মাদক নিয়ন্ত্রণে শিক্ষাব্যবস্থায় বিনোদন থাকতে হবে- মামুনুর রশীদ

0
70
মাদক
মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। নিজেদের প্রয়োজনেই গোষ্ঠীবদ্ধ জীবন বেছে নিয়েছিল আদিম মানুষ। সেই থেকে আজ অবধি মানব সভ্যতার বিকাশে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে সমাজ। সমাজের প্রয়োজনীয়তা তাই বিতর্কের অতীত। কিন্তু বর্তমানের বাংলাদেশে যে মাদকাসক্তির একটা ভয়াবহ প্রকোপ চলমান, তাতে স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে সমাজ কী করছে? অথবা সমাজের ভূমিকা কী এখানে? সে ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত? বছর পনেরো আগেও বাংলাদেশে সমাজের কাছে সব মানুষের কিছুটা দায়বদ্ধতা ছিল, সমাজ কিছু কিছু ক্ষেত্রে জবাবদিহিতার ভূমিকা পালন করত। বড়োরা ছোটদের অন্যায়কে স্নেহপূর্ণ শাসনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা করতেন শুধুমাত্র একই সমাজে বাস করছেন এই দাবিতে। বড়োদের সামনে ধূমপান করা বেয়াদবি হিসেবে গণ্য হতো, মাতলামি করা তো অনেক দূরের কথা। কোনো অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত হতে যাচ্ছে দেখলে সমাজ জানান দিত তার পরিবারকে। তাঁরা তখন সতর্ক হয়ে যেতেন এবং পরিবারের সদস্যকে শোধরাতে বাধ্য করতেন। আগেও নেশা ছিল, অসামাজিক কার্যকলাপ ছিল। কিন্তু তা এত ব্যাপক আকারে ছিল না। এর পেছনে কি সমাজের কিছু ভূমিকাও ছিল? সে ভূমিকা এখন কেন নেই? এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা নিয়েই মনের খবর মাসিক ম্যাগাজিনের ২০১৯ সালের জুন মাসের সংখ্যায় মনোসামাজিক বিশ্লেষণে ‘মাদকাসক্তি : সামাজিক ও পারিবারিক প্রেক্ষাপট’ বিষয়ে মতামত প্রদান করেন অভিনেতা মামুনুর রশীদ। তার সেই বক্তব্য তুলে ধরা হল:

মাদক সব সমাজেই সব সময় ছিল, এখনো আছে। কিন্তু আগে নেশা ছিল না, এখন এটি নেশাতে রূপান্তরিত হয়েছে। আগে যেসব মাদকদ্রব্য পাওযা যেত যেমন-মদ, গাঁজা, ভাং, আফিম এগুলি সবই ছিল ভেষজ। কিন্তু এখন যেসব মাদক পাওয়া যাচ্ছে তার বেশিরভাগই আসলে কৃৃত্রিম রাসায়নিক পদার্থ। এসব শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক। শরীরের পাশাপাশি এটি মানুষের মানসিক কাঠামোকেও ভেঙে দিচ্ছে।
সমাজে যখন মানবিকতা থাকে না, হতাশা বাড়তে থাকে-তখনই সমাজে মাদক বাড়তে থাকে। অনেক দেশেই মদ, গাঁজা বৈধ। শুনতে অন্যরকম লাগতেও এটাই বাস্তবতা যে, আমাদের দেশে অবৈধ হওয়া সত্ত্বেও মদ কিন্তু সব জায়গাতেই পাওয়া যায়। শুধু মানুষের কিনতে একটু পয়সা বেশি লাগছে, আর সরকারও রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। প্রশ্ন আসতে পারে, মানুষ কেন করে নেশা? মানুষ প্রাণী হিসেবে খুব উন্নত এবং অদ্ভুত। মানুষ বাস্তব জগতকে ভুলে গিয়ে অলীক একটা ভাবনার মধ্যে ডুবে যাওয়ার জন্য নেশা করে। এখন আমাদের দেশে মাদক একটি বড়ো ধরনের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুলিশ দিয়ে ধরে, সাজা দিয়ে এটার সমাধান হবে না। এর জন্য সরকার, সমাজ, রাজনীতি সবকিছুর সমন্বিত একটা পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
আমাদের দেশে গণমাধ্যমে নাটক, সিনেমায় মাদককে যেভাবে উপস্থাপন করা হয় তাতে মানুষ মাদকের প্রতি আরো বেশি আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে। তাই গণমাধ্যমও মাদক নিয়ন্ত্রণে বা মাদক বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে কিছুটা ভূমিকা রাখতে পারে। যদিও এক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকাটাই প্রধান বলে আমি মনে করি। অভিভাবকদের টাকার পেছনে ছোটা বাদ দিয়ে সন্তানের পেছনে সময় বেশি দিতে হবে। সত্যি কথা বলতে আমাদের এখনকার বাবা-মায়েরা জানেই না সন্তানকে কীভাবে লালন-পালন করতে হবে। তারা সন্তানকে টাকা দিয়ে খুশি রাখতে চায়। যার ফলে সন্তানেরা আরো বেশি বিপথগামী হয়ে পড়ছে।
এছাড়া আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় বিনোদন থাকতে হবে। শিক্ষায় বিনোদন না থাকলে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা বিমুখ হয়ে পড়ে। শিশু সাহিত্যিক, কিশোর সাহিত্যিক আমাদের দেশে এখন নেই বললেই চলে। এখন যারা লিখছেন তাদের বই পড়ে কিংবা আমাদের পাঠ্যক্রমে যেসব বিষয় রয়েছে সেসব পড়ে বরং শিক্ষার্থীরা মেধাশূন্য হয়ে পড়ছে। মেধাশূন্য একটার পর একটা জেনারেশন আমরা তৈরি করেই যাচ্ছি, যার ফলে মানব তৈরি না করে আমরা দানব তৈরি করে যাচ্ছি। আর দানবেরা মাদকে আকৃষ্ট হবেই, এটা আমরা কোনোভাবেই রুখতে পারব না।
তাই মাদকের হাত থেকে বাঁচিয়ে একটি সুস্থ জাতি গঠনে সমাজ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সর্বত্রই সংস্কৃতির চর্চা চালু করতে হবে।

Previous articleযৌন নিপীড়ন আগ্রাসনের মাধ্যম
Next articleজাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য জরিপ ২০১৮-১৯ এর ফল প্রকাশ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here