করোনা আবহে স্বাভাবিক পরিবেশ এখন এক মরিচিকার নাম। কিভাবে এই অসুস্থ পরিবেশেও হাসি খুশি মেজাজে থেকে দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকা যায় সে সম্পর্কে কিছু কৌশল নিয়ে আজ আলোচনা করব।
খারাপ সংবাদ বা প্রতিকূল অবস্থা আমাদের মানসিক অস্থিরতা বৃদ্ধি করে। এই অস্থিরতা আমাদের মধ্যে দুশ্চিন্তা, আশঙ্কা, অবসন্ন মনোভাব, হতাশা সহ বিভিন্ন মানসিক সমস্যা সৃষ্টি করে। অনেকেই আত্মবিশ্বাস এবং স্পৃহা হারিয়ে এসব ভাবাবেগের মাঝে নিমজ্জিত হয়ে নিজের মানসিক ও শারীরিক ক্ষতি সাধন করে ফেলে। আবার অনেকে এসব সমস্যাকে গুরুত্ব না দিয়ে হাশি খুশি থেকে পরিস্থিতির গম্ভীরতাকে স্বাভাবিক করার প্রয়াস করেন এবং নিজে ভালো থাকার ও চার পাশের মানুষকে ভালো রাখার প্রয়াস করেন। করোনা সংকট আজ সারা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের ন্যায় করোনাও আমাদের চরম ক্ষতি সাধন করেছে এবং করছে। শারীরিক ও মানসিক সমস্যার সাথে সাথে আমাদের নানাবিধ সামাজিক, অর্থনৈতিক, পারিবারিক সমস্যায় আমরা জর্জরিত। এই অবস্থায় দুঃখ ও দুশ্চিন্তার মাঝে ডুবে না গিয়ে কিভাবে নিজেকে সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখা যায় সেটি নিয়ে আজ ভাবার সময় এসেছে। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আমাদের হাতের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই তার লাগাম আমাদের টেনে ধরতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে হাশি খুশি মেজাজে মানসিক চাপ এবং দুশ্চিন্তা মেটানোর প্রয়াস একটি অন্যতম সেরা প্রয়াস হতে পারে। আর এই লক্ষ্যে কিছু কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে।
১) উপেক্ষা করাঃ
দুশ্চিন্তা এবং মানসিক চাপ এড়াতে প্রথমে আমাদের যে কাজটি করতে হবে সেটি হল দুশ্চিন্তা এবং মানসিক চাপের কারণগুলোকে এড়িয়ে চলা বা উপেক্ষা করা। আর এই কাজগুলো যদি হাস্যরসাত্মক উপায়ে করা যায় তাহলে এই কঠিন কাজটিও বেশ সহজে হতে পারে। করণীয় এবং করণীয় নয় এমন বেশ কিছু কাজের তালিকা তৈরি করে সহজভাবে ও আনন্দদায়ক উপায়ে এই প্রয়াস করতে পারলে করোনার এই দিনগুলোও বেশ আনন্দদায়ক হতে পারে।
২) দৃষ্টিভঙ্গির বদলঃ
হাস্যরসাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি সব কিছুকেই অন্যরকম ভাবে দেখতে অনুপ্রাণিত করে। একইভাবে,মহামারীকালীন এই মানসিক অশান্তি থেকে মুক্তি পেতেও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী কারণ গুলোকে একটু অন্যভাবে দেখলে বা সেগুলোর প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে পারলে এর দুস্প্রভাবকেও ইতিবাচকভাবে বদলে দেওয়া যেতে পারে।
৩) মেনে নেওয়াঃ
দুশ্চিন্তা সৃষ্টিকারী কারণগুলো উপেক্ষা এবং বদলের প্রয়াসের পর যে প্রয়াসটি করা যায় সেটি হল অস্বাভাবিক অবস্থাকে হাসি মুখে মেনে নেওয়া। আমাদের মেনে নিতে হবে যে এই অবস্থা আমাদের সৃষ্ট নয় এবং এর হাত থেকে পরিত্রাণের উপায় ও যথেচ্ছ নয়। তাই হাসি মুখে সব কিছু মেনে নিলে আশঙ্কা এবং দুশ্চিন্তার মাত্রা অনেকটাই কমে যাবে।
৪) মনোযোগ স্থানান্তরঃ
বর্তমান মহামারী নিয়ে সারাক্ষণ দুশ্চিন্তা না করে এটি থেকে মনোযোগ যদি অন্য ইতিবাচক এবং আনন্দদায়ক কর্মকাণ্ডের দিকে সরানো যায় তবে অস্বাভাবিক পরিস্থিতির ফলে সৃষ্ট উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা দূরে থাকবে এবং মন প্রফুল্ল থাকবে। যে সব কাজ বা পরিস্থিতি আপনাকে দুশ্চিন্তায় ফেলছে, যেমন, বাইরে যেতে না পারা, কাছের মানুষদের সাথে দীর্ঘদিন দেখা না হওয়া, সংক্রমণের আশঙ্কা ইত্যাদি নিয়ে সারাক্ষণ না ভেবে ঘরে থেকেই কিভাবে আনন্দে সময় কাটানো যায় সেটি নিয়ে ভাবতে হবে। দুশ্চিন্তার যায়গা গুলোকে আনন্দ দিয়ে প্রতিস্থাপন করে নেতিবাচক বিষয়গুলোর ভেতর থেকে ইতিবাচক দিকগুলো খুঁজে নিতে হবে।
মহামারীর এই অস্বাভাবিক অবস্থা হয়তো আমাদের দুশ্চিন্তা এবং উদ্বেগের মাঝে সময় কাটাতে বাধ্য করছে। কিন্তু আমাদের মন কিভাবে কোন বিষয়ে কেমন প্রতিক্রিয়া জানাবে সেটি আমরাই নির্ধারণ করবো। তাই এর মাঝেও আনন্দ খুঁজে নিতে প্রচেষ্টা করলে এবং মুখ গোমড়া করে না থেকে হাসার প্রয়াস করলে কষ্টের সময়েও সুখকর পরিবেশ সৃষ্টি করে নেওয়াই যায়।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে