যে কোন বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা আমাদের উপকার করার বদলে মানসিক ও শারীরিক ক্ষতিই সাধন করে। কিছু নির্দেশনা অনুসরণ করে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
চিন্তা শক্তি মানব জাতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ গুণ যা তাকে অন্য সব প্রাণী থেকে পৃথক এবং উন্নত করে। এই শক্তিকে কাজে লাগিয়েই আমরা আমাদের আগত ভবিষ্যৎ নিয়ে ধারণা করতে পারি, বর্তমানকে মূল্যায়ন করতে পারি এবং আমাদের জন্য হিতকর সিদ্ধান্তগুলো নেয়ার কথা ভাবতে পারি। কিন্তু অনেক সময় আমাদের এই বিশেষ ক্ষমতাটিই আমাদের জীবনে অভিশাপ হয়ে নেমে আসে। এর নামই মাত্রাতিরিক্ত চিন্তা বা দুশ্চিন্তা যা আমাদের কোন বিষয় নিয়ে অত্যধিক সময় ধরে অস্বাভাবিক মাত্রায় মানসিক চাপের মধ্যে রাখে।
কোন পরিস্থিতি বা কাজ যখন একজন মানুষের আওতার বাইরে চলে যায় তখন সেটি নিয়ে ভয়, চিন্তা, উদ্বেগ এগুলো হওয়া তার মানসিক স্বাভাবিক অভিব্যক্তির মধ্যেই পড়ে। কিন্তু এই চিন্তা বা ভয় যখন ধীরে ধীরে আমাদের মানসিক সমস্যায় পরিণত হয় এবং আমাদের সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের মানসিক সমক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে তখন সেটি আর স্বাভাবিক কোন মানসিক অভিব্যক্তি থাকেনা। তাছাড়া অতিরিক্ত চিন্তা একজন মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও চরম ঝুঁকি তৈরি করে। তাই আমাদের চিন্তা শক্তির এই ব্যাধিতে পরিণত হওয়াকে রোধ করতে হবে। মনস্তত্ত্ববিদগণ বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদান করেছেন যেগুলো আমাদের চিন্তাশক্তির অপব্যবহার থেকে মুক্তি দিতে পারবে।
১) অতীত বা ভবিষ্যৎ থেকে বর্তমানকে বেশী গুরুত্ব দিনঃ
আমাদের অতিরিক্ত চিন্তার উদ্রেক হতে পারে অতীত বা ভবিষ্যৎকে অত্যধিক গুরুত্ব দেওয়া থেকে। যখন আপনি এগুলো নিয়ে দুশ্চিন্তা করেন, আপনি আপনার মনোযোগ বর্তমান সময় থেকে সরিয়ে নেন। তখন আপনি বর্তমানে কি করছেন এটির থেকে অতীতে কি করেছেন বা ভবিষ্যতে কি করবেন এগুলোই আপনার ভাবনার মূল বিষয় হয়ে যায়। কিন্তু আপনাকে এটা স্মরণে রাখতে হবে যে, অতীতে যা কিছু হয়েছিল তার কোনটাকেই আপনি পরিবর্তন করতে পারবেন না বা ভবিষ্যতে কি হতে চলেছে সেটিও কারও পক্ষে বলা সম্ভব নয়। তবে এই দুটো নিয়ে অত্যধিক চিন্তার ফলে আপনার বর্তমান জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে এটা নিশ্চিত।
এই সমস্যা মুক্তির একটাই উপায় সেটি হল অতীত বা ভবিষ্যৎ নয়, বরং বর্তমান সময়কেই বেশী গুরুত্ব দেওয়া। আপনি এখন কি করছেন সেটি নিয়ে অধিক মনযোগী হওয়া। আপনার যা কিছু আছে সেটি নিয়ে বর্তমান সময়কে উপভোগ করুন এবং বর্তমানে সম্মুখীন হওয়া সমস্যাগুলো থেকে মুক্তি পাবার উপায় নিয়ে চিন্তা করুন। এটি আপনাকে আপনার চিন্তাশক্তিকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে সহায়তা করবে এবং আপনার মানসিক শক্তি অপব্যয় হওয়াও রোধ করবে।
২) ফলাফল নয়, কাজ নিয়ে ব্যাস্ত থাকুনঃ
দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাবার আরেকটি কার্যকরী সমাধান হল নিজেকে ফলাফলের ভাবনা ভেবে নয় বরং বিভিন্ন কাজের মাঝে ব্যাস্ত রাখা। যেমন, আপনার ফুলের বাগান কবে ফুলে ফুলে ভরে উঠবে সেটি নিয়ে চিন্তা করে করে মাথার চুল পাকিয়ে ফেলার থেকে ভালো ফুল পেতে বাগানের গাছেদের প্রয়োজনীয় দেখভাল করুন। মনে রাখতে হবে, শুধু ফলাফলের দিকে মনযোগী হওয়ার অর্থ হল আপনি নিজেকে ফল পাবার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি এবং অভিজ্ঞতা থেকে দূরে সরিয়ে রাখছেন। যা কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাবার পথে সব থেকে বড় বাধা। তাই আপনার মূল চিন্তা ভাবনা ভবিষ্যতে কি হবে সেটি নিয়ে নয় বরং কিভাবে সেই কাজটি সম্পাদন করবেন সেসব নিয়ে হলে আপনি দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকতে পারবেন।
৩) সব সময় আত্মবিশ্বাস রাখুনঃ
অতিরিক্ত চিন্তাভাবনা বা দুশ্চিন্তা মূলত একজন ব্যক্তির আত্মবিশ্বাসের অভাব থেকেই সৃষ্টি হয়। যখন পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকেনা তখন সেটি আমাদেরকে দুশ্চিন্তা করতে বাধ্য করে এবং আমরা সেই পরিস্থিতি মোকাবেলা করার সাহস হারিয়ে ফেলি যা একেবারেই ঠিক নয়। এরকম মানসিক দশা আমাদের ইতিবাচক কিছু ভাবতে বাধা দেয় এবং আমরা অযথা মানসিক চাপের মাঝে নিজের উপর আস্থাই হারিয়ে ফেলি। কিন্তু খারাপ অবস্থা নিয়ে না ভেবে আমরা যদি আমাদের সামর্থ্য, আমাদের প্রচেষ্টা করার মানসিক শক্তি নিয়ে ভাবতে পারি তাহলে এই সমস্যার সমাধান হতে পারে। তাই দুশ্চিন্তা না করে নিজেদের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে যে আমরা এই সমস্যা মোকাবেলা করার সামর্থ্য রাখি। আর এই আত্মবিশ্বাসই একমাত্র আমাদের দুশ্চিন্তা থেকে দূরে রাখতে পারবে।
উপরের নির্দেশনা গুলো অনুসরণ করলে আমাদের চিন্তাশক্তি কখনোই আমাদের প্রতিকুলে আচরণ করে আমাদের আরও সমস্যার মাঝে ফেলবেনা। বরং আমাদের সমস্যা মোকাবেলার প্রধান হাতিয়ার হয়ে উঠবে।
করোনায় স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে