বিষণ্ণতার সঙ্গে জিনের একটি সম্পর্ক রয়েছে বলে গবেষণায় তথ্য উঠে এসেছে। ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতায় আক্রান্ত মানুষদের নিয়ে আন্তর্জাতিক এক গবেষণায় এ রকম প্রায় ১০০টি জিনকে শনাক্ত করেছেন গবেষকেরা।
পৃথিবীর ২০টি দেশের ২০ লাখ মানুষের কাছ থেকে নেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ গবেষণা করা হয়। যাদের মধ্যে জিনগত ফারাক যত বেশি ছিল তাদের ক্ষেত্রেই ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ও ঝুঁকি বেশি ছিল।
বিষণ্ণতার সঙ্গে জিনের এ সম্পর্ক খুঁজে পাওয়ায় চিকিৎসার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রতি ছয়জনে একজন ডিপ্রেশনে আক্রান্ত এবং এটিই এখন বর্তমান দুনিয়ায় ডিসএবিলিটি বা প্রতিবন্ধীতার সবচেয়ে বড় কারণ।
মন খারাপ থাকা, উদ্যমহীনতা, নিরানন্দময়তা, ক্ষুধামন্দা, যৌনতায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলাসহ আরও নানা ধরনের লক্ষণ দেখা যেতে পারে বিষণ্ণতায় আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে।
বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হয়ে কেউ হয়তো কয়েক মাস ভোগেন। কারো কারো ক্ষেত্রে আবার এটি হয়ে উঠতে পারে মারাত্মক। দীর্ঘকাল ধরে ভুগতে পারে কেউ-কেউ; আবার কারো অবস্থা এতোটাই তীব্র পর্যায়ে চলে যায় যে তাকে মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়।
এমনকি বিষণ্ণতায় আক্রান্ত মানুষেরা কোনো কোনো ক্ষেত্রে আত্মহত্যার পথও বেছে নেয়।
ডিপ্রেশনে আক্রান্ত ড. রেবেকা লরেন্স জানালেন, তার বিষণ্ণতার মাত্রা এতো বেশি হয়ে গিয়েছিল যে তাকে একটা সময়ে ইলেক্ট্রো-কনভালসিভ থেরাপি (ইসিটি) নিতে হয়েছে।
বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হওয়ার পর ড. লরেন্সের মধ্যে যে উপসর্গগুলো দেখা গেছে তার মধ্যে ছিল কর্মস্পৃহার অভাব। এটা এতই তীব্র ছিল যে, কোনো কিছু করার সামর্থ্যটাই তার হারিয়ে গিয়েছিল। এ ছাড়া খুব ‘নিরাশ’ লাগতো তার। আর খুব ভয় পেতেন তিনি।
বিভিন্ন কারণেই বিষণ্ণতা দেখা দিতে পারে। যেমন যে কোনো স্ট্রেস বা চাপ, ট্রমা, আপনজনের মৃত্যু এবং এ রকম আরও বিভিন্ন পরিস্থিতি ব্যক্তিকে বিষণ্ণতার দিকে ঠেলে দিতে পারে।
এমনকি জিনগত কারণে পারিবারিক ভাবেও অনেকে বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হতে পারেন।
নেচার নিউরোসাইয়েন্স পত্রিকায় প্রকাশিত গুরুত্বপূর্ণ এ আন্তর্জাতিক গবেষণাটির নেতৃত্ব দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের এডিনবোরো ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর ক্লিনিকে ব্রেইন সায়েন্সেসের অধ্যাপক এন্ড্রিউ ম্যাক্লনটোশ।
ডিএনএ-তে পরিবর্তন
গবেষণাটিতে মানুষের ডিএনএর রেকর্ডগুলোকে খতিয়ে দেখা হয়েছে। গবেষণার জন্য যুক্তরাজ্যের বায়োব্যাঙ্ক, দি সাইকিয়াট্রি জিনোমিক্স কনসোর্টিয়াম, পার্সোনাল জেনেটিক্স ২৩ অ্যান্ড মি, এবং রিসার্চ ইঞ্জিনিয়ারিং নামক কয়েকটি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন দাতাদের কাছ থেকে ডিএনএর নমুনা নেয়া হয়।
এ সব নমুনা খতিয়ে দেখে প্রায় ১০০টি জিনের সন্ধান পাওয়া গেছে। যাদের মধ্যে জিনের এ ভিন্নতা ছিল তারাই বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে ছিল।
যাদের মধ্যে জিনগত ভিন্নতা ছিল তাদের ব্রেইনের নার্ভের কোষগুলো মস্তিষ্কের সামনের অংশের সঙ্গে অনেক বেশি মাত্রায় সম্পৃক্ত ছিল।
পার্সোনালিটি ফ্যাক্টর্স
ডিপ্রেশনে আক্রান্ত মানুষদের মধ্যে একটি কমন ডিএনএর সন্ধান পাওয়া গেছে।
ধূমপায়ীদের মধ্যেও এ ডিএনএটি শনাক্ত করা গেছে। এ ছাড়া স্নায়বিক পীড়ার সঙ্গেও বিষণ্ণতার একটা সম্পর্ক রয়েছে বলে জানাচ্ছেন গবেষকেরা।
উদ্বেগ ও বিষণ্ণতার মধ্যে কী ধরণের সম্পর্ক রয়েছে সেটি জানতেও এখন আরও বিশদ অনুসন্ধান চলছে