সমাজে ওসিডি নিয়ে অনেক ভুল ধারণা প্রচলিত আছে যেগুলো দূর হওয়া প্রয়োজন।
মানসিক সমস্যার পরিসংখ্যান ম্যানুয়াল অনুসারে, ওসিডি বা অবসেসিভ কমপালসিভ ডিসঅর্ডার হল অযাচিত, মানসিক পীড়াদায়ক এবং পুনঃ পুনঃ কিছু নির্দিষ্ট কাজ করার অভ্যাস যা প্রায় ব্যক্তির অভ্যাসে পরিণত হয় এবং এ ধরণের অভ্যাস স্বভাবতই অন্য কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তা বা উদ্বিগ্নতা দূর করার প্রয়াসে ব্যক্তি করে থাকে। ঐ ব্যক্তির জন্য এই স্বভাবগত বা মানসিক আবেগপূর্ণ কাজ গুলি এক প্রকার বাধ্যবাধকতায় পরিণত হয়। হয়তো সবার ক্ষেত্রে এর মাত্রা একই রকম হয়না, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আক্রান্ত ব্যক্তি এই কাজ করে এবং সংজ্ঞা অনুসারে এইসব কাজ ও আচার আচরণ তার জন্য দৈনন্দিন জীবনে অত্যধিক মানসিক চাপ ও পীড়ার কারণ হয়ে ওঠে। তবে আশার কথা হল, এ ধরণের মানসিক সমস্যা দূর করার অনেক সহায়ক ও কার্যকরী চিকিৎসা রয়েছে।
অনেকেই মনে করেন ওসিডি যাদের থাকে তারা হয়তো নিজেকে খুব পরিপাটি করে রাখার প্রয়াস করছেন বা একটি আদর্শ জীবন যাপনের অভ্যাস গঠনের প্রয়াস করছেন। কিন্তু এটি একেবারেই ঠিক নয়।
আবার অনেকে মনে করেন তারা হয়তো রোগ জীবাণু অনেক ভয় পান যে কারণে তারা এমন বাতিক গ্রস্ত আচরণ করেন। এটিও সঠিক কোন তথ্য নয়।
সমাজে সাধারণ মানুষের মধ্যে ওসিডি নিয়ে এমন অনেক ভুল ধারণা প্রচলিত আছে যেগুলি এ ধরণের মানুষ সম্বন্ধে আমাদের মধ্যে এক প্রকার নেতিবাচক চিন্তা ভাবনার সৃষ্টি করছে। আর এটিই এই লেখার আলোচিত বিষয়বস্তু।
ওসিডির মতো এমন খুব কম মানসিক সমস্যা আছে যেগুলি নিয়ে সমাজে এত বেশী ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে। অনেকের কাছেই এটা এক ধরণের দৈনন্দিন ব্যবহার্য অপমান সূচক ভাষা বা টিপ্পনীর বিষয় হয়ে উঠেছে । কারও মাঝে কোন কিছু সুন্দর ভাবে গুছিয়ে করার অভ্যাসকে ছোট করে দেখা বা তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতে মানুষ বলে যে, ‘ওর তো এটা করার বাতিক আছে’ বা ‘ও বাতিকগ্রস্ত’। এ ধরণের কথা বা মানসিকতা প্রায় সবার জন্যই মানসিক পীড়ার কারণ হয়ে ওঠে। তাই সবার জন্য ওসিডি সম্পর্কে ভালোভাবে জানা প্রয়োজন যেন এটি নিয়ে কারও মাঝে মনঃকষ্ট তৈরি না হয়। নিচে ওসিডি নিয়ে আমাদের মাঝে প্রচলিত কিছু ভুল ধারণা তুলে ধরা হল যা এই মানসিক সমস্যাকে নেতিবাচক ভাবে দেখা থেকে আমাদের বিরত রাখবে।
১। ওসিডি মানে আপনি সব কিছু নিয়ে খুব খুঁতখুঁতে প্রকৃতির
ওসিডি আক্রান্ত একজন ব্যক্তি হয়তো এমন অনেক কাজ করা থেকেই নিজেকে বিরত রাখতে পারেনা যেগুলিকে সাধারণ ভাবে দেখলে এটা মনে হবে যে, সে হয়তো খুব খুঁতখুঁতে প্রকৃতির বা তার সব কিছু একদম সঠিকভাবেই করা চাই। মনে রাখতে হবে এটা তার মনের কিছু অস্বস্তিকর চিন্তা ভাবনা বা ধারণা থেকে পরিত্রাণের প্রচেষ্টা মাত্র যা অনেক সময়ই তার নিয়ন্ত্রণাধীন থাকেনা।
২। ওসিডি মানে আপনি সূচিবাই গ্রস্ত
অবশ্যই এমনটি সঠিক নয়। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে ওসিডি আক্রান্ত একজন ব্যক্তির মাঝে বারবার হাত ধোয়া, কাপড় বদলানো, বাসন পত্র পরিষ্কার করা ইত্যাদি কাজ বারবার করার বা অযাচিতভাবে করার প্রবণতা থাকতে পারে। কিন্তু এটি তার কোন পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বাতিক নয়। বরং এটি তার মনের কোন প্রকার ভয় বা দুশ্চিন্তার প্রতিক্রিয়া থেকে করা আচরণ মাত্র।
৩। ওসিডি এক ধরণের ব্যক্তিত্ব
ওসিডিকে আমরা প্রায়ই মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বা ব্যক্তিত্বে পরিণত করি যা একেবারেই ভুল। এটাও অন্যান্য মানসিক সমস্যার মতই একটি সমস্যা যা যথাযথ চিকিৎসায় ভালো হয়ে যায়। ওসিডিকে কারও জন্মগত বা বৈশিষ্ট্যগত স্বভাব ভেবে নেওয়ার কোন সুযোগ নেই।
৪। ওসিডি আক্রান্ত ব্যক্তির সব কিছু শুধু একটু শিথিল ভাবে নেওয়া প্রয়োজন
ওসিডি আক্রান্ত ব্যক্তির শুধু সব কিছু নিয়ে একটু কম ভাবলেই সে সুস্থ থাকবে বা ঠিক থাকবে, এমনটি ভেবে নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। ওসিডি আক্রান্ত কাউকে এমন উপদেশ প্রদান করা মানে হলো একজন হতাশা ও বিষণ্ণতায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসিখুশি থাকার উপদেশ দেওয়া। যেটি তাকে আরও অসহায় বোধ করায়।
৫। ওসিডি মানে আপনার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বেশ জটিল এক সমস্যা যার কোন সমাধান নেই
অত্যন্ত আশাজনক কথা হল, এটিও অন্যান্যগুলির মতোই একটি অতি ভুল ধারণা। অতি মাত্রার ওসিডি সমস্যাও সমাধানের প্রত্যাশা আমরা করতে পারি। এটির চিকিৎসায় বিভিন্ন ধরণের থেরাপির ব্যবস্থা রয়েছে যা একজন ওসিডি আক্রান্ত ব্যক্তিকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সহায়তা করবে।
লিঙ্কঃ https://www.psychologytoday.com/intl/blog/friendship-20/202109/5-myths-about-ocd
অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে