ছেলে নিজেকে হিরো ভাবে

সমস্যা(প্রশ্ন):
(16 years old ,knows karate, 5ft 11inch tall, read in class nine, attacked by chintaikari (with two friends), they think they can fight with them, have face book ,fond of giving n getting likes, making friends, thinking hero themselve etc ,etc teenagers thoughts n problems,how to convince n control them, helpless parents…..)

ছেলের বয়স ১৬, কারাতে জানে। উচ্চতা ৫ ফুট এগার ইঞ্চি। বর্তমানে ক্লাস নাইনে পড়ছে। কয়েকদিন আগে, দুই বন্ধুসহ ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছিল। ওদের (ছেলের) ধারণা, তারা  ছিনতাইকারীর সাথে লড়তে পারত এবং শায়েস্তা করতে পারত।
ফেইসবুক চালায়, ফেইসবুক একাউন্ট আছে। ফেইসবুকে লাইক দেয়া, লাইক পাওয়া এবং বন্ধুবান্ধব জুটানোয় মজা পায়। তারা এসব করে, নিজেদেরকে হিরো ভাবতেও পছন্দ করে। টিনএইজ বয়সের সমস্যা ও চিন্তা।
তাদেরকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় বা বোঝানো যায়।
– অসহায়/চিন্তাগ্রস্ত বাবা-মা
পরামর্শ
ই-মেইলটি পড়তে পড়তে অনেকগুলো বিষয় মাথায় এসে ঠেকে। সমস্যা, সমস্যার কারণ, বর্তমান ছেলেমেয়েদের বেড়ে উঠা, ফেইসবুক, অভিভাবকদের অসহায়ত্বসহ আরো কিছু বিষয়।
উপরের লেখায় ছেলেদের ক্ষেত্রে দুটি সমস্যা স্পষ্ট। এক, ছিনতাইকারীদের কবলে পড়া। দুই, ফেইসবুক ব্যবহার করতে গিয়ে নিজেদেরকে হিরো ভাবা।
আর অসহায় বাবা-মায়ের জন্য একটাই সমস্যা। কিন্তু অত্যন্ত বড় সেই সমস্যাটি হলো, এদের চলাফেরা চিন্তা ভাবনা কাজ নিয়ে অসহায় বোধ করা। আর প্রশ্নটি ছিলো, কীভাবে এদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। বাবা মা হিসেবে সত্যিই বিষয়গুলো অত্যন্ত ভাবনার এবং গুরুত্বপূর্ণ। ছিনতাইকারীর কবলে পড়াটা যেমন চিন্তার বিষয়। তারচেয়ে বেশী চিন্তার বিষয়- ওরা যে ভাবছে ছিনতাইকারীকে তারা শায়েস্তা করতে পারবে, সেটা।
কারণ যাই হোক বা যেটাই হোক, যেভাবেই হোক আসল কথা হচ্ছে সন্তানের নিরাপত্তা। সেই সাথে নিজেরাও নিরাপদ বোধ করা। দেখুন একটা কথা মনে রাখা দরকার, আমাদের চারপাশে সমস্যার অভাব নাই। কিছু সমস্যা এবং সমাধান নিজেদের হাতে থাকে বা আয়ত্ত্বের মধ্যে থাকে। আবার কিছু সমস্যা নিজেদের আয়ত্ত্বের বাইরে থাকে। এখানে যেমন, ছিনতাইকারীর কবলে পড়ার বিষয়টিতে আপনাদের বা ছেলেদের হয়তো কিছু করার নেই। কিন্তু ছিনতাইকারীর কবলে যাতে না পরতে হয়, এসব বিষয়ে অবশ্যই আমাদের আগে থেকেই কিছু সাধারণ ধারণা, বিবেচনা বা বিচক্ষনতার বিষয় আছে। যেমন কখন, কোথায়, কোন রাস্তায় ছিনতাই হতে পারে সেসব বিষয়ে যতটুকু সম্ভব জেনে রাখা এবং এড়িয়ে চলার চেষ্টা করা। তারপরও, বিপদতো আর বলে কয়ে আসেনা। হঠাৎই চলে আসে। যদি কেউ এমন সমস্যায় হঠাৎ পড়েই যায়, তখন তাৎক্ষনিকভাবে কি করা যায় এসব বিষয়ে আমাদের সকলেরই কিছু ধারণা বা চিন্তা ভাবনা তৈরি করে রাখা উচিত।
ছেলেরা যে ভাবছে বা বলছে, তারা ছিনতাইকারীদের শায়েস্তা করতে পারবে বা পারতো। কিসের বিশ্বাসে এবং কোন যুক্তিতে তারা এমন কথা ভাবছে সেটা ভালো করে শোনা উচিত। তারা কী শুধু তাদের নিজের যোগ্যতা, ক্যারাতে জানার অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করেই এসব চিন্তা করছে, নাকি তাদের এই কথার পিছনে আরো কিছু যুক্তি আছে সেসবও ওদের কাছ থেকে ভালো করে শোনা উচিত। তাদের যুক্তিগুলো ভালো করে যাচাই করে, তাদের সাথে বসে একটা সিদ্ধান্তে আসা যেতে পারে। এখানে একটা কথা বলে রাখা দরকার, ছিনতাইকারীরা সাধারণতো একা থাকেনা। তাদের থাকে বিশাল বিশাল নেটওয়ার্ক। তাদের পিছনে কয়েক দফায় লোক নির্ধারিত থাকে। তাদের যেকোনো বিপদ হলে, তারা কীভাবে সেখান থেকে রক্ষা পাবে তাদের কিন্তু সেই ব্যবস্থাও করা থাকে। এবং তাদের যেকোনে বিপদে তারা যেকোনো কিছু করার মতো চিন্তা ভাবনাও করতে পারে। সুতরাং ওদেরকে এমন ইচ্ছার উপর ছেড়ে দেয়াটা হবে, অত্যন্ত বিপদজনক। সাধারণত ছিনতাইকারীরা বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ধারালো বা বিপদজনক অস্ত্রও সাথে রাখে।
আপনার ছেলেকে অবশ্যই বোঝানো উচিত, ছিনতাইকারীকে আমরা কেউ চিনি না। কিন্তু স্কুলে যাবার সময় বা অন্য যেকোনে সময় তারা ছেলেদেরকে ফলো করতে পারবে। সুতরাং তারা যে শায়েস্তা করতে যাবে, সে ব্যাপারটা কতটুকু যুক্তি সঙ্গত সেটাও তাদেরকে অবশ্যই বোঝানো উচিত। যুক্তি দিয়েই বোঝাতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত বিষয়গুলো তারা না বুঝবে, যুক্তিগুলো না শুনবে, গ্রহণযোগ্য কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরি না হবে, ততক্ষণ তাদের সাথে কথা বলতে হবে।
নিজেরে নিরাপত্তার বিষয়টিই প্রথমে আসবে। কাউকে শাস্তি দেয়াটা পরের ব্যাপার। নিজের নিরাপত্তাকে হুমকির উপর ফেলে কাউকে শাস্তি দেয়ার চিন্তা করাটা নিরেট বোকামি। আপনারা সেই কথাটি ছেলেদেরকে বোঝাবেন।
আর ফেইসবুক হিরোইজম, আরেক ধরনের সমস্যা। ফেইসবুক ব্যবাহার কম বয়সীদের জন্য ভালো না খারাপ এ তর্ক সারা পৃথিবীতেই আছে। আমার জানা মতে পৃথিবীর অনেক দেশে, অনেক স্কুলে আঠারো বছর বয়সের নিচের ছেলে মেয়েদেরকে ফেইসবুক ব্যবহার নিষেধ করা আছে। আমি একজনকে জানি, ‍যার মেয়েকে স্কুলে থেকে ফেইসবুক ব্যবহার নিষেধ করেছে বলে, মা নিজেও আপাতত আর ফেইসবুক ব্যবহার করছেন না।
যতক্ষণ ভালো, ততক্ষণ ভালো। কিন্তু সেটি যদি বিপদের আরেক নাম হয়, তবেতো সেটা অবশ্যই চিন্তার কারন হয়ে দাঁড়াবেই। ফেইসবুক হিরোইজম যদি ছিনতারীকে শায়েস্তা করার হিরোইজমে রূপান্তরিত হয়, তবে সেটা আরো বিপদের কথা। মাঠের বিনোদন, কম তাই স্ক্রিনেই বিনোদন খুঁজতে হয়। তবে, অবশ্যই সাবধান! প্রয়োজনে নিয়ন্ত্রণ অবশ্যই প্রযোজ্য। অথবা কতটুকু করা যাবে, সেটা নিয়েও আলাপ করা যেতে পারে।
আশা করি, ছেলেদের সাথে বসে বিষয়গুলোর যুক্তিযুক্ত সমাধান খুঁজে বের করতে পারবেন। সবার নিরাপত্তা কামনা করছি।
পরামর্শ দিচ্ছেন
ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব


দৃষ্টি আকর্ষন
মনেরখবর.কম এর প্রশ্ন-উত্তর বিভাগে, মানসিক স্বাস্থ্য, যৌন স্বাস্থ্য, মাদকাসক্তিসহ মন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আপনার কোনো জানার থাকলে বা প্রশ্ন থাকলে বা বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দরকার হলে info@www.monerkhabor.com এই ইমেলের মাধ্যমে প্রশ্ন পাঠাতে পারেন।

Previous articleস্বামীর চেয়ে এগিয়ে যখন স্ত্রী
Next articleমানসিক রোগ মানেই ‘থমকে যাওয়া’ নয়
চেয়ারম্যান, মনোরোগবিদ্যাি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here