সব বিষয় নিয়ে হতাশ হওয়াটা মোটেই সুস্থতার লক্ষণ নয়। মানসিক স্বাস্থ্য-বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, কোনো আশা নেই- এই ধরনের বোধ থেকে আশাহীনতা অনুভূতির সৃষ্টি হয়।
ক্যালিফোর্নিয়ার মালিবুতে অবস্থিত ‘বিচ হাউজ ট্রিটমেন্ট সেন্টার’য়ের থেরাপিস্ট ডা. এমিলি এক্সটেইন বলেন, “একাকী বোধ, আটকে থাকা অনুভূতি, কোনো কাজ করতে না পারা, সবসময় বিষণ্ন থাকার মানে আপনার ভেতর আশাহীনতা কাজ করছে।”
“এটা আপনাকে স্তব্ধ করে রাখতে পার। আর সেটার কারণ থাকতে পারে পেশাগত কিংবা ব্যক্তিগত জীবন।” বললেন এক্সটেইন।
তবে আশার বিষয় হল আশাহীন হওয়ার দূর করার উপায়ও রয়েছে।
আশাহীনতা কী?
এটা একটা জটিল বিষয়। যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টা’র লাইসেন্স প্রাপ্ত মনোবিজ্ঞানি ডা. তামারা ডি’অঞ্জু টার্নার আশাহীন হওয়ার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন, “কঠিন সময় কখনই ভালো হবে না- এরকম বোধ বা বিশ্বাসকে আশাহীন হওয়া বোঝায়।”
“সারাক্ষণ নেতিবাচক ঘটনার সম্মুখিন হওয়ার বা এই ধরনের অভিজ্ঞতা বেশি ঘটা আর সেগুলো থেকে উত্তরণের পথ না পেলে এই ধরনের বোধের তৈরি হয়। তবে এটাই একমাত্র কারণ নয়।”
তিনি আরও বলেন, “শক্তির মাত্রা, আগের রাতে ঘুমের পরিমাণ, হরমোন, মানসিক চাপ- ইত্যাদির ওপর আমাদের মন-মেজাজ নির্ভর করে। আর বেশিরভাগ সময় আশাহীন থাকার আরও বড় কারণ থাকতে পারে। যেটা হতে পারে বিষাদগ্রস্ততা বা দুশ্চিন্তা।”
এই ধরনের মানসিক অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে কিছু পন্থার আশ্রয় নেওয়া যেতে পারে।
কাছের মানুষের সঙ্গে কথা বলা: যদিও এই ধরনের অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা খুব কঠিন। যেমন- ‘আমার খারাপ লাগছে, তবে কেনো তা জানি না’ বা ‘মনে হচ্ছে আমি হারিয়ে গেছি কিন্তু কেন এরকম লাগছে বলতে পারছি না।’
পেনসিলভেনিয়ার মনোচিকিৎসক ডা. অ্যানা হাইয়াট নিকোলেইডস বলেন, “এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো উপায় হল নিজেকে প্রকাশ করার চেষ্টা করা। কারণ বন্ধু বা কাছের মানুষরা সবসময়ই খারাপের মধ্যেও ভালো বিষয়টা দেখাতে পারে।”
সেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করা: যদিও অগণিত ঘটনা এবং অবস্থা থেকে আশাহীনতার সৃষ্টি হয়। তারপরও কোনটা পারবেন আর কোনটা পারবেন না সেটা চিহ্নিত করা গুরুত্বপূর্ণ। বেশিরভাগ সময়ই এই অনুভূতি আপনা-আপনি চলে যায়না। এছাড়াও মানসিক চিকিৎসক কিংবা যৌথভাবে কারও সঙ্গে চেষ্টা করে এই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসা যায়। একই ধরনের অনুভূতিতে আছেন এরকম মানুষ খুঁজে বের করতে পারলে নতুন করে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠার পাশপাশি হারিয়ে যাওয়া উৎসাহ উদ্দিপনাও ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
নিকোলেইডস বলেন, “সেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করা শুধু নতুন বন্ধুই যোগাড় করবে না বরং সমাজের জন্য কিছু করতে পারলে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবার একটা প্রক্রিয়া শুরু হবে। মনে হবে আপনি একা নন, আশা এখনও আছে। আর এই অনুভূতি পরিবর্তন আনতে সাহায্য করে।”
অনেকসময় কোনো ঘটনা বা বিষয়ের কারণে আশাহীনতা কাজ করে। যেমন- কাছের কারও অসুস্থতা কারণে নিজের ভেতর আশাহীন বোধ করা।
নিকোলেইডস এক্ষেত্রে পরামর্শ দেন যে, “কোনো বিষয় নিজের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে না থাকলে সেটা নিয়ে আশাহীন হওয়ার কিছু নেই। কারণ প্রত্যেকের জীবনেই এরকম হয়। আবার যদি চাকরিক্ষেত্রে কোনো ঘটনা থেকে আশাহীন হতে হয় সেক্ষেত্রে নতুন আশা হতে পারে নতুন চাকরি খোঁজা- যা আসলেই নতুন চাকরি পাওয়াতে সাহায্য করবে।
ছোট স্বপ্ন পূরণ করা সহজ: সবকিছু নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া বা সব কিছুই একসঙ্গে ঠিক করার চেষ্টা বাদ দিয়ে নির্দিষ্ট যৌক্তিক বিষয় সমাধানের চেষ্টা করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিস্টিন এ মিকোফ, জীবনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ লেখক বলেন, “কাজগুলোকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে ফেললে সেটা করতেই সুবিধা হয় না পাশাপাশি সেটা করার আত্মবিশ্বাসও বৃদ্ধি পায়। আর আত্মবিশ্বাস বাড়লে আশাহীন হওয়ার সম্ভাবনাও কমে।”
ধ্যন ও নিজের যত্ন: যদিও শুনতে অদ্ভূত লাগতে পারে। তবে নিজের যত্ন নিলে হতাশাবোধ কাটে। সেটা হতে পারে রূপচর্চা যেমন- ফেইশল করা। রূপচর্চা করা অনেকের পছন্দ না। সেক্ষেত্রে হেঁটে ঘুরে আসাও যেতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফ্যামিলি ইউনাইটেড ফর রিকোভার’য়ের প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পর্কবিষয়ক বিশেষজ্ঞ অ্যান্ড্রিয়া আর্লিংটন বলেন, “ধ্যান খুব ভালো কাজ করে। আর প্রতি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অন্তত তিনটি বিষয় লিখুন যেগুলো নিয়ে আপনি কৃতজ্ঞ। এরপর রাতে একটা ভালো ঘুম দিন।”
অভিজ্ঞ চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া: রোগী নিজে না পারলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মনোচিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ এই আশাহীনতায় ভোগাটা বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত। আর সেটা মানসিক না হয়ে শারীরিকও হতে পারে।
নিকোলাইডস বলেন, “অভ্যাস পরিবর্তন করার পরও মন থেকে যদি ভোঁতা অনুভূতি না যায় অথবা যদি আত্মহত্যার কথা মাথায় আসে তবে অবশ্যই অভিজ্ঞ চিকিৎসকের সাহায্য নিতে হবে। মনে রাখতে হবে আপনার ভাবনা চিন্তার বাইরেও অনেক উপায় আছে। আর সেই আশার আলো দেখাতে পারে অভিজ্ঞ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত চিকিৎসক।”