করোনা মহামারি আমাদের জীবনের অনেক কিছুই পরিবর্তন নিয়ে আসছে। আমাদের প্রতিদিনের জীবন যাপন, কর্মস্থল এবং আমাদের চিন্তা ভাবনায় প্রচ্ছন্ন প্রভাব ফেলেছে করোনা ভাইরাস। চিকিৎসা ব্যাবস্থা এবং চিকিৎসা পদ্ধতির মাঝেও এসেছে অনেক পরিবর্তন।
বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম চিকিৎসা এবং চিকিৎসা ব্যাবস্থাকে আগে এতো প্রভাবিত করেছে বলে আমার জানা নেই। জনগণকে সচেতন করতে অবশ্যই অনেক অনেক ইতিবাচক ভূমিকা রয়েছে এই মাধ্যমগুলো। কিছু কিছু নেতিবাচক প্রভাবও রয়েছে। এন্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স তার মধ্যে একটি।
সহজ ভাষায় বলতে গেলে এন্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স হলো রোগ তৈরি কারক ব্যাকটেরিয়ার উপর এন্টিবায়োটিকের কার্যক্ষমতা হারানো। অর্থাৎ আগে যে এন্টিবায়োটিক কোন ব্যাকটেরিয়াকে নির্মুলের মাধ্যমে রোগ ভালো করতো সেটির অকার্যকারিতা। অনেক কারণে এন্টিবায়োটিক তার কার্যকারিতা হারাতে পারে। তারমধ্যে অপ্রয়োজনীয় এন্টিবায়োটিক ব্যাবহার, সঠিক ডোজ, সঠিক পরিমান এবং সঠিক সময়কাল এন্টিবায়োটিক ব্যাবহার না করা অন্যতম।
আমরা সবাই জানি কভিড-১৯ একটি ভাইরাস জনিত রোগ। SARS-CoV-2 নামক ভাইরাস দিয়ে রোগটি হয়ে থাকে। ভাইরাসের উপর মেডিসিন কম কাজ করায় প্রথম দিক থেকেই এই চিকিৎসা নিয়ে এতো আলোচনা হয়ে আসছে। যখন ঠিক কার্যকরী কোন মেডিসিন পাওয়া যাচ্ছিলো না তখনই মিডিয়াগুলোতে নানা ধরনের অনুমানভিত্তিক চিকিৎসা ছড়িয়ে পড়ে। এভাবেই কিছু এন্টিবায়োটিক এর নাম করোনা ভাইরাস চিকিৎসায় প্রসার অর্জন করেছে। তারমধ্যে এজিথ্রোমাইসিন, ডক্সিসাইক্লিন, মেরোপেনাম, সেফিক্সিম,সেফুরক্সিম, লেভোফ্লক্সাসিন অন্যতম।
এই এন্টিবায়োটিকগুলো ব্যাকটেরিয়া জনিত নিউমোনিয়ায় অনেক দিন ধরে অনেক ভালো কার্যকারিতা দেখিয়েছে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের উপর এই মেডিসিন গুলোর কার্যকারিতা নেই বললেই চলে। কিন্তু করোনা আতংকে এই মেডিসিন গুলোর বহুল ব্যাবহার হচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রয়োজনমত চিকিৎসকরা এই এন্টিবায়োটিকগুলো ব্যাবহার করছেন। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মানুষ শুনে শুনে অথবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখে দেখে এই মেডিসিন গুলো ব্যবহার করছে। এতে করে করোনা থেকে মুক্তি পাচ্ছে কিনা জানিনা তবে এন্টিবায়োটিকগুলোর রেজিজটেন্ট তৈরি হচ্ছে।
হয়তো একদিন করোনা ভাইরাস কমে যাবে। কিন্তু যে এন্টিবায়োটিকগুলো তাদের কার্যক্ষমতা হারাচ্ছে সেগুলো আর ফিরে আসবে না। যার ফলে যে মেডিসিনগুলো আমাদের বিপদের সময় মুক্তি দিয়েছে সেগুলোকে আর কাজে লাগানো যাবে না। এতে করে সাধারন নিউমোনিয়া, টাইফয়েড জ্বর সহ অনেক রোগের চিকিৎসা ভবিষ্যতে আরো অনেক জটিল এবং ব্যায়বহুল হয়ে পড়বে। এর আগেও অনেক কম খরচের ভালো ভালো এন্টিবায়োটিক ছিলো যেগুলো বর্তমানে এন্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স এর কারণে তাদের কার্যকারিতা হারিয়েছে।
তাই আমি মনে করি করোনা চিকিৎসায় এন্টিবায়োটিক ব্যাবহার এর ব্যাপারে আমাদের চিকিৎসকদের আরো জাজমেন্টাল হওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই এন্টিবায়োটিক গুলোর নাম না বলাই ভালো। এতে করে এন্টিবায়োটিক এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এবং এন্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স দুটোই কমানো যাবে।
আর সাধারণ জনসাধারণ এর উদ্দেশ্যে বলতে চাই কোন মিডিয়াতে দেখে বা শুনে করোনার চিকিৎসা না নিয়ে চিকিৎসক এর পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নেয়া প্রয়োজন। অযথা আতংকিত হয়ে কোন মেডিসিন বা এন্টিবায়োটিক সেবন থেকে বিরত থাকতে হবে। আর একই রোগের জন্য সবার একই পরিমান মেডিসিন লাগে না। রোগীর অবস্থা, রোগের মাত্রার উপর নির্ভর করে মেডিসিনেরও তারতম্য হয়ে থাকে। তাই এই বিষয় গুলো নিয়ে আমাদের ভাববার সময় এসেছে। সবাই স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলুন। নিরাপদে থাকুন এবং ভালো থাকুন।
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন