প্রকৃতির সান্নিধ্য শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে

প্রকৃতির সান্নিধ্য শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে

লেখক রিচার্ডলো বলেন “বর্তমানে শিশুদের মধ্যে মানসিক সমস্যার লক্ষণ বেশি দেখা দিচ্ছে, তারা বর্তমানে মনযোগ জনিত সমস্যা, বিষন্নতায় অথবা তাদের যেকোন ধরণের মানসিক সমস্যায় হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ছে। এবং এজন্য তাদের চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এবং এই পর্যন্ত মানবজন্মের পর মানসিক সমস্যার জন্য যে পরিমাণ ডাক্তার এর পরামর্শ নিতে হয়েছে তার চেয়ে বেশি পরামর্শ এবং চিকিৎসা নিতে হবে”।
লো যিনি ‘চিল্ড্রেন এন্ড ন্যাচার নেটওয়ার্ক’ আন্তর্জাতিক কনফারেন্স এর প্রধান বক্তা বলেন, “মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, শৈশব স্থুলতা এবং এমনকি অনলাইন হয়রানি এসব সমস্যা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে, কেননা শিশুদের প্রকৃতির সাথে সময় কাটাতে দেয়া হয় না বা সময় কাটানোর সুযোগ তারা পায় না। তারা বাহিরে খেলাধুলা করতে পারে না, নগরের সবুজ তারা দেখতে পায় না”। কনফারেন্স টি ভ্যানকুভারে এপ্রিলের ১৮ থেকে ২১ তারিখ পর্যন্ত তিন দিন ব্যাপী ছিল।
৩০ বছর আগে পরিবেশ এবং প্রকৃতির শিশুদের উপর যে প্রভাব তার উপর কোন ভাল ফলদানকারী পড়াশুনা ছিল না। বর্তমানে ৫০০ এর বেশি বই রয়েছে যার উপসংহার দর্শনীয়ভাবে মানুষকে সাহায্য করতে পারে। গবেষণায় আগেই দেখানো হয়েছে শিশুদের প্রকৃতি থেকে বঞ্চিত করা আর তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির মধ্যে কেমন সম্পর্ক রয়েছে। আবার গবেষণায় এটিও দেখা গেছে যে শিশুদের যখন প্রকৃতির সাথে সমস্য কাটাতে দেয়া হল তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটেছে। সংক্ষেপে প্রকৃতির প্রভাব রয়েছে।
লো ২২ টি দেশের ৮৫০ জন প্রতিনিধির সাথে কাজ করবেন যারা অনেকেই ওয়ার্কশপে বক্তা হিসেবে থাকবেন আবার অনেকেই শিখতে এসেছেন। ওয়ার্কশপটি ওয়েস্টিন বেশোর এ হচ্ছে যার আয়োজন করেছেন ‘চিল্ড্রেন এন্ড ন্যাচার নেটওয়ার্ক’ এবং ‘কানাডিয়ান ওয়াইল্ডলাইফ ফেডারেশন’।
ইলিনিয়স বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, ঘরের বাহিরে খেলাধুলা করা, প্রকৃতির সাথে খেলাধুলা করা এটেনশন ডিসর্ডার এর লক্ষণ কমাতে সাহায্য করে থাকে। আর আবহাওয়া ও পরিবেশ যত বেশি সবুজ ও বন্য হবে শিশুদের উপর এর প্রভাব তত বেশি পড়বে।
লো বলেন, “আমরা জিনগত ভাবে প্রকৃতির সাথে সংযুক্ত। মানুষের অস্তিত্বের সাথে খুব ওতপ্রোতভাবে জড়িত কিছু যদি আপনি হারিয়ে ফেলেন তাহলে অবশ্যই আপনার স্বাভাবিক জীবন যাপনে ব্যাঘাত ঘটবে। আর প্রকৃতি আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত”।
তিনি বলেন, “আমি সকল স্কুল শিক্ষকদের কাছে একই কথা শুনতে পাই যে তারা যখন শিশুদের গাছগাছালি অথবা প্রকৃতির কাছে নিয়ে যান তখন খুব দুষ্ট এবং বেহায়া ছাত্রটির মধ্যেও নেতৃত্বসুলভ আচরণ দেখা যায়। সে শুধুমাত্র ভদ্র হয়ে উঠে না, তার মধ্যে নেতৃত্ব দেয়ার মত গুণ ও দেখা যায়। যদি বাহিরে নিয়ে গেলে সমস্যা সৃষ্টিকারী শিশুটির মধ্যে নেতৃত্ব দেয়ার মত গুণ ফুটে উঠে তাহলে আমরা এসব শিশুদের ঘরের ভেতর বন্দি রেখে কি করছি?”
৯০০ স্কুলের অংশগ্রহণ করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে যেসব স্কুলে সবুজ অর্থাৎ খোলা মাঠে খেলার সুযোগ রয়েছে তাদের যেকোন পরীক্ষার ফলাফল যেসব স্কুলে খোলা মাঠ অথবা প্রকৃতির সাথে খেলার সুযোগ নেই তাদের চেয়ে ভালো।
লো বলেন, “আমি জানি সকল পরিবারের পক্ষে একটি গ্রামীন জীবন বাছাই করে নেয়া কোনভাবেই সম্ভব নয়। তবে অনেক পরিবার তাদের সন্তানের ভালোর জন্য সবুজ প্রকৃতিরসাথে যেন তাদের সন্তান আরো বেশি সময় কাটাতে পারে সেদিকে খেয়াল দিচ্ছেন।  আমাদের খুব সচেতনভাবে কাজটি করতে হবে যেন শিশুটি বুঝতে না পারে যে কাজটি তার মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য করা হচ্ছে”।
লো বলেন, “বাচ্চারা যখন তাদের বাবা মায়ের সাথে কোথায় যায় আতারা বাসায় ফিরে তাদের নানা ইলেকট্রনিক্স জিনিসপত্রের সাথে খেলার জন্য ব্যস্ত হয়ে পরে। তারা বেশিক্ষণ বাহিরে থাকতে চায় না। কিন্তু বাচ্চারা যখন অন্য বাচ্চাদের সাথে বাহিরে যায় তখন তারা সৃজনশীল হয়ে উঠে এবং নিজেরাই নানা ধরণের খেলাধুলার সৃষ্টি করে। নিজেরা খেলা বানায় নিজেরাই নিয়ম তৈরি করে থাকে। বর্তমানে শহুরে শিশুদের মধ্যে এই গুণটি একদমই দেখা যায় না”।
তথ্যসূত্র-
(http://vancouversun.com/health/local-health/kids-need-access-to-nature-for-mental-health)
রুবাইয়াত মুরসালিন, আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মনেরখবর.কম

No posts to display

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here