শিশুরা যেকোন বিষয়কে নিজেদের মত করে বুঝে নেয়। তারা বড়দের মত করে সব কিছু বুঝতে পারেনা, কিন্তু সব ক্ষেত্রে বড়দের অনুসরণ করে। তারা কোন বিষয় বিবেচনার ক্ষেত্রে পরিবেশ, পরিস্থিতি ও পরিবারের অন্যদের মন-মানসিকতা দেখে। টিভি বা বিভিন্ন মিডিয়ায় করোনা সম্পর্কিত নেতিবাচক প্রচার এবং পরিবারের অন্যান্যদের মধ্যে করোনা নিয়ে আলোচনা শুনে শিশুরা করোনা সম্পর্কে অবগত হচ্ছে।
পরিবার থেকেই শিশু বুঝতে পারছে করোনা নামের একটি ভাইরাস ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। যা শিশুর মনেও ভয় সৃষ্টি করছে। অনেক সময় পরিবারের অন্য সদস্যরাই বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে শিশুর মনে ভীতির সৃষ্টির করছে যেমন: বার বার হাত ধোয়ার জন্য চাপ দেওয়া, ঘরের ভিতরেও মুখ ঢেকে রাখতে বলা, কথায় কথায় করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ভয় দেখানো, মানুষের সাথে কথা বলা ও মিশতে বারণ করা ইত্যাদি। এধরনের ভয়-ভীতি শিশুর মনে ভয়ংকর প্রভাব ফেলতে পারে। শিশু মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পরতে পারে।পরবর্তীতে যা তার আত্ববিকাশের পথে বাঁধা সৃষ্টি করতে পারে এবং মনোবল কমিয়ে দিতে পারে। শিশু দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পরতে পারে এবং বিভিন্ন রোগ যেমন: অবসেশনাল ডিসঅর্ডার ও ও.সি.ডি. হতে পারে।
শিশু আতঙ্কগ্রস্থ হলে তার মধ্যে সাইকোটিক আচরণ বৃদ্ধি পেতে পারে। আতঙ্কগ্রস্থ শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ কখনোই ভালোভাবে হয় না। পরবর্তীতে যা তার দৈনন্দিন, পারিবারিক, সামাজিক ও শিক্ষাজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই শিশুকে ভয় না দেখিয়ে নেতিবাচক বিষয়গুলোকে সহজভাবে বুঝিয়ে বলতে হবে। কোন কোন ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে তা বুঝিয়ে বলতে হবে। পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার নিয়মগুলো শেখাতে হবে। পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকলে যে কোন রোগ প্রতিরোধ করা যায় তা বুঝিয়ে বলতে হবে। এসময় শিশুদের বাইরে না খেলতে দেওয়াই ভালো। তারপরেও যদি বাইরে খেলতে যায় তাহলে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
ঘরে থাকাকালীন সময়টুকুতে সবসময় পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত রাখা যাবে না বরং বাসায় শিশুদের উপযোগী বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে। শিশুর সাথে গল্প করা, তার গল্প শোনা, বাসায় বিভিন্ন খেলা-ধুলার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তবে ক্ষতি হতে পারে এমন কিছুর প্রতি আসক্ত হতে দেওয়া যাবে না যেমন: স্মার্টফোন, গেইম বা ইন্টারনেটের প্রতি আসক্তি। পরিবারের সবাইকেই শিশুর দিকে খেয়াল রাখতে হবে। মা-বাবার উচিৎ শিশুর সাথে সময় কাটানো। শিশুকে আনন্দ দেওয়ার পরিবারের সবাই মিলে সিনেমা দেখা যেতে পারে। শিশুকে সুষম খাবার দিতে হবে। যে ধরনের খাবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় বিশেষ করে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার দিতে হবে। বাইরের কোন খাবার এসময় দেওয়া উচিৎ নয়। শিশুর পর্যাপ্ত ঘুমের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাওয়া যাবে না এবং এবিষয়টি সাময়িক তা শিশুকে বুঝিয়ে বলতে হবে। নিজেদের ভয়, রাগ, আতঙ্ক শিশুর উপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। এমন কোন কাজ করা যাবে না যা শিশুর মানসিক বিকাশে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলে।
শিশুকে ভালোবাসা, শ্রদ্ধাবোধ, স্নেহ করা, যত্ন করা, মিলে-মিশে থাকা, বিপদে একে অন্যকে সাহায্য করা- এবিষয়গুলো বোঝাতে হবে। পরিবারের মধ্যে যে নিয়ম-নীতিগুলো প্রচলিত আছে সেগুলো শিশুকে শেখাতে হবে। শিশুর সুস্থভাবে বেড়ে উঠতে শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য প্রয়োজনমত শাসন, ভালোবাসা, পাশে থাকা, যত্ন করা- এ বিষয়গুলো অত্যন্ত জরুরী।