সহায়ক প্রযুক্তির ব্যবহার, অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তিদের অধিকার- প্রতিপাদ্যে ১২ তম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস পালনের অংশ হিসেবে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে বৈজ্ঞানিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ ৯ এপ্রিল (মঙ্গলবার) জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত সেমিনারে দেশের নবীন ও প্রবীণ খ্যাতনামা মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। সেমনিারে দেশের খ্যাতনামা মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ নিউরো ডেভলেপমেন্টাল: প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট এর চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ডা. গোলাম রাব্বানী’কে সম্মাননা জানানো হয়।
সেমিনারে অংশগ্রহণকারীরা অটিজম বিষয়ে আরো বেশি সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মানুষের ভ্রান্ত ধারনা দূর করার প্রতি জোর দেন। এছাড়া অটিজম বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের কার্যকরী আলোচনা করেন তারা।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্ট (বিএপি) এর সভাপতি অধ্যাপক ডা. ওয়াজিউল আলম চৌধুরী, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজিজুল ইসলাম, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফারুক আলম, পাবনা মানসিক হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তন্ময় প্রকাশ বিশ্বাস, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহিত কামাল।
সেমিনারে মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাইকিয়াট্রিস্ট ডা. মো. শিবলি সাদিক। তিনি তার প্রবন্ধে অটিজম বিষয়ের বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি জানান, ‘দ্রুত রোগ র্নিণয়, প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা অটিজম রোগীর জীবনকে সহজতর করে।’
মূল প্রবন্ধের উপর আলোচনা করেন দেশের খ্যাতনামা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোস্তাফিজুর রহমান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. ঝুনু শামসুন্নাহার, লে. কর্ণেল জুলহাস, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. দেলোয়ার হোসেন, গ্রীণ লাইফ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নুরুন্নাহার চৌধুরী, শহীদ তাজউদ্দিন মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. মুহাম্মাদ জোবায়ের মিয়া, শিকদার মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফাহমিদা ফেরদৌস এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ডা. সিফাত-ঈ-সাইদ।
ডা. সিফাত-ঈ-সাইদ বলেন, আজকাল বেশির ভাগ মানুষ প্রযুক্তি বলতে শুধু ফেসবুক কিংবা ইউটিউবকে বুঝে থাকেন। কিন্তু এইসবের ব্যবহার স্বাভাবিক শিশুরই বিকাশই ব্যাহত করে। তাই সহায়ক প্রযুক্তি মানে যে ইউটিউব বা ফেসবুক নয় সেটি সবাইকে বুঝতে হবে।
ডা. ফাহমিদা ফেরদৌস বলেন, মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য ভাষা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ভাষা মৌখিক এবং সাংকেতিক দুই ধরনেরই হতে পারে। তাই অটিজম বৈশিষ্টসম্পন্নদের চিকিৎসায় স্পীচ ল্যাংগুয়েজ থেরাপীর উন্নয়ন ঘটাতে হবে।
ডা. দেলোয়ার হোসেন বলেন, অটিজম সচেতনতায় আমরা অনেক এগিয়েছি। এখন আমরা কিভাবে এর প্রতিরোধ করতে পারি সে বিষয়ে গবেষণা করা জরুরী।
অধ্যাপক ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব তার বক্তৃতায় বলেন, অটিজম যে মানসিক রোগ এবং এটির চিকিৎসায় যে সাইকিয়াট্রিস্ট এর ভূমিকা সবচেয়ে বেশি সেটা অনেকেই বুঝতে চান না। এবিষয়ে তিনি আরো বিস্তৃত কার্যক্রম গ্রহণের আহবান জানান।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজিজুল ইসলাম এধরনের সেমিনার শুধু চিকিৎসকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে আরো বেশি মানুষের অংশগ্রহণে এবং ঢাকার বাইরে বিশেষ করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলিতে আয়োজন করার প্রতি জোর দেন।
অধ্যাপক ডা. ফারুক আলম বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক দাবী আদয়ের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক পরিচালক থাকার জরুরী।
প্রধান অতিথি অধ্যাপক ডা. ওয়াজিউল আলম চৌধুরী মানসিক রোগ বিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টিতে যেকোন ধরনের আয়োজনে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্ট (বিএপি) এর পক্ষ থেকে সর্বাত্নক সহযোগীতা করার আশ্বাস দেন।
প্রধান অতিথির বক্তৃতার পর অধ্যাপক ডা. গোলাম রাব্বানী’র হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন অতিথিরা। অধ্যাপক ডা. গোলাম রাব্বানী মানসিক রোগ সচেতনতা বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন এবং প্রদান অতিথির আশ্বাস সাপেক্ষে শ্রীঘ্রই অটিজম বিষয়ক গবেষণা এবং পূর্ণবাসন কেন্দ্রের জন্য জমি বরাদ্দ পাওয়া যাবে বলে জানান।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাথে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্ট (বিএপি) এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ফর চাইল্ড অ্যান্ড এডোলেসেন্ট মেন্টাল হেলথ (বিএসিএএমএইচ) যৌথভাবে সেমিনারটি আয়োজন করে।
সায়েন্টিফিক পার্টনার হিসেবে সেমনিারটি আয়োজনে সহযোগীতা করে ইনস্পেটা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটিডে।