বিবাহ বিচ্ছেদের পর বিষাদ আচ্ছন্ন হয়ে পড়া প্রায় সবার জন্যই বেশ স্বাভাবিক ঘটনা। অনেকেই এটা নিয়ে হতাশ হয়ে পড়ে যে কবে তাদের এই মর্ম পীড়া শেষ হবে এবং তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে।
বিচ্ছেদ প্রতিটি মানুষের জীবনেই একটি অতি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। কেউই চায়না যার সাথে সারা জীবন একসাথে থেকে সুখে ঘর বাঁধার স্বপ্ন নিয়ে পথ চলা শুরু করেছে তার সাথে মাঝ পথে পৃথক হয়ে যেতে। যাদের মাঝ পথে বিভিন্ন কারণে সঙ্গী থেকে পৃথক হয়ে যেতে হয় তারা বিচ্ছেদের পর মানসিকভাবে অত্যন্ত ভেঙ্গে পড়ে। প্রথম দিকে কিছু দিন পরিবারের অন্যান্য সদস্য, বন্ধু, আত্মীয় স্বজন সবাই পাশে থেকে তাকে মানসিকভাবে সাপোর্ট দেওয়ার চেষ্টা করলেও এর পরের লড়াইটা সম্পূর্ণই নিজের। নিজেকে এই শোক থেকে মুক্তি দিতে আপনাকেই আপনার মূল সহায়ক শক্তি হয়ে উঠতে হবে। ভেঙ্গে না পড়ে এই মর্মপীড়া থেকে মুক্ত হয়ে পুনরায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে হবে। কারণ জীবন কখনোই থেমে থাকবেনা।
বিচ্ছেদের পর প্রতিটি মানুষই নিজ নিজ স্থান থেকে তাদের নিজস্বতা অনুসারে মানসিক কষ্টে ভোগে। যারা মানসিকভাবে একটু বেশি দুর্বল তাদের পীড়া, যারা মানসিকভাবে একটু দৃঢ়চেতা তাদের তুলনায় বেশি হয়। অনেকেই এতোটাই ভেঙ্গে পড়ে যে দিনের অধিকাংশ সময়েই তারা কান্নাকাটি করে কাটিয়ে দেয়। তাদের এমন মনে হয় যে জীবন এখানেই থেমে গেছে। তাদের নতুন ভাবে বাঁচার আর কোন আশা অবশিষ্ট নেই। অনেকের ক্ষেত্রেই এই শোক বহু দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয় এবং এই সমস্যা নিরসনে তাদের কাউনসেলিং এর দরকার হয়। বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এরকম মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়া ব্যক্তিদের সহায়তার জন্য তাদের কথা গুলো মনোযোগ দিয়ে শোনাই সব থেকে বড় সহায়ক ভূমিকা রাখে। তারা চায় যেন তাদের মনের কথা কেউ মনোযোগ দিয়ে শোনে। কথা শোনার মতো একজন মানুষ পাশে থাকলেই তারা অনেকটা মানসিক প্রশান্তি লাভ করে। তাই যদি আপনি বিচ্ছেদের শিকার হয়ে মানসিক পীড়ায় কষ্ট পাওয়া একজন হয়ে থাকেন তাহলে মনের কথা কাউকে খুলে বলতে দ্বিধা করবেন না। আপনি ঠিক কেমন অনুভব করছেন সেটি কাছের কাউকে কিংবা একজন কাউনসেলরকে নির্দ্বিধায় খুলে বলুন। এতে আপনার মন অনেকটা হালকা হবে। একাকী না থেকে সব সময় আপনার পরিবার বা কাছের বন্ধুর সাহচর্যে থাকার প্রয়াস করুন। এ সময়ে একাকী থাকলে মনের ভার আরও বাড়বে।
কখনোই এটা ভাবা উচিৎ নয় যে, জীবনে আর কোন প্রত্যাশা বা স্বপ্ন অবশিষ্ট নেই। জীবনে শোক, তাপ, দুঃখ, বিষাদ, দুঃসময় কিছুই চিরস্থায়ী হয়না। দুঃখের দিন শেষ হয়ে আবারও সুখের দিন আসে। হয়তো বিচ্ছেদের মতো ঘটনায় মনে হতে পারে এই মানসিক পীড়া আপনাকে বদলে দেবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সময় সব কিছু বদলে দেবে, দুঃখের সময় শেষ হবে, এবং ধীরে ধীরে আপনি আবার নিজেকে খুঁজে পাবেন। তাই ভেঙ্গে পড়লেও ঘুরে দাঁড়ানোর মনোবল রাখতে হবে।
অনেক সময় মনের কষ্ট, বিষাদ এগুলি রাগ কিংবা অতি ধর্মীয় আচার আচরণের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। অনেকেই এমনভাবে নিজের মানসিক কষ্টকে অন্য কিছু দিয়ে আড়াল করার প্রয়াস করে যা একদমই ফলপ্রসূ হয়না। তাই যে কোন কিছু দিয়ে সাময়িকভাবে কষ্টকে এড়িয়ে যাবার প্রয়াস না করে মানসিক শক্তি দিয়ে একে জয় করাই উত্তম।
যদি আপনার কাছের কেউ এমন মানসিক কষ্টে ভোগে, তাহলে বন্ধু বা পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে আপনার ও তার পাশে দাঁড়ানো উচিৎ। সরাসরি তার পাশে থাকা সম্ভব না হলে ফোন করে তার খবর নেওয়া, তাকে সব রকম মানসিক সাপোর্ট প্রদান করা আপনার কর্তব্য। সব কিছুর মাধ্যমে তাকে এটা বোঝানোর প্রয়াস করা জরুরী যে, জীবনে সুখ দুঃখ সাময়িক। একজন মানুষ চাইলে সব ধরণের সমস্যাকে, দুঃখকেই জয় করতে পারে। তাই মানসিক কষ্টকে জয় করে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফেরার প্রয়াসই তাকে করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে কখনোই তার সাহায্য চাওয়া কিংবা মুখে কিছু বলার অপেক্ষায় থেকে তারপর সেই অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা কোন সমাধান নিয়ে আসবেনা। আপনাকেই আগ্রহী হয়ে তাকে মানসিক পীড়া থেকে মুক্তির প্রয়াস করতে হবে।
ইচ্ছাকৃত কিংবা অনিচ্ছাকৃত, বিবাহ বিচ্ছেদ প্রতিটি মানুষের জন্যই মর্ম পীড়াদায়ক। বিবাহের সময় দেখা স্বপ্ন এবং প্রত্যাশাগুলির সমাপ্তি মেনে নেওয়া খুবই কঠিন। চেষ্টা করুন এই কষ্টগুলিকে এড়িয়ে না গিয়ে এর সাথে লড়াই করে ঘুরে দাঁড়াতে। দুঃখের সময় কেটে গিয়ে পুনরায় জীবনে সুখ অবশ্যই আসবে।
করোনায় স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে