রাগ প্রকাশের গ্রহণযোগ্য উপায়

0
231

রাগ : রাগ একধরনের স্বাভাবিক আবেগ। মানুষ মানে আবেগ থাকবেই। রাগ হলে আমরা অস্বস্তি প্রকাশ করি। আমরা যা অপছন্দ করি বা চাই না সেটা কেউ করে ফেললে মনের মধ্যে যে প্রতিক্রিয়া হয় তাই রাগ।

অনিয়ন্ত্রিত রাগের কুফল : করোনা পরবর্তী সময়ে অনিয়ন্ত্রিত রাগ অন্যতম একটি সমস্যা। সবাই রাগী মানুষকে অপছন্দ করেন।রাগের কারনে সম্পর্কগুলোতে মারাত্মক প্রভাব পড়ে, প্রিয়জন দূরে চলে যায়, সন্তান নির্যাতিত হয়, নিজের মানসিক চাপ বাড়ে, মাথাব্যাথা বাড়ে, জীবনযাত্রা এলোমেলো হয়ে পড়ে। অনেকদিন অনিয়ন্ত্রিত রাগ থাকলে হার্টের রোগ এমনকি ব্রেন স্ট্রোকের সম্ভবনাও বাড়ে।

রাগের প্রকাশ : রাগ থাকলেও সবাই একই প্রতিক্রিয়া করেন না। তাই রাগ কিভাবে প্রকাশ করতে পারলেন সেটাই মূল বিষয়। মানুষ তিনভাবে রাগ প্রকাশ করি যথা-(১) এগ্রেসিভ, (২) প্যাসিভ এবং (৩)এসারটিভ।

১) Aggressive : সাধারণত যারা এগ্রেসিভলি রাগ প্রকাশ করেন (এসব ব্যক্তিরা অন্যদের কথা শুনেন না, অর্ডার করেন, সবাইকে হেয় করেন, আক্রমণাত্বক আচরন করেন এবং সমালোচনা করেন), অন্যরা তাদের পছন্দ করেন না।

(২) Passive : আবার কেউ কেউ আছেন যারা রেগে গেলেও কিছুই বলতে পারেন না যাদেরকে সাইকোলজির ভাষায় প্যাসিভ বলে (এসব ব্যক্তিগন কাউকে অনুরোধ করতে পারেন না, না বলতে পারেন না, অন্যের না বলা সহ্য করতে পারেন না এবং প্রশংসা করতে পারেন না) এসব ব্যক্তিও না বলতে বলতে একসময় খুব বেশি আক্রনাত্মক হয়ে ওঠেন, তাই এই ধরনের রাগ প্রকাশও খারাপ।

(৩) Assertive: সবচেয়ে ভালো হলো এসারেটিভভাবে রাগ প্রকাশ করা। এসারটিভ(এসব ব্যক্তিগণ অন্যকে অনুরোধ করতে পারেন, প্রয়োজনে না বলতে পারেন, অন্যের না বলা সহ্য করতে পারেন এবং অন্যের প্রশংসা করতে পারেন) ব্যক্তিকে সবাই পছন্দ করেন। এসব ব্যক্তি অন্যদেরকে সন্মান দিয়ে নিজের মনের কষ্ট প্রকাশ করা। তাই এসারটিভ হওয়ার ট্রেনিং নিলে রাগ ম্যানেজ করে সঠিকভাবে প্রকাশ করা যায়।

রাগ সঠিকভাবে প্রকাশ করতে আপনি নিচের কৌশল ব্যবহার করতে পারেন :
-যখনই রাগ উঠবে তখন সে স্থান থেকে সরে যাবেন,
– রাগের আচরণ (মারামারি, ভাংচুর, চিল্লানো) করবেন না, এগুলো করলে আপাতত ভালো লাগলেও পরবর্তীতে রাগ আরও বাড়বে।
– আলাদা রুমে গিয়ে রাগের আচরণ না করার জন্য লাভ ও ক্ষতি বিশ্লেষণ করুন।
– নিজের আক্রমণাত্মক আচরণ নিয়ন্ত্রণে প্রোগ্রেসিভ মাসকুলার রিলাক্সজেশন প্রাকটিস করতে পারেন।
– রাগের আক্রমণাত্মক স্টেজ চলে গেলে ১/২ ঘন্টা পর নিজের চিন্তাভাবনা এনালাইসিস করুন।
– যার উপরে রাগ ১/২ দিন পরে সুন্দর সময়ে তাঁকে সন্মান দিয়ে, তাঁর কয়েকটি প্রশংসা করে নিজের মনের কষ্ট তাকে বলবেন। রাগ এভাবে প্রকাশ করতে পারলে আর রাগ থাকে না।
-আপনার রেগে যাবার উৎসগুলো চিহ্নিত করুন। খেয়াল করুন কখন বেশি রেগে যান, সেই সময় আগে থেকে রিলাক্স থাকার চেষ্টা করুন।
-আপনার অতীত কোন কষ্ট থেকে রাগ আসলেও সেটিও ম্যানেজ করতে শিখুন।
– নিয়মিত মাইন্ডফুলনেন্স প্রাকটিস করতে পারেন। এটা মন কে স্থির হতে সহায়তা করে, ইন্টারনেট দেখে বা সাইকোলজিষ্টের সহায়তা নিয়ে মাইনফুলনেন্স শিখতে পারেন।
-রাগের জন্য দায়ী নেগেটিভ চিন্তাগুলোকে তালিকা করে ম্যানেজ করতে পারলে রাগ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
-নিজে নিজে এর পরেও রাগ নিয়ন্ত্রণে ব্যার্থ হলে মনোবৈজ্ঞানিক সহায়তা নিন। আজকাল অনলাইনে সহায়তা পাওয়া যায়।

লেখক : জিয়ানুর কবির
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট

/এসএস/মনেরখবর/

Previous articleআমার স্বামী ঘুমের মধ্যে কথা বলে এবং মানুষকে গালাগালি করে
Next article‘‘সম্পর্ক ভাঙায় হতাশ হয়ে পড়েছি’’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here