আসুন সিগারেট ছাড়ি

“সিগারেট ছাড়া! খুব সহজ ব্যাপার। আমি হাজারবার ছেড়েছি” বিখ্যাত আমেরিকান ঔপন্যাসিক মার্ক টোয়েনের এই উক্তির প্রতিধ্বনি অনেক সিগারেটসেবীর কাছে শুনতে পাওয়া যায়। কথায় কথায় তারা বলেন-‘ সিগারেট ছাড়া ? কোন ব্যাপারই না। আমি ইচ্ছে করলেই যে কোনো সময় সিগারেট ছেড়ে দিতে পারি। এই কয়েক মাস আগেইতো আমি একটানা সাত দিন সিগারেটে একটা টান না দিয়েই পার করে দিলাম’। যদি প্রশ্ন করেন – সাত দিন পর আবার ধরলেন কেন? উত্তরে সেই ব্যক্তি একটূ লাজুক হাসি হাসবেন এবং বলবেন- আসলে সত্যি সত্যি ছাড়তে পারলাম কিনা দেখার জন্য দুটো টান দিলাম, ব্যাস আবার শুরু হয়ে গেল। এই বার সিগারেট ছাড়লে আর ধরবোই না’। ওই বলা পর্যন্তই, তারপর তিনি কিন্তু আর ছাড়ার কথা মুখেও আনবেন না যত দিন পর্যন্ত না আবার পরিবারের ভেতর থেকে বড় রকমের চাপের সম্মুখীন হন।

এই যে এরা ছাড়তে চাইলেই ছাড়তে পারি এ কথা বলার পর কিছুদিন সিগারেট না খেয়েও থাকেন, তারপর আবার ধরেন, এর কারণ কি? তারা কি সিগারেটে আসক্ত হয়ে পড়েছেন? তাই সিগারেট ছাড়ার চেষ্টা করেও সিগারেট ছাড়তে পারছেন না? তাহলে আসুন সিগারেট আসক্তির লক্ষণগুলো কি কি জেনে নিই:

(সিগারেটের মূল উপাদান নিকোটিন। তাই সিগারেট শব্দটি এখানে নিকোটিনের প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।)

আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশনের মানসিক রোগ শ্রেণীবদ্ধকরণ পদ্ধতির সাম্প্রতিকতম সংস্করণ DSM-5-এ সিগারেট খাওয়ার কারণে অসুস্থতাকে মূল তিনটি লক্ষণের অন্তর্গত ১৫টি উপ-বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে বর্ণনা করা হয়েছে।

এক বছর ধরে সিগারেট সেবনের ফলে নিম্নোক্ত উপ-বৈশিষ্ট্যগুলোর অন্ততঃপক্ষে দুটির উপস্থিতি দেখা দেয়:

ক) প্রত্যাশিত সময়ের চেয়ে অনেক বেশি দিন ধরে বিপুল পরিমাণে সিগারেট সেবন:
১। সিগারেট ছাড়ার বা কমিয়ে দেয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়া।
২। সিগারেট সংগ্রহ ও ব্যবহারের জন্য অস্বাভাবিক রকমের বেশি সময় ব্যয় করা।
৩। সিগারেটের জন্য তৃষ্ণা বোধ করা।
৪। সিগারেট ব্যবহারের কারণে দায়িত্ব ও অবশ্য-কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হওয়া।
৫। সিগারেটের জন্য সামাজিক ও আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে জেনেও তা গ্রহণ করতে থাকা।
৬।সিগারেট খাওয়ার সুযোগ পাওয়ার জন্য সামাজিক, পেশাগত ও চিত্তবিনোদনের সুযোগগুলোকে সহজেই হাতছাড়া করতে রাজী থাকা।
৭। বিপজ্জনক পরিবেশেও সিগারেট খাওয়া।
৮। সরাসরি সিগারেটের জন্যই কোনো শারীরিক বা মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে জেনেও সিগারেট খাওয়া চালিয়ে যাওয়া।

খ) সিগারেটের প্রতি টলারেন্স সৃষ্টি হয়েছে এমন লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া:
৯। প্রত্যাশিত মাত্রার মজা পাওয়ার জন্য ক্রমাগত বেশি বেশি পরিমাণে সিগারেট সেবন করা লাগছে বা বর্তমান মাত্রার সিগারেট খেয়ে আর আগের মত মজা পাওয়া যাচ্ছে না।

গ) সিগারেট সেবন বন্ধ করে দিলে উইথড্রলের উপসর্গগুলো দেখা দেয়:
১০। সিগারেট উইথড্রলের জন্য নির্দিষ্ট কিছু উপসর্গের উদ্ভব হয়, যেমন- মাথা ব্যথা, বমি বমি ভাব, কোষ্ঠবদ্ধতা বা ডায়রিয়া, দূর্বলবোধ, ঘুম ঘুম ভাব, অনিদ্রা, খিটখিটে মেজাজ, মনোসংযোগে কষ্ট হওয়া, মন খারাপ ভাব, ক্ষুধা বৃদ্ধি ও বেশি বেশি খাওয়া, মিষ্টিজাতীয় খাবারের প্রতি লোভ বৃদ্ধি পাওয়া, সিগারেটের জন্য তৃষ্ণাবোধ করা।
১১। উইথড্রলের উপসর্গগুলো কাটানোর জন্য আরো বেশি পরিমাণে সিগারেট বা তার বিকল্পদ্রব্য গ্রহণ করতে হয়।

সিগারেট ছেড়ে দেয়ার পর সিগারেট না খেয়ে থাকার সময়কাল ও কেন খাচ্ছে না তা নিম্নোক্তভাবে প্রকাশ করা হয়:
১। মাত্রই সিগারেট থেকে মুক্ত হয়েছে- সিগারেট ছাড়ার পর গত ৩ থেকে ১৩ মাসের মধ্য তামাকজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করে নাই।
২। মোটামূটি আস্থা রাখার মত মুক্ত হয়েছে- ১২ মাসের বেশি সময় ধরে তামাকজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করে নাই।
৩। বিকল্প ব্যবস্থার মাধ্যমে মুক্ত- যেমন, নিকোটিন প্যাচ ব্যবহারের মাধ্যমে তামাকজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ থেকে মুক্ত।
৪। নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে থাকায় মুক্ত- যেমন, হাসপাতাল বা সংশোধানাগার, যেখানে সিগারেট নিষিদ্ধ।

সিগারেটের প্রতি কারো আসক্তি কতটা তীব্র তা নির্দেশ করার জন্য চিকিৎসক নিম্নোক্ত নির্দেশনা সাহায্য নিয়ে থাকেন:
১। মৃদু আসক্তিঃ যখন উপরোক্ত উপসর্গগুলোর মধ্যে দুই বা তিনটি উপস্থিত।
২। মাঝারি আসক্তিঃ চার বা পাঁচটি উপসর্গ উপস্থিত।
৩।তীব্র আসক্তিঃ ছয় বা তার অধিক উপসর্গ উপস্থিত।

উপরের আলোচনাটা আপনার কাছে কিছুটা খটরমটর লাগতে পারে। তাই আসুন মস্তিষ্ককে একটু বিশ্রাম দিই। একটা খেলা খেলি,

নীচের ছকটি পূরণ করুন। আপনার জন্য প্রযোজ্য ঘরে টিক চিহ্ন দিন-

আসুন সিগারেট ছাড়ি table

আপনার প্রাপ্ত স্কোরগুলো যোগ করুন।

প্রাপ্ত ফলাফলের ব্যাখ্যা:

স্কোর ৬ বা ততধিক- সিগারেটের প্রতি আসক্তি চরম পর্যায়ে।

স্কোর ৫ বা তার কম- সিগারেটের প্রতি আসক্তি কম থেকে মধ্যম পর্যায়ের।

তা, আপনার স্কোর কত হল? লিখে রাখুন পরে এটা আমাদের কাজে লাগবে।

আজ এপর্যন্তই।

তবে যাবার আগে আপনার জন্য একটা ধাঁধা: বলুনতো কিসের আসক্তিটা সবচেয়ে প্রবল?

– মদ গাজা হিরোইন ইয়াবা না সিগারেট?


প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না কর্তৃপক্ষ।

Previous articleআমি সব সময় অস্থির থাকি
Next articleদীর্ঘদিন ধরে ঘুমের ওষুধ খাওয়া থেকে সাবধান

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here