পিটিএসডি: অতীতের পীড়ায় বর্তমানে মানসিক আঘাত

পিটিএসডি কোন মানসিক রোগ নয় বরং অতীতের পীড়ায় বর্তমানে মানসিক আঘাত

অনেক সময়ই জীবনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন দুর্ঘটনা আমাদের মনে এত গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে যে দুর্ঘটনা থেকে মুক্তি পাবার বহুদিন পরেও সেই স্মৃতি আমাদের তাড়া করে ফেরে।

আর এই স্মৃতি আমাদের মাঝে ভয় ভীতি, মানসিক চাপসহ নানা ধরণের মানসিক জটিলতা সৃষ্টি করে।

যাকে মনোবিজ্ঞান অনুসারে পিটিএসডি বা পোস্ট ট্রম্যাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার বলা যায়। পিটিএসডি বিভিন্ন ভাবে দুর্ঘটনা পরবর্তী সময়ে আমাদের মাঝে বিভিন্ন মানসিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এ ধরণের সমস্যা গুলো আমাদের স্বাভাবিক জীবন যাত্রাকে চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

তাই সুস্থ জীবন যাপনের স্বার্থে এই সমস্যা গুলোকে দূর করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক। আর এই লক্ষ্যে পিটিএসডি সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখা সবার জন্য জরুরী।

অনেক সময় দেখা যায়, কোন বড় রোগ থেকে সুস্থ হয়ে বা কোন বিপদ বা দুর্ঘটনা থেকে মুক্তি পাবার পরে একজন ব্যক্তি বেশ চুপচাপ হয়ে গেছে। সে হয়তো অন্যদের সাথে আগের মতো করে মিশছে না, কথা বলছে না কিংবা বিভিন্ন কাজের অজুহাত দেখিয়ে সামাজিক মেলামেশা এড়িয়ে চলছে।

আবার অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় রাতে হয়তো ভালো ঘুম আসছে না কিংবা ঘুমালেই বিভিন্ন দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙ্গে যাচ্ছে। এছাড়াও বিষণ্ণতায় ভোগা, অকারণে রেগে যাওয়া কিংবা সচরাচর ভয় না পাওয়া পরিবেশ বা বস্তুকে ভয় পাওয়া- এ ধরণের বিভিন্ন সমস্যা হলে আমরা সেটিকে পিটিএসডি এর লক্ষণ হিসেবে ধরে নিতে পারি।

এ ধরণের মানসিক সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিদের মধ্য থেকে যদি এ সমস্যা দূর করা না যায়, তাহলে তারা কখনোই স্বাভাবিক জীবনে সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার সুখ পায় না। জীবনে কোন সমস্যা না থাকা স্বত্বে এবং তারা কোন প্রকার রোগে না ভোগা স্বত্বেও কিছু চিন্তা-ভাবনা এবং ভীতির কারণে মানসিক ভাবে কষ্ট পেতে থাকে।

পিটিএসডিতে ভোগা ব্যক্তিদের তাই মানসিক রোগী হিসেবে বিবেচনা করে তাদের প্রতি সহমর্মী হতে হবে এবং উক্ত ভয় থেকে তাদের মুক্তি প্রদান করতে হবে।

পিটিএসডিতে ভোগা একজন ব্যক্তি যখন নিজেকে গুটিয়ে রাখার প্রয়াস করে তখন তাকে এটির জন্য দোষারোপ না করে বা এটিকে তার কোন মানসিক রোগ হিসেবে না দেখিয়ে বরং এটা বোঝাতে হবে যে, একাকীত্ব কোন সমস্যার সমাধান নয়।

তাকে তার মনের দ্বিধা কাটানোর জন্য তার কাছের মানুষদেরকে তার মনের মাঝে থাকা ভয় এবং সমস্যার কথা খুলে বলতে আগ্রহী করে তুলতে হবে। এ ধরণের প্রয়াস তাদের ধীরে ধীরে সহজ জীবন যাপনে উৎসাহিত ও আগ্রহী করে তুলবে।

তাছাড়া সামাজিক মেলামেশা সব সময় আমাদের মনোবল বাড়াতে সহায়তা করে। তাই ভুক্তভোগী ব্যক্তিকে সামাজিক মেলামেশায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

যে পরিস্থিতি বা পরিবেশে অন্য আর দশটা মানুষ একদম স্বাভাবিক আচরণ করে বা এক সময় ঐ ব্যক্তিও করত, দেখা যায় দুর্ঘটনার পর হয়তো সেই ব্যক্তি ঐ পরিবেশে ঠিক স্বাভাবিক আচরণ করতে পারছে না। তার মাঝে হয়তো অসুরক্ষা বা ভয়ের অনুভূতি সৃষ্টি হচ্ছে। তাকে এজন্য দোষারোপ না করে বরং অতীতের অবস্থা বিবেচনা করে ধীরে ধীরে এই অবস্থা থেকে বের করে আনার প্রয়াস করতে হবে।

পিটিএসডি এর মতো মানসিক আঘাত জনিত মানসিক সমস্যা গুলোকে না লুকিয়ে বরং কাছের মানুষদের কাছে সঠিকভাবে সমস্যাগুলোকে তুলে ধরা। একই সাথে তার কাছের ব্যক্তিদের উচিৎ তার এই সমস্যা গুলোকে পূর্বের দুর্ঘটনার ফলে সৃষ্টি হওয়া মানসিক আঘাত হিসেবে বিবেচনা করা এবং সেভাবে তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার প্রয়াস করা।

লিংক: https://www.psychologytoday.com/intl/blog/mental-injury-is-not-mental-illness/202108/is-busy-four-letter-word

অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

Previous articleশিশুদের জন্য নিরাপদ ও অনাকাঙ্খিত স্পর্শ
Next articleযৌনচিন্তা বারবার আসা যৌক্তিক নাকি অযৌক্তিক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here