জীবনের পথচলায় প্রতিটি মানুষকেই অসংখ্য মানসিক কষ্ট, সংগ্রাম পাড়ি দিতে হয়। পারিবারিক সুসম্পর্কের অভাব, হিংস্রতা, প্রিয়জনের মৃত্যু, হতাশা ইত্যাদির স্বাদ নিতে হয় কমবেশি সব মানুষকেই।
জীবনের এই অভিজ্ঞতাগুলো কিছু না কিছু শেখায়, দাগ কেটে যায় সারাজীবনের মতো। শুধু মানসিক প্রভাব নয়, শারীরিক প্রভাব থাকে এই ঘটনাগুলোর।
জীবন দর্শন নয়, গবেষণার মাধ্যমে এই বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন গবেষকরা।
‘জার্নাল অফ পাবলিক হেলথ’য়ে এই গবেষণাটি প্রকাশিত হয়, যাতে দেখানো হয়েছে কীভাবে জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে অসমতায় ভোগা মানুষগুলো শেষ বয়সেও মানসিক ও শারীরিক অসমতায় ভোগেন।
গবেষকরা বলেন, “অসমতার শিকার হওয়ার কারণে মানসিক চাপ এবং মানসিক হীনমন্যতা ওই ব্যক্তিকে গ্রাস করতে পারে। বাবা-মায়ের স্নেহ মমতা থেকে বঞ্চিত হওয়া, শিক্ষার্জনের সুষম সুযোগ না পাওয়া, গর্ভের সন্তানের মৃত্যু, দারিদ্রতা, কলহ, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ইত্যাদি একজন মানুষকে সারাজীবনের জন্য বদলে দিতে পারে।
গবেষণার প্রধান গবেষক, যুক্তরাজ্যের ‘ইউনিভার্সিটি অফ ইস্ট অ্যাংলিয়া’র ওবি ইনও বলেন, “প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীর জীবনের ইতিহাস শুনেছি আমরা, তার সঙ্গে তুলনা করেছি তাদের জীবনযাপনের মান এবং দৈনন্দিন বিভিন্ন সাধারণ কাজ পরিপাটি পোশাক পরা, গোসল, খাবার তৈরি, বাগান পরিচর্যা, ধনসম্পদ নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি তারা কতটা ভালোভাবে করতে পারেন। আমরা দেখেছি, যারা জীবন পার করেছেন প্রচণ্ড সংগ্রামের ভেতর দিয়ে তাদের জীবনযাত্রার মানের সঙ্গে যারা সুখ স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন পার করেছেন তাদের তুলনা করলে সংগ্রামী মানুষগুলোর শেষ বয়সটাও অনেকটাই নিম্নমানেরই রয়ে যায়। সংগ্রামী এই মানুষগুলোর মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তিনগুন বেশি। সামাজিক যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দ্বিগুন বেশি এবং দীর্ঘদিন রোগে ভোগার সম্ভাবনাও দ্বিগুন বেশি।”
এই গবেষণার জন্য ‘ইংলিশ লনজিটিউডিনল স্টাডি অফ এইজিং (ইএলএসএ)’ নামক আরেক গবেষণা থেকে তথ্য নেওয়া হয়। এছাড়াও মোট ৭,৫৫৫ জন প্রবীণকে ডেকে আনা হয়। জানতে চাওয়া হয় তাদের জীবনের বিস্তৃত ইতিহাস, ছিল প্রশ্নোত্তর পর্ব।
অংশগ্রহণকারীদের মোট চারটি দলে ভাগ করা হয়। যাদের জীবনের স্মরণীয় ঘটনা অনেক কম, যাদের মা ছিলেন মানসিকভাবে কঠোর, যারা হিংস্রতাকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন এবং যারা জীবনে অসংখ্য সংগ্রাম মোকাবেলা করেছেন।
অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে পাওয়া উত্তরের ভিত্তিতে তাদের জীবনের ঘটনাগুলো ধারাবাহিক পর্যালোচনা করেন গবেষকরা। এখানে বিবেচনায় রাখা হয় তাদের বয়স, লিঙ্গ, আর্থসামাজিক অবস্থান এবং সাংস্কৃতিক শেকড়।
ফলাফলে দেখা যায়, প্রচুর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠা মানুষগুলোর শেষ বয়সে জীবনযাত্রার মান নিম্নমানের হওয়ার সম্ভাবনা অন্যান্যদের থেকে পাঁচগুন বেশি। নানান রোগ ও শারীরিক সীমাবদ্ধতায় ভোগার আশঙ্কা আরও বেশি। মায়ের স্নেহ যারা পাননি, তাদের শেষ বয়সে মানসিক রোগে ভোগা ও সামাজিক সম্পর্ক থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা গুরুতর।