আজকের দিনে বেশিরভাগ মানুষই কর্পোরেট দুনিয়ার সঙ্গে যুক্ত, সেখানে স্ট্রেস এবং অ্যাংজাইটি যে সঙ্গী হয়ে উঠবে, তা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আর স্ট্রেস থেকে একদিন না একদিন ডিপ্রেশনও চলে আসে।
গবেষণা বলছে, মাত্রাতিরিক্ত ওজন এবং স্মোকিং-এর কারণে হার্টের যতটা ক্ষতি হয়, তার থেকেও বেশি মাত্রায় ক্ষতি হয় অ্যাংজাইটি এবং মানসিক অবসাদের কারণে। দীর্ঘ সময় ধরে কেউ চিন্তায় থাকলে বা ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হলে হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় ৬৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে প্রায় ৬৪ শতাংশ। এ ছাড়া প্রায় ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পায় ব্লাড প্রেসারের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা এবং আর্থ্রাইটিসের মতো রোগের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায় ৮৭ শতাংশ।
তাহলে এমন পরিস্থিতিতে সুস্থ থাকার উপায় কী? তাই কেউ সুস্থ থাকতে চাইলে বেশ কিছু জিনিসকে খাবারের মেন্যুতে রাখতে হবে। এই খাবারগুলোতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা শরীরে প্রবেশ করার পর মানসিক অবসাদ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। সেইসঙ্গে অ্যাংজাইটির প্রকোপ কমতেও সময় লাগবে না। তাই এই খাবারগুলো সম্পর্কে একটু জেনে নিই…
অ্যাভোকাডো
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, এই ফলটিতে উপস্থিত বেশ কিছু উপকারি ফ্যাট, প্রোটিন, ভিটামিন কে, ভিটামিন বি৯, বি৬ এবং বি৫ শরীরে প্রবেশ করার পর যেকোনো পরিস্থিতিতে মস্তিষ্ক ভালো রাখতে সাহায্য করে। ফলে স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে গিয়ে ডিপ্রেশনে বা অ্যাংজাইটিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় থাকে না বললেই চলে।
জাম
জামের ভেতরে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, শরীরে প্রবেশ করা মাত্র শরীর থেকে টক্সিক উপাদান বের করে দেয়। ফলে একদিকে যেমন ক্যান্সারের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে, তেমনি মন-মেজাজও এতটাই ভালো হয়ে ওঠে যে মানসিক অবসাদে আক্রান্ত হওয়ার কোনো আশঙ্কাই থাকে না।
বাদাম
এতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন বি২, ভিটামিন ই, ম্যাগনেসিয়াম এবং জিঙ্ক। এই সবকটি উপাদান সেরাটোনিন হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। সেই সঙ্গে শরীরে উপস্থিত ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানদের বের করে দেয়। ফলে কোনোভাবেই স্ট্রেস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
টমেটো
টমেটোর লাইকোপেন নামক এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে প্রবেশ করার পর মন ভালো রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ফলে মানসিক অবসাদের মতো পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে সময় লাগে না। এই কারণেই যাদের খুব স্ট্রেসফুল কাজ করতে হয়, তাদের প্রতিদিন একটি করে কাঁচা টমেটো খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।
মাছ
আসলে মাছে উপস্থিত ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন বি, বি৬ এবং বি১২ শরীরে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু তাই নয়, এই উপাদানগুলো মানসিক অবসাদের মতো রোগের আক্রমণ থেকে বাচ্চাদের বাঁচাতেও নানাভাবে সাহায্য করে থাকে।
দই
স্কুল থেকে ফেরার পর প্রতিদিন যদি আপনার বাচ্চাকে এক বাটি করে দই খাওয়াতে পারেন, তাহলে তাদের শরীরে সরোটোনিন হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়, যা স্ট্রেস কমানোর পাশাপাশি ব্রেন পাওয়ার বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর একবার ব্রেন পাওয়ার বেড়ে গেলে অ্যাংজাইটির মতো সমস্যা কমে যাবে। সেইসঙ্গে পড়াশোনাতেও ঘটে উন্নতি।
নারকেল
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নারকেলে উপস্থিত বেশ কিছু উপকারি ফ্যাট শরীরে প্রবেশ করার পর মস্তিষ্কের ভেতরে ফিল গুড হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। সেই সঙ্গে ব্রেন পাওয়ার এতটা বাড়িয়ে দেয় যে স্ট্রেস এবং মানসিক অবসাদের প্রকোপ তো কমেই, সেই সঙ্গে বুদ্ধি এবং স্মৃতিশক্তিরও উন্নতি ঘটে।
সাইট্রাস ফল
এই ফলের ভেতরে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্রাকৃতিক সুগার। যা স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ কমাতে সাহায্য করে, সেই সঙ্গে মানসিক অবসাদকে দূরে রাখতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এজন্য বাচ্চাদের প্রতিদিন এক বাটি করে ফল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।
পালং শাক
বাঙালির প্রিয় এই শাকটি নিয়মিত খাওয়া শুরু করলে শরীরে আয়রন এবং ফলিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। যার প্রভাবে মস্তিষ্কের ভেতরে স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ কমে। ফলে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটতে শুরু করে। সেইসঙ্গে সার্বিকভাবে শারীরিক ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।
রসুন
এতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের ভেতরে অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের মাত্রা কমানোর মধ্যে দিয়ে স্ট্রেস এবং অ্যাংজাইটি কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু তাই নয়, ছোট থেকেই নিয়মিত রসুন খাওয়ার অভ্যাস করলে হার্টের কর্মক্ষমতা যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনি ডায়াবেটিসের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও কমে যায়।