দাম্পত্য সম্পর্ক মজবুত করবেন যেভাবে

0
104
দাম্পত্য সম্পর্কের ওপর মানসিক অবসাদ বা বিষণ্ণতার প্রভাব
অনেকেই  গুরুত্ব দেওয়ার আতিশয্যে সম্পর্ককে অত্যন্ত জটিল রূপ প্রদান করে ফেলেন। এতে ধীরে ধীরে সম্পর্কে চিড় ধরে এবং এক সময় সেটি বিবাহ বিচ্ছেদে রূপ নেয়। কিন্তু সত্য এটাই যে, সম্পর্ককে যত সহজভাবে স্বীকার করে নেওয়া যাবে, তার স্থায়িত্ব ততোটাই বেশী হবে।

আচ্ছা একবার ভাবুন তো, আমাদের জীবনে খুব কাছের বন্ধুদের সাথে আমাদের সম্পর্ক আজীবন থাকে এবং আমরা বেশ সহজভাবেই এই সম্পর্ককে ধরে রাখতে পারি। কিন্তু, বৈবাহিক সম্পর্ক নিয়ে আমাদের মনোভাব এতো জটিল কেন? কেন এই সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখতে বা স্থায়িত্ব প্রদান করতে আমাদের এতোটা ভাবতে হয়? এর উত্তর বেশ সহজ। বন্ধুত্ব এবং অন্যান্য সম্পর্কে আমরা আমাদের মানসিক প্রশান্তিকে বেশী গুরুত্ব দেই। আর বৈবাহিক সম্পর্কে গুরুত্ব দেই নিজেদের অহমকে। দৈনন্দিন জীবনে একে অপরের পাশে থেকে সহমর্মিতার বদলে আমরা নিজেদের অহম বোধকে বেশী গুরুত্ব দিয়ে ফেলি। আর এসব কারণেই সম্পর্কে ভাঙ্গন ধরে। অনেক স্বপ্ন এবং আশা নিয়ে সারা জীবন ধরে একসাথে থাকার লক্ষ্যে যে সম্পর্কে আবদ্ধ হয় দুজন মানুষ, সে সম্পর্ক অনেক কম সময়েই শেষ হয়ে যায়। তাই সম্পর্ককে দীর্ঘস্থায়ী রূপ দিতে আমাদের কিছু কিছু বিষয়ে অবশ্যই মনযোগী হতে যাবে যা আমাদের এই গতানুগতিক মনোভাবে পরিবর্তন নিয়ে আসবে এবং সুন্দর একটি সম্পর্ক আজীবন ধরে রাখতে সহায়তা করবে।

সম্পর্ক সুন্দর এবং সম্পর্কে একে অপরের প্রতি আস্থাপূর্ণ মনোভাব বজায় রাখতে হলে উভয়কেই সৎ এবং নিষ্ঠাবান হওয়া জরুরী। তাছাড়া সব সময় এমন প্রচেষ্টা করা উচিৎ যা উভয়ের মনে ভালবাসার সঞ্চার করবে। আধুনিক যুগে আমাদের দৈনন্দিন জীবন অত্যন্ত ব্যস্ত এবং এই ব্যস্ততার মাঝে একে অপরকে সময় দেওয়ার সুযোগ অনেকটাই কমে এসেছে। সময়ের এই অভাব অনেকের মাঝেই যথেষ্ট পরিমাণ বোঝাপড়ার অভাব তৈরি করে এবং ধীরে ধীরে দুজনার মাঝে দূরত্ব বৃদ্ধি করে। তাই সর্বদা একে অপরকে সময় দেওয়ার প্রচেষ্টা করাও একটি সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তোলার এবং বজায় রাখার জন্য জরুরী। অবশ্যই ব্যস্ততা থাকবে, কিন্তু তার মধ্যে আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন গুলোকেও বাঁচিয়ে রাখতে হবে। একে অপরের মনোভাব বোঝার প্রয়াস করতে হবে। এক্ষেত্রে মাঝে মধ্যে কোথাও বেড়াতে যেতে পারেন। মাঝে মাঝেই একসাথে কোন আনন্দদায়ক কাজ যেমন, মুভি দেখা, রান্না করা, শরীরচর্চা করা ইত্যাদি কাজ করতে পারেন। একসাথে সময় কাটালে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া বাড়ে এবং এক্ষেত্রে বৈবাহিক জীবনের অনেক সমস্যার সমাধান একসাথে করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। এতে করে বিভিন্ন সময়ে সৃষ্টি হওয়া সমস্যাগুলো কখনোই সম্পর্কে কোন প্রকার দূরত্ব সৃষ্টি করার সুযোগ পায়না।

একে অপরের ইচ্ছা অনিচ্ছাকে সম্মান করা সম্পর্কের একটি বড় দিক। দুজন মানুষ ভালোলাগা মন্দ লাগা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মিলবেনা এবং এটাই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে নিজের মতকে প্রাধান্য না দিয়ে আগে দুজনার মতের সম্মিলন করার প্রচেষ্টা করুন। একে অপরের ইচ্ছা বা আগ্রহকে বোঝার চেষ্টা করুন এবং নিজেদের অহমকে গুরুত্ব না দিয়ে সম্পর্কের হিতকে অধিক গুরুত্ব প্রদান করেই সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন। এক্ষেত্রে নিজেদের মধ্যে সদ্ভাব এবং যে কোন সমস্যায় আলোচনা সাপেক্ষে সমাধান সব থেকে বেশী জরুরী। যে কোন সমস্যায় একে অপরকে দোষারোপ না করে সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে দুজন একসাথে কাজ করা প্রয়োজন।

সম্পর্কের মাঝে উত্থান পতন থাকবেই। কিন্তু কঠিন সময়েও যদি ধৈর্য ধারণ করে নিজেদের মধ্যাকার সদ্ভাব এবং ভালবাসাকেই বেশী গুরুত্ব দেওয়া যায় তাহলে সম্পর্ক কখনোই সামান্য সমস্যায় টলে যাবেনা। তাই নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া বাড়াতে হবে। সম্পর্ককে তিক্ত হয়ে ওঠা থেকে রক্ষা করতে হবে। একে অপরের স্বামী বা স্ত্রী হয়ে ওঠার আগে ভালো বন্ধু হয়ে উঠতে হবে যেন সম্পর্কের মাঝে যথেষ্ট পরিমাণ নমনীয়তা বজায় থাকে। একটি দীর্ঘস্থায়ী সুন্দর সম্পর্কে একে অপরের প্রতি সদ্ভাব, শ্রদ্ধা, ভালবাসা থাকা যেমন জরুরী তেমনি মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও আন্তরিক মনোভাব থাকাও প্রয়োজন। অর্থাৎ, মূল কথা হল, মনস্তাত্বিক বোঝাপড়া ভালো থাকলে একটি সম্পর্ক যেমন সুন্দর হয় তেমনি দীর্ঘস্থায়ীও হয়।

সূত্র: https://www.psychologytoday.com/intl/blog/love-lies-and-conflict/202010/the-secret-energizing-your-long-term-relationship

অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

Previous articleসন্তানকে মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব বোঝাতে পারেন যেভাবে
Next articleইতিবাচক চিন্তাভাবনা নিয়ে প্রতিটি দিন নতুন করে বাঁচুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here