বার্ধক্যজনিত অবসাদ বা জেরিয়াট্রিক ডিপ্রেশন কী?
সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ৬০ বছর বয়সী আরিফ সাহেব সর্বক্ষণ শরীরে ব্যথা বলে অভিযোগ করত। একদিন উত্তেজিত হয়ে অকারণে পরিবারের সঙ্গে রাগারাগি ও ঝগড়া করে বসল। চরিত্রের হঠাৎ পরিবর্তনে তাঁর ছেলে ভয় পেয়ে যায়। চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেল, আরিফ সাহেব অবসাদের শিকার।
বাস্তব জীবনের সঙ্গে মিল রেখেই উপরের কাহিনিটি বলা হল, যাতে মূল সমস্যাটি বোঝা সম্ভব হয়।
বার্ধক্যজনিত সমস্যা সচরাচর চিহ্নিত করা যায় না, ফলে বয়স্কদের ক্ষেত্রে চিকিৎসার ঘাটতি থেকে যায়। বয়স্কদের সম্পর্কে একটা ভুল ধারণা প্রচলিত আছে, তাঁরা কোনও নিকটজনের বিচ্ছেদ বা শারীরিক সমস্যার জন্য দুঃখ বোধ করেন এবং এই অবসাদ বয়সের সঙ্গে কমে যাবে। অনেক বয়স্ক মানুষই নিজেকে হাস্যকর করে তোলার ভয়ে সহজ হওয়ার চেষ্টা করেন অথবা দুঃখজনক কোনও বিষয়কে এড়িয়ে চলেন।
বার্ধক্যজনিত অবসাদের লক্ষণগুলি কী?
যেহেতু বয়সের কারণে খিদে বা ঘুম কমে যায়, দুর্বল বোধ হয়, পারিবারিক অসুস্থতার জন্য বিরক্তি লাগে, তাই বার্ধক্যের অবসাদের লক্ষণগুলিকে অগ্রাহ্য করা বা আলাদা করে চিহ্নিত করা মুশকিল হয়ে ওঠে। অ্যালঝাইমার্স, পার্কিনসন্স ও দেখা শোনার অক্ষমতাগুলিকে ডিপ্রেশনের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে ধরা যায়।
অবসাদের অন্যান্য সমস্যাগুলির মতো বার্ধক্যজনিত অবসাদেরও কিছু নিজস্ব লক্ষণ আছে:
- কোনও বিষয়কে মনে রাখার অক্ষমতা।
- অন্যান্যদের সঙ্গে মেলামেশায় অনীহা।
- খিদে এবং ওজন কমে যাওয়া।
- সবসময় শরীরে ব্যথার অভিযোগ।
- ধৈর্য হ্রাস এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বিরক্তিকর ব্যবহার।
- ঘুমের ঘাটতি এবং বিশ্রামের অভাবে অস্থিরতা।
- অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক অসুস্থতা, যেমন ডায়াবিটিস, হাইপারটেনশন, স্ট্রোক, আর্থারাইটিস, ক্যানসার ইত্যাদির সঙ্গেই বার্ধক্যজনিত অবসাদ থাকতে পারে।
বার্ধক্যজনিত অবসাদের চিকিৎসা
চিহ্নিত বা চিকিৎসা না হলে এই সমস্যা যে কোনও পরিবার বা ব্যক্তির সফল জীবনের ক্ষেত্রে অযথা ভোগান্তির কারণ। একজন বয়স্ক মানুষকে অবসাদের প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
চিকিৎসকদের মতে চিকিৎসা বা থেরাপি, পরিবারের সহায়তা ও মনোযোগ, নিয়মিত ব্যায়াম এবং ব্যবহারিক জীবনের বেঁধে দেওয়া কাজকর্ম একজন বয়স্ক ব্যক্তিকে সুস্থভাবে স্বাভাবিক জীবনযাপনে বিশেষ সাহায্য করে।
জেরিয়াট্রিক ডিপ্রেশনের পরিচর্যা
বাড়িতে কোনও বয়স্ক ব্যক্তি অবসাদের শিকার হলে তাকে মানসিক সহায়তা নিতে হবে। গুরুত্ব সহকারে তার কথা শোনা এবং বোঝার ফলে বৃহত্তর প্রেক্ষিতে তাকে সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে। চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়ে রোগ চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া দরকার।
সেই সঙ্গে যেগুলি করা যায়
- অবসাদগ্রস্ত ব্যক্তিকে তাঁর পছন্দের কোনও কর্মকাণ্ডে উৎসাহ দেওয়া, যা তাঁদের ব্যস্ত এবং নিযুক্ত রাখবে।
- দৈনিক হাঁটাচলার সময়ে সঙ্গ দিতে হবে।
- বন্ধু, আত্মীয় বা পরিবারের অন্যান্যদের সঙ্গে মেলামেশার বিষয়ে উৎসাহ দিতে হবে। যাতে সামাজিক পরিমণ্ডলে অপরের সঙ্গে ভাব বিনিময় হয়।
- তাঁদের দৈনিক ক্রিয়া কর্মের জন্য নির্দিষ্ট রুটিন থাকা উচিত।
- খাদ্য ও পরিপাক সংক্রান্ত বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।
- চিকিৎসার পরিকল্পনা মেনে চলার জন্য উৎসাহ দান।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে