কর্ম চাঞ্চল্যের মধ্যে নিজেকে নিয়োজিত করে হতাশা থেকে দূরে থাকতে পারবেন

0
60

সমস্যা:
স্যার আদাব। আমার নাম মিন্টু, বয়স ৩৮, পেশায় একজন শিক্ষক। আমি ২০১২ সালে পারিবারিক একটা বিষয় নিয়ে খুব রাগান্বিত হলে, এত পালপিটেশন হয়েছিল যে, সেদিন ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম । তখন কিছুদিন পর ঢাকায় স্কয়ারে হার্টের ডাক্তার দেখাই। কোনো সমস্যা পাওয়া যায় নাই। তারপরেও মনের ভয়ভীতি দূর করতে না পেরে ময়মনসিংহ মানসিক বিভাগে দেখাই, তখন আমাকে NEXITO 10 ও revotril 5 দিলেন। ১মাস খাওয়ার পর আবার গেলাম । আবার দুই মাস খেতে বললেন, খেলাম। মনের জোর নিয়ে চলি, কতদিন ভালো যায়। এর মধ্যে যখনি এই ভয়ভীতির কথা মনে হলে খুব বিষন্নতায় ভুগতাম তখনি মাসখানেক nexito খেতাম। এভাবে এই চার বছরের মধ্যে চার পাচঁ বার মাসখানেক করে nexito খেয়েছি। এখন ইদানীং দুইমাস ধরে প্রচন্ড বিষন্নতায় ভুগতেছি। কোনো কিছুতেই ভালো লাগে না। মন ভীষন দুর্বল। এখন আমার মূল সমস্যা হলো সবসময় অহেতুক ভয়ভীতির কথা মনে আসে। এক জায়গায় যেতে চাইলে মনে হয় যেতে পারব না। আসলে কিছুই হয় না। কিন্ত এই চিন্তা মনে নানারকমের নেতিবাচক চিন্তার জন্ম দেয়। আমার চলাচল সীমাবদ্ধ করে দেয়। একেক সময় অস্থির হয়ে কান্নাকাটি শুরু করে দেই এই ভেবে যে, আমি এ কোন রোগে ভুগতেছি, আমি কেন স্বাভাবিক মানুষের মতো চলাফেরা করতে পারছি না। এখানে আরো একটি বিষয় উল্লেখ করছি। এই চিন্তা গুলো এক সময় দুর করে ফেলি, কিন্ত আমার স্কুলটা বাড়ি থেকে অনেক দূর হওয়ায় যাওয়া আসার সময় এই চিন্তা গুলো আবার আসতে আসতে আমায় বিষন্নতার দিকে নিয়ে যায়। এমনো হয় চার পাঁচদিন ঘর থেকে বের হই না। তখন আরো বেশী করে আঁকড়ে ধরে এই ভয়ভীতির চিন্তা ও নিজের শরীরকে নিয়ে নানাবিধ উদ্বেগ উৎকন্ঠা। স্যার গত পাঁচ মাস আগে হরমোন টেষ্ট করেছিলাম TSH ছিল 6.25, তখন আমাকে SYNROID 50হাফ করে তিন মাস খেতে বলেছিল এবং তিন মাস পর আবার পরীক্ষা করতে বলেছিল, কিন্তু করা হয়নি। এখন কিভাবে এই সব চিন্তা থেকে বের হয়ে স্বাভাবিক মানুষের মতো চলাফেরা করতে পারবো। আমি জানি এই ভয়ভীতির চিন্তা আমার কিছু হবে না। কিন্তু আমার মনকে বিষিয়ে তুলে যার ফলে দুই মাস ধরে খুবই বিষন্নতায় ভুগছি, মনে হয় বাঁচব না। সারাদিন শুয়ে শুয়ে দিন পার করি আর দুর্বল দুর্বল চিন্তা এসে ভর করে।

পরামর্শ:
মিন্টু স্যার,
আপনার রোগের শুরুতে প্রচন্ড রাগান্বিত হওয়া এবং পরবর্তীতে হতাশা, দুর্বলতা “হতাশা জনিত রোগ” (Major depressive disorder)- এরই বহিঃপ্রকাশ। এ হতাশা কাটিয়ে উঠতে না পারায় আপনার বুক ধড়ফড় করে এবং ভয় কাজ করে। যদিও সাধারণের দৃষ্টিতে উল্টোটাই মনে হবে, অর্থাৎ ভয়ের কারণে হতাশা আসছে। তবে আপনার সমস্যার উৎস যাই হোক এ রোগের খারাপ দিক হলো দীর্ঘমেয়াদী কর্মক্ষমতা অনেকটা কমিয়ে দেয়, এমনকি যথাযথ চিকিৎসা না করলে আত্মহননের ইচ্ছাও জাগাতে পারে। কাজেই আপনি যে ঔষুধগুলো খাচ্ছেন সেগুলো এক নাগাড়ে ০৯-১২ মাস খাওয়া যেতে পারে। তবেই বারবার হতাশায় পেয়ে বসার সম্ভাবনা অনেকটা কমে যাবে। ঔষুধের বাইরেও আপনি যে যে পারিবারিক ও দৈনন্দিন শিক্ষকতার কাজগুলি করছেন তা নিয়মিত চালিয়ে যেতে হবে। উপলব্ধি করতে হবে যে এ অসুখ সাময়িক সময়ের জন্য আসে।
আরেকটা ব্যাপার হলো, ভয়-ভীতি কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণে আসে কিনা তাও খতিয়ে দেখবেন, আর যে জিনিষে বা ঘটনায় ভয় পান সে ঘটনা বা জিনিষে বারবার মুখোমুখি হলে আস্তে আস্তে ঐ ঘটনা বা জিনিষের প্রতি ভয়-ভীতি কেটে যায়। কাজেই নিজেই সচেতন হয়ে, ভয়-ভীতি থেকে মুক্ত হয়ে, কর্ম চাঞ্চল্যের মধ্যে নিজেকে নিয়োজিত করে হতাশা থেকে দূরে থাকতে পারবেন। আপনাকে ধন্যবাদ।

পরামর্শ দিচ্ছেন,
ডা. আর কে এস রয়েল
বিভাগীয় প্রধান, সাইকিয়াট্রি
এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, সিলেট


দৃষ্টি আকর্ষণ- মনেরখবর.কম এর প্রশ্ন-উত্তর বিভাগে, মানসিক স্বাস্থ্য, যৌন স্বাস্থ্য, মাদকাসক্তি সহ মন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আপনার কোনো জানার থাকলে বা প্রশ্ন থাকলে বা বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দরকার হলে question@www.monerkhabor.com এই ইমেলের মাধ্যমে প্রশ্ন পাঠাতে পারেন।

Previous articleখেলার সফলতার জন্য চাই মানসিক দৃঢ়তা
Next articleঅস্বাভাবিক আচরণ ২য় পর্ব: অস্বাভাবিক আচরণের কারণ কি?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here