করোনা ভাইরাস ও আমাদের থুথু'ভ্যাস

করোনা ভাইরাস ও আমাদের থুথু'ভ্যাস
করোনা ভাইরাস ও আমাদের থুথু'ভ্যাস

গতকাল ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম।চেম্বার থেকে বের হওয়া মাত্রই এক দলা পানের পিক (spittle of chewed betel) আমার সামনে এসে পড়লো,হয়তো সেকেন্ডের ব্যবধানে সেটা আমার গায়েই পড়তো!এই!!!!… বলে চিৎকার করে পাশে তাকাতেই দেখি মুখ ভর্তি পান নিয়ে সুখী সুখী চেহারায় দুজন লোক গল্প করছে। কিছুটা অবাক হয়ে আমাকে দেখে আবারো আড্ডায় ঢুকে গেলো তারা। আর আমি রাস্তায় তাকিয়ে দেখি দলা দলা ফ্রেশ পানের পিক….
যাই হোক, এই দেশে এ আর নতুন কি!করোনা ভাইরাস নিয়েই বরং বলি।সবাই মোটামুটি জেনে গেছেন করোনা ভাইরাস কি, এ দ্বারা ইনফেক্টেড হলে কি লক্ষণ, কি প্রতিকার বা চিকিৎসাই বা কি। আমি গত কয়েকদিন ধরে এটা নিয়ে চিন্তা করছিলাম, বিশেষত তার spreading নিয়ে। আসলে, কিভাবে ছড়ায় করোনা ভাইরাস? আমার মনে হয় সবাইই অলরেডি জানে যে এই ভাইরাস অন্যান্য ইনফ্লুয়েঞ্জা (ফ্লু) ভাইরাসের মতই ছড়ায়। তারপর ও একটু জেনে নেই করোনা ভাইরাস কীভাবে ছড়ায়/ছড়াচ্ছে?

  • 2019-এনসিওভি করোনাভাইরাস ফ্লু-র মতো অন্যান্য শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত অসুস্থতার মতোই কাছাকাছি/পাশাপাশি স্থানে থাকা এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে ছড়িয়ে পড়ে।যদিও শুরুটা সাধারণত হয় প্রানী থেকে মানুষে ট্রান্সফার দিয়ে। কিন্তু মানুষ যখন ইনফেক্টেড হয়,তখন কিভাবে অন্য মানুষে দ্রুত ছড়ায় এটা জানা জরুরী।
  • সংক্রামিত ব্যক্তির শরীর থেকে তরলের ফোঁটা – যেমন লালা/থুথু বা শ্লেষ্মা – কাশি বা হাঁচির মাধ্যমে বাতাসে বা উপরিভাগে ছড়িয়ে পড়ে।
  • এই ফোঁটাগুলি অন্য লোককে ৬ ফুট/১.৮ মিটার জায়গা পর্যন্ত সরাসরি সংক্রমিত করতে পারে বা সংক্রামিত জায়গা থেকে স্পর্শের মাধ্যমে সংক্রামিত করতে পারে।
  • বিজ্ঞানীদের মতে, কাশি এবং হাঁচি বেশ কয়েক ফুট ভ্রমণ করতে পারে এবং ১০ মিনিট পর্যন্ত বাতাসে স্থগিত থাকতে পারে।
  • হোস্টের বাইরে ভাইরাস কত দিন বেঁচে থাকতে পারে তা এখনও জানা যায়নি তবে অন্যান্য ভাইরাসে এটি কয়েক ঘন্টা থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত অবধি থাকে।”

সবকিছু নিয়ে একটু বেশীই ভাবি বলেই হয়তো মনে মনে ভাবছি…কিন্তু ব্যাপারগুলো কি আসলেই ভয়ংকর না? আক্রান্ত ব্যক্তি হাঁচি,কাশি দিলে এর ৬ ফুটের মধ্যে ১০- ১৫ মিনিটের মধ্যে যারা আসবেন তাদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি মারাত্মক। আমরা বাংগালী। চিন্তা করুন তো পথে-ঘাটে-রাস্তায়, আমরা বাংগালীর কোন স্বভাবের সাথে বেশী পরিচিত??
জ্বি, ঠিক ধরেছেন।… থুথু…
আমরা থুথু মুখের ভেতর রাখতে একেবারেই নারাজ।মুখের ভেতর থুথু আসামাত্রই ‘থু-থু’ করে যত্রতত্র ফেলাই আমাদের কমন স্বভাব। এই থুথুর ভয়ে পাব্লিক প্লেসে যেতে ভয় লাগে আমার।
ধরুন আপনি হাটছেন,চলছেন… যখন তখন আপনার গায়ে-পায়ে-শরীরে, নইলে জুতোয় থুথুর আক্রমণ/থুথু লাগবার হবার সমূহ সম্ভাবনা। আর হাঁচি-কাশি থাকলে তো কথাই নেই। যত দূর পর্যন্ত দেখা যায়, ততটুকু দূরে যাবে কাশি/হাঁচির শ্লেষ্মা। মুখ ঢেকে হাঁচি,কাশি দেয়া…..ক’জন করে! এসবের সাথে পানের পিক তো আছেই।
এখন মিলিয়ে নিন, কিভাবে করোনা ভাইরাস ছড়ায়,সাথে আমাদের স্বভাব! এদেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমিত কিছু মানুষ যদি আইডেন্টিফাই হয়, দেখা যাবে (আমার মনে হয়) কিছু বুঝার আগেই ধাই ধাই করে চারিদিকে ছড়িয়ে যাবে সংক্রমণ।
সরকার নিশ্চয়ই ভাবছেন,বা প্ল্যানিং করছেন করোনা ভাইরাস নিয়ে….এবং এয়ারপোর্টে কিছু স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা ও করা আছে। কিন্তু কেউ যদি সংক্রমিত হয়, রাজধানীতে কিছু ব্যবস্থা থাকলে ও বাইরের জেলা বা মেট্রোপলিটন শহরগুলোতে কিভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে,কোথায় করবে, যদি পজিটিভ হয় তবে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে,হাসপাতাল গুলোতে কি ধরনের ব্যবস্থা নেয়া আছে….এগুলো সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেয়া নেই।করোনা ভাইরাস এদেশে এসেছে কি না জানিনা কিন্তু জনমনে যে আতংক জন্মেছে,সেটা নিশ্চিত।
এখন সবচেয়ে বড় ব্যাপার,কিভাবে ভাইরাসটি ছড়ায় এ ব্যাপারে জনসচেতনতা তৈরী করা।সবাই মাস্ক কিনতে ব্যস্ত।ব্যবসায়ীরা মাস্ক লুকিয়ে দাম বাড়াতে ব্যস্ত।কিন্তু মাস্ক কতটুকু প্রটেকশন দিবে, সে ব্যাপারটাও তো কনফার্ম না। বরং মাস্ক এর সাথে সাথে হাঁচি,কাশি, থুথুর মাধ্যমে কিভাবে ছড়ায় এটা বার বার বিভিন্ন চ্যানেলে বলা, বাইরে থেকে এসে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া… এবং অন্যান্য প্রটেকশন…. এসব ব্যাপারে এখন থেকে বার বার বলা হলেই জনগন বেশি সচেতন হবে।
ভেবে দেখুন তো, এই কিছুদিন আগের ডেংগুর কথা। প্রতিদিন মৃত্যুর খবর, হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হবার পরই টনক নড়লো সবার। টেলিভিশন, সোশ্যাল মিডিয়ায় বার বার মশা নিধন, জমানো পানি নিস্কাশন,জ্বর হলে কি করবে…. এসব বিষয় বার বার বলার পর অনেক পরেই মানুষের মধ্যে সচেতনতা দেখা গেছে।
কিন্তু করোনা ভাইরাস তো সেই সময়টুকু ও দিবে না। একজন লোক ইনফেক্টেড হলে সে ভালোভাবে বুঝে উঠার আগেই অনেককে আক্রান্ত করে ফেলবে।কারণ ওপেন হাঁচি,কাশি দেয়া, থুথু ফেলা এ দেশের মানুষের জন্য অত্যন্ত কমন বিষয়। তাই ভয় নয়। দরকার সচেতনতা এবং প্রতিরোধ ব্যবস্থা। সচেতনতাই পারবে আমাদের রক্ষা করতে।
তাই যেখানে-সেখানে থুথু ফেলা,মুখ খুলে হাঁচি-কাশি দেয়ার অভ্যাসটা এখন থেকেই বন্ধ করে ফেলতে হবে,কখন মাস্ক ইউজ করতে হবে..সেটা জানতে হবে।দেখা যাবে করোনা ভাইরাস আসুক, বা না আসুক…আমাদের সচেতনতাই আমাদের সব ধরনের ফ্লু থেকে রক্ষা করবে।
#corona_virus_prevention
#সচেতনতায়ই_সুরক্ষা

Previous articleবগুড়ায় শিক্ষার্থীদের মাদকবিরোধী সাইকেল র‌্যালি
Next articleআশাহীন হওয়া দূর করতে করণীয়
ডা. রেজওয়ানা হাবীবা
মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here