একজন জুয়া আসক্তকে কীভাবে সহায়তা করা যায়?

0
36
একজন জুয়া আসক্তকে কীভাবে সহায়তা করা যায়

মাহজাবীন আরা
অ্যাসিস্ট্যান্ট কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট

খেলার কথা শুনলেই আমাদের মনে আনন্দানুভূতি তৈরি হয় কিন্তু যদি সেটি হয় জুয়া খেলা তখনই মনে নেতিবাচক অনুভূতি বা আতঙ্ক কাজ করে। কারণ, জুয়া বা বাজি হচ্ছে এমন এক ধরনের খেলা, যা লাভ- লোকসানের মধ্যে ঝুলন্ত থাকে। এই খেলায় মূলত নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বা বস্তু পুরস্কার হিসেবে ধার্য করা হয় এবং দুই পক্ষের মধ্যে যে পক্ষ হেরে যায় তাকে অপরপক্ষকে ঐ নির্দিষ্ট পরিমাণ পুরস্কার দিয়ে দিতে হয়।

একসময় ক্রিকেট-ফুটবলসহ বিভিন্ন খেলাধুলা এবং ক্যাসিনোর মাধ্যমে জুয়া খেলার প্রচলন থাকলেও বর্তমানে স্মার্টফোনের সহজলভ্যতার যুগে মোবাইলের মাধ্যমে জুয়া খেলার হিড়িক পড়েছে তরুণদের মধ্যে,যা দিনদিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। বিভিন্ন নামে থাকা অ্যাপসগুলোর বিজ্ঞাপনে সহজেই অর্থ লাভের সুযোগ দেখিয়ে আকৃষ্ট করা হয়; যা কিশোর থেকে প্রাপ্তবয়স্ক সকলকে প্রভাবিত করছে।

জুয়া আসক্তকে কীভাবে সহায়তা করা যায়?

জুয়া আসক্তকে কীভাবে সহায়তা করা যায়?

জুয়া খেলতে খেলতে এক পর্যায়ে কখন যে সেটি নেশা হয়ে যায় তা ব্যক্তি নিজেই হয়ত টের পান না। নেশায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা অনেক অর্থ হারালেও জুয়া খেলার তাগিদ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। পুরস্কারটি আরও মূল্যবান হবে এই আশায় তারা বারবার ঝুঁকি নিতে থাকেন আর এভাবেই হয়ে পড়েন সর্বস্বান্ত। গবেষণায় দেখা গেছে, অন্যান্য আসজির মতোই জুয়ার প্রতি নেশার পিছনে রয়েছে জিনগত, পারিপার্শ্বিক পরিবেশ এবং জৈবিক বা বায়োলজিক্যাল কারণ।

যারা জুয়ার সমস্যায় ভুগেন তাদের মস্তিষ্কে একই রকম রাসায়নিক পরিবর্তন হতে পারে যা অ্যালকোহল বা মাদকের আসক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা যায়। জুয়ার আসক্তি একজন ব্যক্তির জীবনের সকল ক্ষেত্রে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে। এর পরিণতিতে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি, আর্থিক ক্ষতি, দেউলিয়া হওয়া, চাকরি হারানো, গৃহহীনতা এবং এমনকি ব্যক্তিগত সম্পর্কের ক্ষেত্রেও ভাঙন ঘটতে পারে।

অ্যাকাডেমিক ফলাফলে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব

তাই আপনজন বা কাছের কেউ যাতে এই ধ্বংসাত্মক খেলায় না জড়িয়ে পড়ে সেদিকে নজর রাখা সবার আগে জরুরি; আর অগত্যা কেউ যদি এই ফাঁদে পড়ে যায় তবে তার জুয়ার আসক্তি কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করার জন্য যা করতে পারেন-

  • সবচেয়ে বড়ো পদক্ষেপ হলো ব্যক্তির মধ্যে যে জুয়ার আসক্তির সমস্যা আছে তা তাকে উপলব্ধি করানো।
  • কাছের মানুষের উচিত তার পাশে থাকা এবং তাকে সময় দেয়া।
  • তার সমস্যাটা ভালো করে বুঝতে চেষ্টা করা এবং এই নেশা থেকে তাকে দূরে সরাতে উৎসাহ দেয়া।
  • তাকে ইতিবাচক চিন্তাভাবনা করতে সাহায্য করা।
  • জুয়া আসক্তির জন্য তাকে কটুকথা না বলে শুধুমাত্র সমস্যার সমাধানের দিকে নজর দেয়া।
  • জুয়ার আসক্তি যে মানুষের জীবনে কতটা ধ্বংসডেকে আনতে পারে সেই বিষয়ে তাকে সতর্ক করা; অর্থাৎ সম্ভাব্য বিপদ চেনানোর কাজে তাকে সাহায্য করা এবং সেই বিপদের মধ্যে যেন আর না জড়ায় সেদিকে লক্ষ রাখা।
  • পারিবারিক পরিবেশের কারণে আসক্তিতে জড়ালে সেই পারিবারিক পরিবেশ পরিবর্তনের দিকে খেয়াল রাখা।
  • জুয়ার আসক্তি বন্ধ করতে অভিভাবকদের উচিত সন্তান কার সঙ্গে মিশছে এবং কোথায় সময় ব্যয় করছে সে ব্যাপারে সচেতন হওয়া।
  • মোবাইলে সারাক্ষণ কী করছে তা পর্যবেক্ষণে রাখার মাধ্যমে সন্তান যেন স্মার্টফোনের অপব্যবহার করতে না পারে তার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
  • যাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখলে কিংবা মেলামেশা করলে জুয়ায় আসক্ত থাকার সম্ভাবনা থাকে, সেই সব অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করতে সহায়তা করা।
  • ব্যয়কৃত অর্থের পরিমাণ ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা এবং নির্ধারণ করে দেয়া।
  • মানসিক উদ্বেগ, অপরাধবোধ, অসহায়তা, অবসাদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কেউ যদি জুয়া খেলে; তবে সেক্ষেত্রে তার সেই মানসিক সমস্যার চিকিৎসা করানো।
  • প্রয়োজনে কগনেটিভ বিহেভিয়ার থেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা করানো; অর্থাৎ একজন প্রফেশনাল মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে পরামর্শ নেয়া।

মনের খবর

  • এপয়েন্টমেন্ট নিতে এখানে ক্লিক করুনঃ APPOINTMENT

আরও পড়ুন:

Previous articleএমডি সাইকিয়াট্রি জুলাই সেশনে পাশ করেছেন ৯ জন
Next articleসাইকিয়াট্রি বিভাগের অক্টোবর মাসের বৈকালিক আউটডোর সূচি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here