বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৪৫.৩ শতাংশ মানুষ মাদক সেবন করে। সম্প্রতি দেশের সাতটি বিভাগে করা জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।
দেশের সাতটি বিভাগে সাত বছরের বেশি বয়সের মোট ১৯ হাজার ৬৬২ ব্যক্তির মধ্যে এই জরিপ পরিচালনা করা হয়। শনিবার (১১ আগস্ট) জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে জরিপের ফলাফল প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ।
জরিপে জানানো হয়, সাতটি বিভাগে ধূমপান, গুল ও অন্যান্য উপায়ে তামাক পাতা গ্রহণ করে মোট জনসংখ্যার ৪৫.৩ শতাংশ, ১৮ বছরের বেশি বয়সিদের মধ্যে মানসিক রোগের প্রকোপ ১৬.৮ শতাংশ এবং ১৮ বছরের নিচে শিশু-কিশোরদের মানসিক রোগের প্রকোপ ১৭.৮ শতাংশ।
‘বাংলাদেশে মাদকাসক্তির প্রবণতা ও ঝুঁকি’ শীর্ষক এই জরিপের ফলাফল উপস্থাপনা করেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট ও হাসাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মেখলা সরকার। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়ে চলতি বছরের জুলাই মাসে জরিপটির কাজ শেষ হয় বলে জানান ডা. মেখলা সরকার। কোয়লিটেটিভ রির্সাচের ফলাফল অনুযায়ী এসব মাদকাসক্তির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলো হচ্ছে কৌতূহল, অসৎ সঙ্গ, মাদকের সহজলভ্যতা, অভিভাবকদের নজরদারির অভাব, ত্রুটিপূর্ণ সন্তান প্রতিপালন।
জরিপে ফলাফলে জানানো হয়, ঢাকা বিভাগে ৩৬.৮০ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে ২৪.৯০ শতাংশ, রংপুর বিভাগে ১৩.৯০ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে ৭.১০ শতাংশ, সিলেট বিভাগে ৬.৯০ শতাংশ, খুলনা বিভাগে ৬.২০ শতাংশ এবং বরিশাল বিভাগে ৪.১০ শতাংশ মাদক ব্যবহারকারী রয়েছেন।
এর মধ্যে ১৮ বছরের বেশি বয়সিদের মধ্যে ৩.৩ শতাংশ, ১২ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে ০.৮ শতাংশ, সাত থেকে ১২ বছরের মধ্যে ০.২ শতাংশ এবং ১৮ থেকে ২৭ বছরের মধ্যে বয়সীদের ৬.৯ শতাংশ মানুষ মাদক নিয়ে থাকেন।
জরিপের ফলাফল থেকে জানা যায়, পুরুষদের মধ্যে মাদকসেবীর হার ৪.৮ শতাংশ এবং নারীদের মধ্যে ০.৬ শতাংশ। আবার পেশা অনুসারে শ্রমিকদের মধ্যে শতকরা ৬.৭ শতাংশ, বেকারদের মধ্যে ৫.৭ শতাংশ, ব্যবসায়ীদের মধ্যে ৪.৩ শতাংশ, কৃষকদের মধ্যে ৩.৮ শতাংশ এবং চাকুরিজীবীদের মধ্যে ৩.৫ শতাংশ মাদকসেবী রয়েছেন।
জরিপের ফলাফলে আরও দেখা যায়, মাদকের প্রকার অনুসারে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে গাঁজা, যা ৪২.৯০ শতাংশ মাদকসেবী গ্রহণ করে থাকে। এরপর রয়েছে অ্যালকোহল ২৭.৫০ শতাংশ, ইয়াবা ১৫.২০ শতাংশ, আফিম ৫.৩০ শতাংশ এবং ঘুমের ওষুধ ৩.৮০ শতাংশ।
ডা. মেখলা সরকার জরিপের ফলাফল থেকে জানান, অর্থনৈতিক অবস্থা অনুসারে ৭ হাজার ৫০০ টাকার নিচে মাসিক খরচকারীদের মধ্যে মাদক ব্যবহারকারী শতকরা ৩.২ শতাংশ, ৭ হাজার ৫০১ টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকা মাসিক খরচকারীদের মধ্যে মাদক ব্যবহারকারী ২.৬ শতাংশ, এবং ১৫ হাজারের বেশি খরচকারীদের মধ্যে মাদক ব্যবহারকারী ৩.৮ শতাংশ।
আবার মাদক গ্রহণকারীদের মধ্যে চট্টগ্রামে ৬০ শতাংশ, রাজশাহীতে ৪৫ শতাংশ, রংপুরে ২৮ দশমিক দুই শতাংশ, খুলনায় ২৫ দশমিক সাত শতাংশ, ঢাকায় ২৫.৬ শতাংশ এবং সিলেট বিভাগে ২৫ দশমিক ছয় অ্যালকোহল গ্রহণ করে থাকে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার অর্থায়নে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল এই জরিপ পরিচালনা করে। অনুষ্ঠানে হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফারুক আলম, এনসিডিসির প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মো রিজওয়ানুল করিমসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালের মানসিক রোগ বিষেশজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন।