নেশা কি চাইলেই ছাড়া যায়?

নেশাগ্রস্থ অনেক রোগী বারবার ভর্তি হওয়ার পরেও মনে করেন, নেশা চাইলেই ছাড়া যায়। আমরা ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছি নেশা একটি সামাজিক ব্যাধি, কিন্তু এখন বইয়ে দেখা যায় নেশা একটি রোগ, শারীরিক না মানসিক সেটা পরে আলোচনা করব।
নেশা ছাড়া কঠিন কেন?
নেশার মাধ্যমে মানুষ যে সব পদার্থ নেয় তা শারীরিক প্রক্রিয়ায় আমাদের মস্তিষ্কে কিছু রাসায়নিক ক্রিয়া ঘটায় এবং সেটার জন্য মানুষ আনন্দে আপ্লুত হয় বা সাময়িক দুঃখ ভুলে যায় বা সাময়িকভাবে একটা অস্বাভাবিক ভালো লাগার তৈরি হয়। মানুষ বা কোনো প্রাণী একই পদার্থ বারবার নিতে থাকলে শরীরে কিছু স্থায়ী পরিবর্তন হয়ে যায়। সেই পরিবর্তনের জন্যই নেশা থেকে বিরত থাকা কঠিন হয়ে পড়ে এবং এই পরিবর্তনের জন্য নেশার দুয়ার বারবার ডাকতে থাকে। নিজের শরীরের ভিতরে যখন ওই ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া ঘটতে থাকে, তখন নেশাগ্রস্থ ব্যক্তির জন্য নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যায় এবং একটা পর্যায়ে নেশা নিতে বাধ্য হয়।
আরও অনেক কারণ আছে যার জন্য নেশা ছাড়া কঠিন। তাদের মধ্যে একটি আলোচনা করতে চাই। সেটি হলো নেশাগ্রস্থরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নিজেরা স্বীকার করতে ও সেটা থেকে মুক্তি পেতে চান না। সাথে সাথে নেশাগ্রস্থদের পরিবারের সদস্যরাও বলতে পছন্দ করেন যে, আসলে তার কোনো অসুবিধা নাই মাঝে মাঝে নেশা নেয় ও নেশা নিলেই একটু অসুবিধা করে।
নেশার চিকিৎসায় রোগীর নেশা ছাড়ার ইচ্ছা অবশ্যই জরুরি কিন্তু সেটাই সব নয়। পরিষ্কার ভাবে স্বীকার করা দরকার নেশা একটি রোগ। সেটা লম্বা সময় চিকিৎসা প্রয়োজন। রোগীর নিজের স্বীকার করা ও ভালো হওয়ার চেষ্টা করা, পরিবারের সদস্যদের সহায়তা ও লম্বা সময় চিকিৎসকের তত্ত্বাবধায়নে থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন। রোগীর সাময়িক শক্ত ইচ্ছাই নেশা ছাড়া বা ছাড়ানোর জন্য একমাত্র উপায় হতে পারে না।


প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না কর্তৃপক্ষ।

Previous articleআজ বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস
Next articleজীব-জগতের আদি ভাষা সঙ্গীত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here