মনিকাকে দেখে রাশেদের ভালো লেগেছিল। ঘন কালো ঝাঁকড়া চুল, ভরাট দেহ, চাঁদের মত গোল মুখ আর খাড়া নাক সব মিলিয়ে তার মনে হয়েছিল এমন মেয়ে আর দ্বিতীয়টি পাওয়া যাবে না। তাই কনে দেখার দিনই বিয়ে হল। সবকিছু নির্ঝঞ্ঝাটেই হয়ে গেল। সমস্যা দেখা দিল বাসর ঘরে। মনিকা বসে ছিল খাটে। বিয়ের সাজে মনিকাকে আরো সুন্দর আরো আকর্ষনীয় লাগছিল। তাই দেখে হঠাৎ বুকের মধ্যে একটা ভয় ঢুকে গেল।
মনিকাকে কি সে সুখী করতে পারবে? আর্থিক সমস্যা তার নেই। শরীরটাও তার ভালো। শুধু যৌন বিষয়েই সে ভয় পেতে থাকল। কারণ মনিকার মত তেজী শরীর নয় তার। তার গড়ন হালকা পাতলা এবং উচ্চতায় সে মনিকার তুলনায় একটু খাটো। আশঙ্কাটাকে সে তাড়াতে পারল না। কথায় আছে যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যা হয়। তার ক্ষেত্রেও তাই হলো। তার উত্তেজনা বাড়তে বাড়তে এক সময় পানি হয়ে গেল। মনিকার ভিতরে তার আর যাওয়া সম্ভব হলো না।
এ ঘটনায় মনিকা এতটাই হতাশ হয়ে পড়ল যে ঐ বিয়ের রাতে মুখ ফুটে বলে ফেলল, তুমি আমার মনটা ভেঙে দিলা, তোমাকে নিয়ে আমি কিভাবে সংসার করব?
এতক্ষণ সেক্স্যুয়াল পারফরম্যান্স এ্যাংজাইটির একটি বাস্তব চিত্র তুলে ধরলাম। যারা এধরনের সমস্যায় ভুগছেন তাদের বেডরুমের গল্পটা এর থেকে খুব বেশি ভিন্ন নয়। যদিও এধরনের ঘটনাকে যৌন ক্ষমতার ঘাটতি হিসেবে সবাই দেখে বা বোঝে। কিন্ত এধরনের নিস্তেজ হওয়াটা যৌন ক্ষমতার সাথে সম্পর্কিত নয়। বরং ভয় বা আশঙ্কাই এর মূল কারণ। যারা এধরনের সমস্যায় ভোগে দেখা যায় তাদের যৌন ক্ষমতা ঐ বিশেষ মুহুর্তেই চলে যায়। অনেকটা বিদ্যুৎ চলে যাওয়া বৈদ্যুতিক বাতির মত। বৈদ্যুতিক বাতি যেমন সুইচ অন করলে জ্বলে ওঠে আবার সুইচ অফ করলে নিভে যায়। তাদের ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনটিই ঘটে। শরীরে এ্যাংজাইটির সাথে যৌন উত্তেজনার সম্পর্কটাও এরকম। এ্যাংজাইটি বাড়তে থাকলে ইরেকশন চলে যায়। ইরেকশন বলতে আমরা লিঙ্গের উত্থান বা শক্ত হওয়াকে বুঝি।
কিভাবে হয়? বলতে গেলে সব পুরুষদের শরীরই এমনভাবে তৈরি যে যখনই ব্রেইন সম্ভাব্য বিপদের সংকেত পাঠায়, ভয়টা প্রবল হয়ে ওঠে এবং শরীর জৈবিক ভাবে তৈরি হয় সমস্যা কাটিয়ে ওঠার জন্য। শরীরে তখন অধিক মাত্রায় এ্যাড্রেনালিন তৈরি হয়, হার্ট রেট বেড়ে যায় এবং রক্তনালী সংকুচিত হয়। এর ফলে রক্ত পুরোমাত্রায় পেনিসে যেতে পারে না। সত্যি কথা বলতে কি পেনিস বা লিঙ্গের যে উত্থিত বা শক্ত অবস্থা আমরা দেখি তা হয় মূলত পেনিসে রক্ত জমা হওয়ার কারণে। রক্ত পুরোমাত্রায় যেতে পারে না বলে পেনিসও পুরোমাত্রায় শক্ত হতে পারে না। যা সে ও তার সঙ্গীর জন্য অস্বস্তিকর এবং হতাশাজনক। মনের এই অবস্থাটাই ব্রেইনে স্মৃতি হিসেবে জমা হয়ে থাকে। পরবর্তী সময়ে আবার উত্তেজনার সময় আসলে এই স্মৃতি তাকে আরো এ্যাংজাইটিতে ফেলে। ফলে মনের মধ্যে চিন্তার একটি দুষ্ট চক্র তৈরি হয়ে যায়। যা হয়েছিল রাশেদের ক্ষেত্রে। ঐ চিন্তার দুষ্ট চক্র থেকে বেড়িয়ে আসা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত মনিকার সাথে তার ডিভোর্স হয়ে যায়।
কি করতে হবে?
এ্যাংজাইটিকে দূর করার সহজ উপায় হল জানা। যৌন বিষয়ে অনেকেরই যথেষ্ট ধারণা থাকে না। না জানার কারণে সহজ স্বাভাবিক বিষয়কেও রোগ বলে মনে হয়। তাই আমরা বলব জানুন। তবে অবশ্য জানার সূত্র গুলো নির্ভরযোগ্য হতে হবে। তাই ভালো হয় যদি আপনি একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেন। পারফরম্যান্স এ্যাংজাইটি পুরোপুরি মানসিক ব্যাপার হলেও অনেক ক্ষেত্রে শারীরিক কারণে হওয়া ইরেক্টাইল ডিসফাংশনকেও সে প্রভাবিত করতে পারে। মানসিক বিশেষজ্ঞ শারীরিক এবং মানসিক উভয় কারণকে বিবেচনায় রেখেই চিকিৎসা দেবেন। সেক্ষেত্রে আপনার আংশিক বা ভুল চিকিৎসা পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যাবে। কারণ এ ধরনের সমস্যায় ঔষধ এবং সাইকোসেক্স্যুয়াল ইন্টারভেনশন দুটোরই দরকার হয়।
প্রায় ৯৫% ইরেক্টাইল ডিসফাংশন শুধুমাত্র মানসিক কারণে হয়। তেমন ক্ষেত্রে আপনি নিজেও চেষ্টা করে দেখতে পারেন। তবে ব্যর্থ হলে হতাশ হবেন না।
কীভাবে চেষ্টা করবেন?
– মনের মধ্যে যে দুষ্ট চিন্তা চক্র তৈরি হয়েছে তাকে বন্ধ করুন।
– সাহস সঞ্চয় করুন।
– মনোবল ধরে রাখুন।
– ইতিবাচক চিন্তা করুন।
– সেক্স করার ইচ্ছা থেকে সেক্স করুন।
প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না কর্তৃপক্ষ।