একাকিত্ব মানবজীবনের একটি বিরাট সমস্যা। একা একা থাকলেই শুধু একাকিত্ব আমাদের গ্রাস করে, তাই নয়। যান্ত্রিক জীবনের ব্যস্ত চক্রে থাকতে থাকতেও আমাদের অনেকসময় একাকিত্ব গ্রাস করে ফেলে। এর নীরব বিস্তৃতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করে।
একাকিত্বের শেকড় প্রথমে অল্প অল্প করে ছড়িয়ে ধীরে ধীরে সর্বগ্রাসী রুপ নেয়। একাকিত্বকে যত প্রশ্রয় দেয়া যাবে এটি তত বেশি ছড়িয়ে পড়বে। একাকিত্বের ধাক্বা সামাল দিতে অনেকে মাদক ও অসামাজিক কর্মে লিপ্ত হয়ে চূড়ান্ত সর্বনাশ ডেকে আনেন। অথচ কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে ও জীবনধারায় পরিবর্তন এনে সহজেই মোকাবিলা করা যায় একাকিত্বকে।
আসুন জেনে নেই কিছু সহজ ও কার্যকর টিপস-
একাকিত্বের কারণ খুঁজে বের করা
প্রথমে একাকীত্বের কারণ খুঁজে বের করা জরুরি। প্রাপ্ত বিষয়টি আসলে একাকিত্ব নাকি অন্য কোনো সমস্যা, তা জেনে নিন। দরকার হলে মনোবিদ বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেয়া যেতে পারে। কেননা সমস্যা উদঘাটন করতে না পারলে সমাধান করাও সম্ভব নয়। অবশ্যই অবহেলা করা ঠিক না।
ভুল শুধরে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া
সাধারণত আমরা একবার হোচট খেলেই সহজেই হাল ছেড়ে দেই। এইটাই আমাদের অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এই হোচট সামলাতে না পেরে আমরা ডুবে যাই নেতিবাচক ভাবনার রাজ্যে আর এই ভাবনাগুলোই একাকিত্বকে ডেকে আনে। চারপাশে সবাই থাকা সত্ত্বেও অবচেতন মন একাকিত্বের একটা সমীকরণ দাঁড় হয়ে যায়। এজন্য অতীত বা চলমান ভুলগুলোকে পাশ কাটিয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ভুলের কারণ জেনে আবার এগিয়ে যেতে হবে।
নিয়মিত কাজের বাইরেও নিজের শখগুলো জাগ্রত করা
জীবিকার তাগিদে বা কাজের চাপে নিজের আনন্দের জন্য অনেকদিন কিছুই করা হচ্ছে না। তখনই একাকিত্ব তার কাজ শুরু করে। কাজে মনোযোগ কমে যাওয়াসহ নানা উপদ্রব দেখা দিতে থাকে জীবনে। এরকম পরিস্থিতি হলে একটু ব্রেক নেয়া দরকার। আর নিয়মিত কাজের সঙ্গে সঙ্গে পছন্দের শখ ও কাজ নিয়ে কিছুটা সময় মেতে উঠতে পারেন নিজের মতো করে। এই যেমন ধরুন, আপনি যদি পশু পাখি পালন, বাগান করতে, ক্যাকটাস বা বনসাই জমাতে অথবা রান্না করতে ভালোবাসেন তাহলে বেশি না ভেবে আপনার শখের কাজগুলো পুনরায় শুরু করে দিন। শখের কাজ করতে সবারই ভালো লাগে, আনন্দে প্রাণ ভরে ওঠে। ঠিক তখনই একাকিত্ব পালিয়ে যায়। ভালোভাবে সময় কাটানোর পাশাপাশি নিজের সৃজনশীলতাকে ঝালিয়ে নেওয়াও সম্ভব হতে পারে।
পরিমিত ইন্টারনেট ব্যবহারে অভ্যস্ত হোন
বর্তমান যুগে ইন্টারনেট আমাদের পরম বন্ধু। যার মাধ্যমে আমরা যে কোন ধরণের তথ্য অতি সহজেই পেয়ে থাকি। তবে তার ব্যবহার হতে হবে পরিমিত। ইন্টারনেটে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে আমরা আমাদের একাকীত্বকে কিছুটা হলেও দূর করতে পারি। তবে এক্ষেত্রে দুটি বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে, এক- ইন্টারনেটে নির্ভরশীল না হয়ে সেটিকে আসল জীবনের সাথে রিলেট করা, এবং অপরটি হলো ইন্টারনেট থেকে কোন কিছু গ্রহণ করার ক্ষেত্রে সেটার ভাল দিক ও খারাপ দিক বিবেচনা করে নেওয়া।
ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যাওয়া
কোনো কারণ বা প্রেক্ষাপটে নেতিবাচক চিন্তায় মগ্ন থাকা আমাদের করা সবচেয়ে বড় ভুল। এটি আসলে একাকিত্বের চোরাবালির মতো। শুধু তাই নয় অতীতের করা কোনো ভুলগুলো মনে করে আমরা প্রতিনিয়ত কষ্ট পেয়ে থাকি। আর এভাবেই মনের অজান্তেই একাকিত্ব আমাদের গ্রাস করে ফেলে। তাই আমাদের নেতিবাচক ভাবনা বাদ দিয়ে ইতিবাচক দিকগুলোকে পুঁজি করে সামনের দিকে অগ্রসর হতে হবে। ইতিবাচক চিন্তার শক্তি অনেক প্রখর। এটি আমাদের অনুপ্রাণিত করে এবং আত্মবিশ্বাস আকাশচুম্বী করে সফলতা অর্জনের পাশাপাশি একাকীত্বকেও হটিয়ে দেয়।
হালকা ব্যায়াম ও ইয়োগা
দ্রুত একাকিত্ব দূর করার সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হচ্ছে শারীরীক মুভমেন্ট। ব্যায়াম ও ইয়োগা করার মাধ্যমে শরীরে ও মস্তিস্কে রক্ত চলাচল বেড়ে গিয়ে একাকিত্বকে দূরে ঠেলে দেয়। একাকিত্ব দূর করতে মন ভালো রাখা অত্যন্ত জরুরী। আর ব্যায়াম শুধু সুস্বাস্থের জন্যই যে কার্যকারী তা নয় মন ভালো রাখতেও ব্যায়াম বেশ উপযোগী একটি মাধ্যম। মাত্র পাঁচ মিনিট টানা ব্যায়াম করলে এন্ড্রোফিন নামক হরমন নিঃসৃত হয়। যা ১২ ঘন্টা মন ভালো রাখতে আপনাকে সহায়তা করে। আর এর জন্য যে জিমেই যেতে হবে তা জরুরি নয়। ঘরের মধ্যে করা যায় এমন ব্যায়াম করলেও তা আপনার মানসিক অবস্থার উন্নতি ঘটাতে সহয়তা করবে। তাছাড়া অবসাদ দূর করার জন্য ব্যায়ামের বিকল্প আর নেই।
আনন্দ ও একান্ত ভ্রমণ
একাধারে অনেকদিন এক জাগায় থাকা ও আনন্দহীন কাজ করতে করতে একাকিত্ব ও অবসাদ গ্রাস করতে পারে। একবার একঘেয়েমিভাব চলে আসলে আমাদের শরীরে অলসতা বাসা বাধে। ফলে নিয়মিত কাজে মন বসে না, কাজের মান নষ্ট হয়ে যায়। তাই এই অবস্থা দূর করতে কাটানোর জন্য ভ্রমণ হতে পারে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভ্রমণ মানেই শুধুমাত্র দূরের কোনো পর্যটন এলাকা বা বিলাসবহুল ট্যুর না, আপনার আমার আশেপাশে খোলা কোনো প্রাকৃতিক জায়গায় কিছুটা একান্ত সময় কাটালেও মন হয়ে উঠতে পারে একাকিত্ব প্রতিরোধক‘’