প্রতিবেশী করোনা আক্রান্ত হলে কী করবেন?

0
39
প্রতিবেশী করোনা আক্রান্ত হলে কী করবেন?
প্রতিবেশী করোনা আক্রান্ত হলে কী করবেন?

সম্প্রতি নারায়নগঞ্জে এক চিকিৎসকের পরিবারের সদস্যরা করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় সে বাড়িতে এলাকাবাসী হামলা চালিয়েছে। শুধু এই একটি ঘটনায় নয়, করোনা আক্রান্ত পরিবারের উপর প্রতিবেশীর আক্রোশ এবং অবহেলার ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটেই চলেছে।
দিনের পর দিন এই যে সব ঘটনা ঘটে চলেছে, তা কি হওয়া উচিত? প্রতিবেশী কারো করোনা রিপোর্ট পজিটিভ হলে কি তাকে সপরিবার পাড়া থেকে উৎখাতের চেষ্টা করা উচিত? একেবারেই নয়। যদি জানতে পারেন পাশের বাড়ির কোনও মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তখন অবশ্যই তাঁর দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া।
একনজরে দেখে নিন এই পরিস্থিতিতে কী করা উচিত?
• প্রথমেই যাচাই করে নিন তিনি সত্যিই করোনা আক্রান্ত কিনা অথবা সর্দি, জ্বর বা শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ আছে কিনা। এ রকম কিছু থাকলে সেই পরিবারের মানুষ হয়তো নিজেরাই ডাক্তারের কাছে যাবেন। যদি সাহায্য চান, তাদের সাহায্য করুন। অ্যাম্বুল্যান্স ডেকে দিন।
• বাড়ির অন্যদের গৃহবন্দি থাকার জন্যে অনুরোধ করুন। প্রয়োজন হলে স্থানীয় প্রশাসনের সাহায্য চাইতে পারেন।
• আক্রান্তের পরিবারকে বাইরে যেতে মানা করুন। তাদের রোজকার খাবার ও ওষুধের দরকার হতেই পারে। তাই ফোনে তাদের দরকারের কথা জেনে নিয়ে বাজার দোকান করে দরজার বাইরে পৌঁছে দিয়ে আসুন।
• পাশাপাশি দরজা থাকলে দরজার হাতল বা নবে হাত দিলে হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। নিজের বাড়ির দরজা নিয়ম করে জীবাণুমুক্ত করা উচিত। নব বা হাতল সাবানজল দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
• সিঁড়ি, লিফট জীবাণুমুক্ত করে নেওয়া দরকার।
• বাড়ির অন্যদের মধ্যে উপসর্গ দেখা যাচ্ছে কিনা খবর নিতে ভুলবেন না।
• মুখোমুখি বা পাশাপাশি জানলা থাকলে তা বন্ধ করে রাখাই শ্রেয়। যদিও কোভিড ১৯ ভাইরাস বাতাসে ভেসে বেড়ায় না, তবুও এইটুকু সতর্কতা মেনে চলা উচিত।
• বাড়িতে থাকলে খাবার আগে তো বটেই, মুখে চোখে হাত দেওয়ার আগেও হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নেওয়া আবশ্যক।
• রোগী বা তার পরিবারকে একঘরে করে রাখবেন না, ভাইরাস কিন্তু কারওকেই ছেড়ে কথা বলে না। সুতরাং সতর্ক থাকুন, কিন্তু অহেতুক আতঙ্ক ছড়াবেন না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ নিয়ে অনেকে নানা দোলাচলে ভুগছেন। মনে রাখতে হবে, ভাইরাস হেঁটে হেঁটে কারও বাড়িতে ঢুকে পড়ে না। এদিকে সোসাল ডিস্ট্যান্স-এর তোয়াক্কা না করে বাজারে ভিড় করছেন, অন্যদিকে পাড়াপড়শির হাঁচি-কাশি হলে তাকে একঘরে করে পাড়া ছাড়া করার চেষ্টা মানসিক অসুখের লক্ষণ। অনেকের মনে সাইকোলজিক্যাল ডিনায়াল কাজ করে, এরা মনে করেন যার যা-ই হোক না কেন আমার কিছুই হবে না। পাশের বাড়ির লোক আক্রান্ত হলেই এদের অনেকে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন।মেনে চলুন এই পরামর্শগুলি:
• কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণ মানেই যে মৃত্যুর পরোয়ানা তা কিন্তু নয়। এই কথা মনে রেখে নিজেই নিজের কাউন্সেলিং করা উচিত।
• মনে রাখবেন, যারা কোভিড রোগীদের নিয়ে কাজ করছেন খুব ছোঁয়াচে রোগ হলে তাদের, বিশেষ করে সাফাইকর্মীরা সবার আগে আক্রান্ত হতেন বা তাঁদের মৃত্যু হত। তাঁরা যখন নিরাপদে আছেন, যথাযথ পরিচ্ছন্নতা মেনে চললে সমস্যা হবে না।
• বেশিরভাগ মানুষ অনেক দূর পর্যন্ত খারাপ ভাবনা ভেবে ফেলেন। যেমন, যদি রোগটি হয়, বাড়ির সবারই হবে, হয়তো মারা যাব। হাসপাতালে জায়গা পাব না, এই সব নেগেটিভ ভাবনা ত্যাগ করতে হবে।
• ঠাণ্ডা মাথায় যে কোনও পরিস্থিতির মোকাবিলা করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
• পাড়াপ্রতিবেশী বিপদে পড়লে তাদের পাশে থাকুন। মনে রাখবেন, আপনার বিপদের দিনে তাদেরই সাহায্য লাগবে। হয়তো পাশের বাড়ির কোভিড-মুক্ত মানুষটির রক্ত থেকে পাওয়া প্লাজমা আপনার নিকটজনের জীবন বাঁচাবে।

Previous articleকরোনাভাইরাস প্রতিরোধে হার্ড ইমিউনিটি কতটা কার্যকর?
Next articleকোভিড-১৯: মনো-সামাজিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য সেবার জন্য করণীয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here