পাঠকঃ
আমি খুব সহজেই রেগে যাই। রেগে গেলে আমার হুশ থাকেনা। জিনিসপত্র ভাঙচুর করি। কখনো নিজের ওপর অত্যাচার করি। হাত, পা কেটে ফেলি। দুই একবার ঘুমের ওষুধ খেয়ে ফেলেছি। বেশী পরিমাণ খাইনি বলে, বাসার কেউ বুঝতে পারেনি। একটু পর যখন রাগ কমে যায় তখন সবই বুঝতে পারি। তখন আবার নিজেকে অপরাধী মনে হয়। ভাবি কেন এমন এসব করি। একদিন রাস্তায় রাগের জন্য খুব বিপদে পরেছিলাম। এটা কী কোনো ধরনের মানসিক রোগ? রোগ হলে আমি কী করতে পারি?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
পরামর্শক:
উত্তরটা খুব সহজেই দিয়ে দেয়া যেতে পারে; হ্যাঁ বা না।
হ্যাঁ বা না, উত্তরেই হয়তো আপনি আপনার প্রশ্নের জবাব পেয়ে যাবেন। কিন্তু তার জন্য কি করতে হবে, সে বিষয়ে দুই একটি কথা সাথে যোগ করা প্রয়োজন। আরো কিছু বিষয় জানাও দরকার ছিলো। এক, আপনার রাগের কী কোনো নির্দিষ্ট কারণ আছে? কারণ থাকলে রাগ হতে পারে, সেটাই স্বাভাবিক। কেউ আপনাকে প্রতিদিন কারণে-অকারণে বকা দিচ্ছে বা কোনো না কোনোভাবে ক্ষতি করছে, তাতে আপনার রাগ হচ্ছে- সেটা অসুখ হবে কেন? সেটাইতো স্বাভাবিক। কতটুকু কারণে কতটুকু রাগ হচ্ছে সেটা দেখার বিষয়। সামান্য কারণে রেগে যাচ্ছেন আবার তার ফলাফল কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিকর কিছু করে শেষ হচ্ছে, সেটা অবশ্যই গুরুত্ব সহকারেই বিবেচনা করতে হবে।
তবে মানসিক রোগের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে- ‘যা নিজের জন্য বা অন্যের জন্য ক্ষতিকর’ সেসবের সবই বিশেষ বিবেচনায় আনা উচিত। এখানেও কথা আছে, কারো এমন একটা ঘটনা একবার বা দুবার ঘটলো, তাহলেও নিশ্চয়ই সেটাকে রোগ বলবো না। বার বার ঘটছে, দিনের পর এমন ধরনের সমস্যা চলছেই তবেই সেটা গুরুত্ব পাবে। আপনার লেখা দেখে মনে হচ্ছে, রাগ হওয়া ও পরবর্তী বিষয়গুলো প্রায়ই ঘটে। কারণ থাকুক আর নাই থাকুক বিষয়টি তখন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।
এখন অন্য দিকে যদি একটু খেয়াল দেই, হ্যা রাগ বা হাত পা কাটাকাটির মতো ঘটনা কিছু মানসিক রোগের ক্ষেত্রেই থাকতে পারে। যেমন; পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার, সিজোফ্রেনিয়া, নেশা জাতীয় বিষয়ে জড়িয়ে পরা, এমন কি অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডারেও হতে পারে। আপনি নিজে যদি মনে করেন বিষয়টি আপনাকে যথেষ্ঠ ভোগাচ্ছে, তবে দেরি না করে বিষয়টি ভালো করে পরীক্ষা করিয়ে নিন। নিজেকে ক্ষতি করার এই প্রবণতাকে বলে ‘ডেলিবারেট সেল্ফ হার্ম’। এটি একটি গুরুতর সমস্যা। চিকিৎসার আওতায় যাওয়া উচিত। যেসব কারণে এই সমস্যা হয়ে থাকে তার সব কয়টিরই ভালো চিকিৎসা এখন দেশের অনেক জায়গায়ই আছে। আপনি নিকটস্ত মেডিকেল কলেজে যোগাযোগ করতে পারেন। কাছাকাছি কোনো একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের চেম্বারেও যোগাযোগ করতে পারেন।
সবশেষে বলছি, রাগ বা কাটাকাটি নিজে কোনো রোগ না হলেও অন্য কোন মানসিক রোগের অনুসঙ্গ বা সিম্পটম হিসেবে থাকে বা থাকতে পারে।
পরামর্শক
ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব