, টিভি দেখা, জ্ঞান শোনা, বই পড়াসহ বিভিন্ন চিত্তবিনোদনমূলক কাজে সময় কাটাতে পারেন, নিয়মিত ব্যায়াম করে শরীরকে সচল রাখবেন, সমবয়সীদের সাথে মেলামেশা করবে, বিভিন্ন সামাজিক কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখলেও তার বিষণ্ণতা থেকে দূরে থাতে সুবিধা হবে।

উদ্বিগ্নতা বা দুঃচিন্তা

৫৫ ঊর্ধ্ব ব্যক্তিদের মধ্যে নতুন করে উদ্বিগ্নতায় ভোগার হার কম তবে দীর্ঘস্থায়ী উদ্বিগ্নতা বা পূর্বের উদ্বিগ্নতা নতুন করে বেড়ে যাওয়ার হার বেশী। উপসর্গগুলোর মধ্যে বিষণ্ণতা ও উদ্বিগ্নতার মিশ্র উপসর্গ আকারে থাকতে পারে। শারীরিক সমস্যা নিয়ে বয়স্করা বেশী উদ্বিগ্ন থাকে।

নিজের মৃত্যুচিন্তা, প্রিয়জনের মৃত্যু, সন্তানদের থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে, আয় রোজগার না থাকা, চাকুরি বা কর্ম হতে অবসর, কর্মক্ষমতা কমে যাওয়া, হঠাৎ করে সহকর্মীদের সাথে যোগাযোগ হারিয়ে নতুন করে নিজেকে খাপ খাওয়ানো, অন্যের উপর নির্ভরশীলতা তার উদবিগ্নতাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। কখনও উদ্বিগ্নতার সাথে ব্যক্তিত্বের সমস্যা, ডিমেনসিয়া, প্যানিক বা অন্য কোন শারীরিক সমস্যা একত্রে থাকতে পারে।

প্রবীণরা একটু বেশী অভিমানী হয়, তারা নিজে থেকে তাদের কষ্টের কথা অন্যকে বলতে চায়না। তাই পরিবারের লোকদের উচিত নিজ থেকে তাদের খোজ নেওয়া,  সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া। তাদের অভয় দিতে হবে যে যেকোন প্রয়োজনে আমরা তাদের পাশে আছি। চিকিৎসার দরকার হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

সিজোফ্রেনিয়ার মতো উপসর্গ-

সিজোফ্রেনিয়া সাধারণত অল্প বয়সে শুরু হয়, আগে কখনও ছিলনা এমন ব্যক্তিদের ৬০ বছরের বেশী বয়সে সিজোফ্রেনিয়ার হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে বৃদ্ধ বয়সের সিজোফ্রেনিয়ার উপসর্গসমূহ প্রায়ই অল্প বয়সের সিজোফ্রেনিয়ার মতো হয়ে থাকে।

উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্টসমূহ- সন্দেহপ্রবণতা, ভিজুয়াল সোমাটিক, আডিটরী হ্যালুসিনেশন বা অলীক প্রত্যক্ষন, চিন্তার সমস্যা, অনুভূতিহীন হয়ে পড়া, সবকিছু হতে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া ইত্যাদি। এধরনের সমস্যা সাধারণত মেয়েদের বেশী হয়। দেরিতে শুরু হওয়া সিজফ্রেনিয়াতে জেনেটিক প্রভাব কম থাকে, তবে মস্তিষ্কের ক্ষয়জনিত রোগ, স্ট্রোক পরবর্তী অবস্থায় এবং যাদের সিজয়েড ও প্যারানয়েড পারসোনালিটির বৈশিষ্ট থাকে তাদের পরবর্তীতে সিজোফ্রেনিয়া হওয়ার ঝুকি বেশী থাকে।

এধরনের সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে। চিকিৎসা অল্প ডোজে এন্টিসাইকিটিক ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কোন শারীরিক কারণে হয়ে থাকলে তা নির্ণয় করে তাড়াতাড়ি চিকিৎসা করতে হবে এবং মনোসামাজিক কারণ থাকলে তা খুজে বের করে তার সমাধান করতে হবে।

প্রবীণদের অন্যান্য মানসিক সমস্যার মধ্যে-

সিনাইল স্কোয়ালর সিন্ড্রোম

এই রোগের অন্য নাম ডাইজিনস সিনড্রোম। এটা খুবই কম পাওয়া যায়। এই রোগে নিজের, পরিবারের প্রচণ্ড অযত্ন অবহেলা থাকে, ময়লা আবর্জনা জমিয়ে রাখে, নিজেকে ধীরে ধীরে গুটিয়ে নেয় এবং একা হয়ে পড়ে। এরা একগুয়ে আচরণ করে এবং কারও সাহায্য নিতে চায় না। কোন মানসিক চাপ এধরনের সমস্যাকে আরও জতিল করে তুলতে পারে।

চার্লস বোনেট সিনড্রোম

এদের ভিজুয়াল হেলুসিনেশন বা কোন জিনিসের অনুপস্থিতিতে সেটা দেখতে পায়। তবে তাদের কোন সাইকসিস, ডিমেনসিয়া বা ডিলিরিয়ামের উপসর্গ থাকেনা। এটি বয়স্ক অন্ধলোকের মাঝে বেশী পাওয়া যায় যা প্রায় ১০-১৫%। ধারনা করা হয় মস্তিষ্কের সে অংশ দেখার অনুভুতি তৈরি করে তা নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে এমনটি হয়ে থাকে।

পরিশেষে বলতে চায় প্রবীণ বয়োজ্যেষ্ঠরা আমাদের অভিভাবক, আমাদের পরিবারেরই অংশ। আমাদের নৈতিক দায়িত্ব হল পরিবারের অন্যান্য সদস্যের মতোই তাদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ  আচার আচরণ করা, মমতা দিয়ে শিশুদের ন্যায় প্রতিপালন করা। এমন আচরণ কোনক্রমেই করা উচিত নয় যাতে তারা মনে করতে পারে  যে তারা আমাদের জন্য বোঝা।

প্রবীণদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব কর্তব্য সম্পর্কে আরও বেশী সচেতন হতে প্রতিবছর পহেলা অক্টোবর আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস হিসাবে পালিত হয়ে থাকে।  প্রবীণ বা বয়স্ক ব্যক্তিরা দ্বিতীয় শিশু, পরিবার ও সমাজের কাছে সন্মানিত ব্যক্তি। ভুলে গেলে চলবে না, যে  আজ যারা প্রবীণ তারাও অতীতে তার পরিবার, সমাজ, দেশ ও জাতির কল্যাণে অনেক মহৎকর্ম করে গেছেন।

অনেক পরিবার ও সমজে প্রবীণরা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়, অবহেলিত থাকে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রান পেতে সবাইকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আশ্রয়হীন প্রবীণদের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে বৃদ্ধনিবাসের ব্যবস্থা করতে হবে। অসচ্ছল প্রবীণদের জন্য সরকারীভাবে বয়স্কভাতা ও স্বল্পব্যয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে এবং সর্বোপরি সকল প্রবীণদের জন্য বুদ্ধিবৃত্তিক সৃজনশীল কর্মকাণ্ড ও সুস্থ  বিনোদনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

তাহলেই ভালো থাকবে আমাদের প্রবীণরা, তাদের জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হব আমরা, গড়ে উঠবে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে 

“মনের খবর” ম্যাগাজিন পেতে কল করুন ০১৮ ৬৫ ৪৬ ৬৫ ৯৪

 

Previous articleঅটিজম সচেতনতা দিবস উপলক্ষে বিএসএমএইউ’র গোলটেবিল বৈঠক কাল
Next articleঅটিজম সচেতনতা নিয়ে বিএসএমএইউ মনোরোগবিদ্যা বিভাগের গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here