জুয়াআসক্তি কী? এর থেকে মুক্তির উপায়

0
380

প্রযুক্তির এই যুগে মানুষ এগিয়েছে বহুদূর। পেছোয়নি কী? প্রযুক্তি জীবনকে সহজ করেছে। মানুষ এখন বেশিরভাগ সময় -স্মার্টফোন বা যান্ত্রিক স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে সময় কাটায়। আর বর্তমানে স্মার্টফোনে সবচেয়ে চটকদার বিজ্ঞাপন থাকে জুয়াকে ঘিরে। যেখানে মানুষকে লোভে ফেলা হয়। ভাগ্য নির্ধারণের নাম করে জুয়ার নেশায় আকৃষ্ট করা হয়।

অন্যসব নেশার মতো জুয়াও মানুষের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। জুয়া খেলা এক ধরনের মানসিক অসুস্থতা, যার পরিণতি মারাত্মক। জুয়ায় অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপক অবনতি হয়। তাই মানসিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষার জন্য জুয়াসক্তি থেকে মুক্তি প্রয়োজন।

জুয়াআসক্তি কী? শুধুমাত্র ভাগ্যের উপর ভরসা করে অফলাইন বা অনলাইনে কোনো একটা খেলার উপর ভবিষ্যদ্বাণী করে অর্থ উপার্জনের পথ আসলে জুয়া। এই খেলা স্বাভাবিক দৃষ্টিতে দেখলে তেমন ক্ষতিকর কিছুই মনে হবে না। এমনকি মজার খেলাই মনে হবে। কিন্তু কেউ জুয়া খেলায় আসক্ত হয়ে গেলে এর পরিণতি শেষ পর্যন্ত ভালো কিছু বয়ে আনে না।

জুয়া নেশার প্রাথমিক কারণ হিসেবে নিঃসঙ্গতা একটা বড় কারণ হতে পারে। অনেকে একাকী থেকে পরবর্তী সময়ে কিছুটা উত্তেজনাপূর্ণ মুহূর্ত পেতে জুয়া খেলতে শুরু করেন। অনেকে আবার সঙ্গ দোষে জুয়ার সঙ্গে পরিচিত হোন। অনেকে আবার ব্যক্তিজীবনের অশান্তি এবং অস্বস্তি থেকে মুক্তি পেতে জুয়া খেলেন। অনেকে আবার সহজে টাকা উপার্জনের পথ হিসেবে জুয়াকে বেছে নেন। একবার ক্ষতির মুখে পড়লে, সেই টাকা ফিরে পাওয়ার আশায় জুয়া খেলতেই থাকে।

বর্তমানে বিভিন্ন উপায়ে জুয়াখেলা যায়। বাইরের দেশে ক্যাসিনো থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনলাইন সাইটে বৈধভাবে জুয়া খেলা যায়। কিন্তু বাংলাদেশে জুয়া খেলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ফলে প্রত্যক্ষ জুয়া খেলার কোনো সুযোগ নেই। তবুও জুয়ায় আকৃষ্ট ব্যক্তিরা নিজেদের মধ্যে টাকার বিনিময়ের মাধ্যমে জুয়া খেলে থাকেন। অনেকে আবার কিছু অনলাইন সাইটের মাধ্যমে জুয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত।

জুয়া কী কোনো রোগ? বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ জুয়াখেলাকে কোনো রোগ বলে চিহ্নিত করতে রাজি হোন না। তাদের মতে, এটা অভ্যাসগত কোনো সমস্যা কিংবা শাসনের মাধ্যমেই সমাধান সম্ভব। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, জুয়া নিয়মিত খেলার মাধ্যমে মানুষ অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডারে ভোগে। বেশিরভাগ আসক্তির মতো জুয়ার আসক্তিও ধীরে ধীরে নিজের ভেতর বাড়তে থাকে। কিন্তু এটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগে কেউ বিষয়টি বুঝতে পারে না।

বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন, মাদকাসক্তি যেমন মস্তিষ্ক সক্রিয় করে থাকে। উচ্চমাত্রায় ডোপামিন নিঃসরণ করে। জুয়ায় আসক্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে থাকে। এমনকি জুয়া খেলার সময় উত্তেজিত মুহূর্তে মস্তিষ্ক প্রচুর পরিমাণে নোরপাইনফ্রিন ক্ষরণ করে। যা জৈব রাসায়নিক প্রয়োজনে সহায়তা করে। তবে জুয়া খেলার ফলে মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হয়ে থাকে।

জুয়াখেলায় শুরুতে কিছুটা উপার্জন থাকলেও এক পর্যায়ে হারতে থাকলে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন মানুষজন। এরফলে অনেকে মাদকের দিকেও ঝুঁকে পড়েন। ফলে অনেক পরিবারে বিপর্যয় চলে আসেন। আত্মহত্যার হারও অনেক বৃদ্ধি পায়। অনেকে আবার জুয়া খেলার জন্য ছিনতাই করে টাকা সংগ্রহ করে থাকেন। যা সামাজিক বিপর্যয় ডেকে আনে।

জুয়া আসক্তি থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে সমাজ থেকে কিছু ভুল ধারণা সরিয়ে ফেলা উচিত। বিশেষ করে, জুয়া খেলা দোষের নয়, আনন্দের জন্য এটা খেলা যায়। আর বহন করতে পারলে এটা খেলা যাবে। এসব ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। কোনো অবস্থায় জুয়া খেলা উচিত নয়। শুরুতে বিষয়টা হালকা মনে হলেও, এক পর্যায়ে জুয়ার অভ্যাস মানুষকে বদলে ফেলতে পারে। তাই নিজের জন্য জুয়া খেলা থেকে বিরত থাকা উচিত। এর জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করলে, বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটালে, নতুন কাজে ব্যস্ত থাকলে এই আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

লিখেছেন: কামরুল ইসলাম ইমন।

করোনায় স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

“মনের খবর” ম্যাগাজিন পেতে কল করুন ০১৮ ৬৫ ৪৬ ৬৫ ৯৪

Previous articleখেলাধুলায় মনের সংযোগ অত্যন্ত দরকারী
Next articleমানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে বই

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here