অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি কি মানসিক প্রশান্তির নিমিত্ত হতে পারে?

অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি কি মানসিক প্রশান্তির নিমিত্ত হতে পারে?

মনসতত্ত্ববিদগণ বলেন, অর্থ আমাদের মানসিক অবস্থাকে প্রভাবিত করতে পারে। তবে মানসিক প্রশান্তির নিমিত্ত হিসেবে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি হয়তো গুরুত্বপূর্ণ নাও হতে পারে।

আমরা একটি অত্যন্ত প্রতিযোগিতাপূর্ণ বিশ্বে বসবাস করছি। বর্তমান বিশ্বে অধিকাংশ মানুষের কাছেই সামাজিক মান-মর্যাদা এবং সম্মান নির্ভর করে অর্থনৈতিক অবস্থার উপর। তাই আমরা আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থার উত্তর উত্তর বৃদ্ধিতে ব্যক্তি, সামাজিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে করে চলেছি প্রচেষ্টা।

আর অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রচেষ্টা অনেক ক্ষেত্রেই ব্যক্তি পর্যায়ের সাথে সাথে বৈশ্বিক ক্ষেত্রে সৃষ্টি করছে চরম বিশৃঙ্খলা। তবে সবকিছু ছাপিয়ে এই সব ধরণের নেতিবাচক প্রভাব সত্ত্বেও শুধুমাত্র সমৃদ্ধি এবং মানসিক সন্তুষ্টি বৃদ্ধি করবে ভেবে আমরা প্রতিনিয়ত এই প্রয়াস করে চলেছি। এই লেখার মাধ্যমে আমরা মানসিক সন্তুষ্টি এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির মধ্যাকার এই সম্পর্কের যথার্থতা যাচাই করার চেষ্টা করব।

মানসিক সন্তুষ্টির নিমিত্তে কি কি কারণ থাকতে পারে সেটি নিয়ে নির্দিষ্ট উত্তর দেওয়া প্রায় অসম্ভব। কারণ এক একজন মানুষের মানসিকতা, ব্যক্তিত্ব, ইচ্ছে এবং ভালোলাগা মন্দলাগা কখনোই সম্পূর্ণরূপে অপর একজন মানুষের সাথে মেলা সম্ভব নয়।

এক এক জন মানুষ এক এক ভাবে মানসিক সন্তুষ্টি লাভ করতে পারে। আর তাই সবার মানসিক সন্তুষ্টিকে একটি নির্দিষ্ট নিয়মে আবদ্ধ করা প্রায় অসম্ভব। তবে সামগ্রিক ভাবে আমরা একজন মানুষকে তখনই মানসিকভাবে সন্তুষ্ট বলতে পারি যখন তার মৌলিক চাহিদাগুলো সঠিকভাবে পূর্ণ হয় এবং ব্যক্তি প্রাকৃতিক ও সামাজিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে একটি টেকসই অবস্থায় পৌঁছায়।

আর অর্থনৈতিক অবস্থা অনেক ক্ষেত্রেই যেহেতু এসব চাহিদা পূরণ করে, তাই সাধারণ ভাবে অর্থকে মানসিক সন্তুষ্টির মূল ভাবা হয়ে থাকে।

যদি একজন ব্যক্তির উপার্জনের সাথে মানসিক সন্তুষ্টির সম্পর্ক বিবেচনা করা হয় তাহলে বলা যায়, একটি নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত মানসিক সন্তুষ্টির পেছনে অর্থনীতির ভূমিকা থাকে। অর্থ ব্যক্তিকে মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণে সহায়তা করে। তাই বলা যায়, মানসিক সন্তুষ্টির সাথে অর্থনৈতিক অবস্থার সম্পর্ক রয়েছে।

কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে যে, মানুষের অর্থের পরিমাণ যত বাড়ে, তার মানসিক প্রশান্তিও সেই মাত্রায় কমে যায়। তাই বলা যায়, একটি নির্দিষ্ট সীমা পার করার পর অর্থের বৃদ্ধি মানসিক অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অর্থাৎ নির্দিষ্ট সীমার পর অর্থ মানসিক সন্তুষ্টি বৃদ্ধিতে নয় বরং হ্রাসে ভূমিকা পালন করে।

অনেকেই মনে করেন, যার আর্থিক অবস্থা যত ভালো তার মানসিক সন্তুষ্টি ততো বেশী। আর এটি একেবারেই সঠিক নয়। গবেষণায় দেখা গেছে, অনেক মানুষই অনেক কম অর্থ উপার্জন করেও নিজের সামাজিক ও পারিবারিক অবস্থা নিয়ে মানসিকভাবে সন্তুষ্ট এবং তিনি সুখী।

আবার এমন অনেক মানুষই রয়েছে যারা অনেক অনেক বেশী অর্থ উপার্জন করেও সুখী নন, মানসিক ভাবে সন্তুষ্ট নন। ব্যক্তি পর্যায় থেকে বৈশ্বিক পর্যায় সব ক্ষেত্রেই এই অসামাঞ্জস্যতা খুঁজে পাওয়া যায়। তাই অর্থ লাভ করলেই মানসিক সন্তুষ্টি আসে বা যত বেশী অর্থ ততো বেশী সুখ এমন নীতির ভিত্তি সত্যিই ত্রুটিপূর্ণ।

এই আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট যে, অনেক কম অর্থের মালিক হয়েও বা উপার্জন করেও অনেক বেশী সুখের অনুভূতি পাওয়া যায়। আবার অনেক বেশী উপার্জন করেও মানুষ মানসিক সন্তুষ্টি বঞ্চিত হয়ে থেকে যেতে পারে।

সুতরাং বলা যায়, মানসিক সন্তুষ্টি অর্থের উপর নয় বরং নির্ভর করে ব্যক্তির চিন্তা ভাবনার উপর। কেউ হয়তো অনেক কম অর্থ লাভ করেও সেটি দিয়েই নিজের প্রয়োজনকে সংজ্ঞায়িত করছেন এবং নিজেকে সুখী ভাবছেন।

আবার কেউ হয়তো অনেক বেশী অর্থের মালিক হয়েও ভাবছেন তার চাহিদা পূরণ হয়নি আরও বেশী কিছু প্রয়োজন এবং ফলস্বরূপ মানসিক সন্তুষ্টি লাভ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন।

লিংক: https://www.psychologytoday.com/intl/blog/crisis-earth/202108/do-we-need-economic-growth-be-happy

অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে

Previous articleনারীরা যেসব ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকেন
Next articleঅটিজমের আধুনিক চিকিৎসা: ডা. টুম্পা হালদার

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here