কোনো দেশের রাষ্ট্রপতি মানেই তিনি আলাদা গুরুত্ব বহন করেন। তার জন্ম তারিখ, জন্মস্থান, মৃত্যুর তারিখ-কারণ ইত্যাদিতে সাধারণ মানুষের আগ্রহ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আর সেটা যদি হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র? তাহলে তো প্রশ্নের অবকাশই থাকে না। মার্কিন রাজনীতির ইতিহাসে অনেক রাষ্ট্রপ্রধান এসেছেন- যারা সারা জীবন জটিল কিছু মানসিক রোগের সঙ্গে বসবাস করেছেন।
এবিই লিংকন
মার্কিন ১৬তম রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিংকন। সিভিল ওয়ারের সময় সুশৃঙ্খল পদক্ষেপ এবং আরও অনেক কারণে তার খ্যাতি রয়েছে। কিন্তু ‘বিষণ্ণতা’ রোগে আক্রান্ত ছিলেন। বিশেষজ্ঞরা এভাবে ব্যাখ্যা করছেন, “এবিই প্রায়ই জনসম্মুখে কাঁদতেন এবং দুঃখ জাগানিয়া কবিতা আবৃত্তি করতেন”। তিনি ছোটবেলায় অসংখ্যবার আত্মহত্যা করবেন ভেবেছেন। এবিই বলতেন, “পৃথিবী তার কাছে খুবই কঠিন এবং ভয়ঙ্কর, রহস্যে ভরা মনে হয়”।
তবে মানসিকভাবে তিনি অসুস্থ হলেও এই অসুস্থতাই তাকে ওই মানুষ হয়ে গড়ে উঠতে সাহায্য করেছিলো। বিষণ্ণতা ঢাকতেই তিনি ক্রমাগত কাজের মধ্যে ডুবে থাকতেন। যা দিনে দিনে তাকে দক্ষ এবং সমর্থ করে তোলে।
টেডি রুজভেল্ট
থিওডোর রুজভেল্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২৬তম রাষ্ট্রপতি। নাম শুনে মনে হতে পারে এই রাষ্ট্রপ্রধান কোমল ছিলেন। তবে তার টেডি বিয়ারের মতো কাজ করার ক্ষমতা ছিলো। থিওডোর রুজভেল্ট অ্যাথলেটিক ছিলেন। নিজেকে শক্তিশালী প্রমাণ করতে তিনি আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকায় ভয়ঙ্কর পর্বতারোহণ করেন। জীবনবৃত্তান্ত লেখ ক্যানডিস মিলার্ড দক্ষিণ আমেরিকার অভিযান সম্পর্কে বলতে গিয়ে তার বইতে লেখেন, থিওডোর রুজভেল্ট সব সময় শিশুর মতো দুর্বল থাকতেন। কারণ তার অ্যাজমা ছিলো। এ অবস্থার কারণে তিনি বিষণ্ণতায় চলে গিয়েছিলেন।
এফডিআর
ফ্র্যাঙ্কলিন ডেলানো রুজভেল্ট কিন্তু টেডির সন্তান ছিলেন না। তবে তার পঞ্চম ভাই (কাজিন) ছিলেন। যখন জাপান হাওয়াইয়ের পার্ল হারবর আক্রমণ করে তখন দেশের শাসন ভার তার ওপরই ছিলো। আবার যখন যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে, তখনও তিনি দায়িত্বে। যারা ‘পার্ল হারবর’ চলচ্চিত্রটি দেখেননি বা কখনও নামও শোনেননি তাদের জন্য বলা- এফডিআর তার একাগ্রতার কারণে শত যন্ত্রণার পরও হুইলচেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায়। দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার আগে ১২ বছর বয়সে তিনি পোলিওতে আক্রান্ত হন। এরপর তার পা অকার্যকর হয়ে পরে। তবে বিষয়টি ঢাকতে তার চেষ্টা ছিলো অসামান্য। মার্কিন ৩২তম রাষ্ট্রপ্রাধান তার নিজের হুইল চেয়ার নিজেই তৈরি করেন এবং সেটা ছিলো খুবই হালকা। হাঁটার জন্যও তিনি বিকল্প চিন্তা করেন। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে তিনিও বিষণ্ণতায় ভুগতেন।
জেএফকে
জন ফিট্জেরাল্ড কেনেডি বা জন এফ. কেনেডি। যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫তম এই রাষ্ট্রপতি জেএফকে নামেও পরিচিত। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তিনিই সবচেয়ে কম বয়সে রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত হন। তবে তিনি ব্যাক পেইনে ভুগতেন। মাঝে মাঝে এই ব্যথা এত বেড়ে যেতো যে তিনি উড়োজাহাজে এমনকি সিঁড়িতেও উঠতে পারতেন না। তার এডিশন’স (অ্যাড্রেনাল গ্ল্যান্ড সংক্রান্ত) রোগ ছিলো। যে কারণে তাকে প্রতিদিন বাইরে থেকে হরমোন নিতে হতো। এ রোগে ওজন কমে যায়, শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা হয়, চামড়ার রঙ কালো হয়ে যায়, রোম ঝরে যায়। এ অবস্থায় তার মানসিক অবস্থা ধারণা করাই যেতে পারে।
বিগ বিল
তার সবচেয়ে বড় অর্জন ছিলো একই সঙ্গে তিনি যেমন নির্বাহী এবং বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ পদে পৌঁছেছিলেন। উইলিয়াম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২৭তম রাষ্ট্রপতি ও ১০ম প্রধান বিচারপতি ছিলেন হাওয়ার্ড ট্যাফট। কিন্তু একজন রাষ্ট্রপ্রধানের জীবনের সব অনুভূতি কেড়ে নিতে পারে অতিস্থূলতা। তার মানসিক অবস্থা এতটা খারাপ হয়েছিলো- বিগ বিল লিখছেন, ‘আমার কখনও মনে হয়নি আমি রাষ্ট্রপতি ছিলাম’। জানা যায়, ছয় ফুট লম্বা এই ব্যক্তির ওজন হয়েছিলো ৩৫০ পাউন্ড। এমনও গুঞ্জন রয়েছে, একবার বিগ বিল হোয়াইট হাউজের বাথট্যাবে আটকে গিয়েছিলেন। পরবর্তীতে তার জন্য বিশেষভাবে বাথট্যাব বানিয়ে নেওয়া হয়। ১৯০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দ্য জার্নাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ একটি ছবি প্রকাশিত হয়, রাষ্ট্রপ্রধানের সেই ‘পুকুর’ আকারের ট্যাবে আয়েশি ভঙ্গিতে চারজন বসে আছেন!
জন অ্যাডামস
তিনি স্বাধীনতার পদপ্রদর্শক হিসেবে পরিচিত। প্রথম ভাইস-প্রেসিডেন্ট এবং ‘ইয়াং ডেমোক্রেসি’র দ্বিতীয় প্রেসিডেন্টও মানসিক অসুস্থতার সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন। বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন তার নানা ধরনের সাইকায়াট্রিক ডিজঅর্ডার ছিলো। সারা জীবন তিনি ‘বাইপোলার ডিজঅর্ডার’এ ভুগেছেন।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে